রোগীর সেবাশুশ্রূষা
রোগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযায় সাথে চলা, জানাযায় নামায পড়া এবং তার দাফনের সময় উপস্থিত থাকা ও দাফনের পরে তার কবরের পাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করা
রোগীকে দেখতে যাওয়া
৮৯৫. হযরত বারা ইবনে আযেব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) রোগী দেখতে যাবার, জানাযার পেছনে চলার, হাঁচিদানকারীর ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলার, কসম পূর্ণ করার, অত্যাচারিতকে সাহায্য করার, আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেয়ার এবং সালামের ব্যাপক প্রচলন করার আমাদের আদেশ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৮৯৬. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের পাঁচটি অধিকার রয়েছেঃ সালামের উত্তর দেয়া, রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযার সাথে চলা, দাওয়াত কবুল করা ও হাঁচিদাতার উত্তর দেয়া। (বুখারী ও মুসলিম)
৮৯৭. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবেনঃ হে বনী আদম! আমি রোগাক্রান্ত হয়েছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে যাওনি! বান্দাহ বলবেঃ হে আমার প্রভু! আমি কেমন করে আপনার রোগের খবর নিব। আপনি যে বিশ্ব-জাহানের প্রভু! তিনি বলবেনঃ তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দাহ রোগাক্রান্ত ছিল? তুমি কি তাকে দেখতে যাওনি? তুমি কি জাননি যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তাহলে তুমি আমাকে অবশ্যই তার নিকট পেতে? হে বনী আদম! আমি তোমার নিকট খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি! বান্দাহ বলবেঃ হে আমার প্রভু! আমি কেমন করে আপনাকে খাওয়াব আপনি যে, সমগ্র বিশ্ব-জাহানের মালিক ও প্রতিপালক? মহান আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি জাননি আমার অমুক বান্দাহ তোমার নিকট খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে খাওয়াওনি? তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে খাবার খাওয়াতে তাহলে আমার নিকট তা পেতে। হে বনী আদম! আমি তোমার নিকট পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। বান্দাহ বলবেঃ হে আমার প্রভু! আমি কেমন করে আপনাকে পানি পান করাব, আপনি যে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের প্রভু? মহান আল্লাহ বলবেনঃ আমার অমুক বান্দাহ তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পানি পান করাওনি! তুমি যদি তখন তাকে পানি পান করাতে তাহলে আজ আমার নিকট তুমি তা পেতে। (মুসলিম)
৮৯৮. হযরত আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “রোগীকে দেখতে যাও, অভুক্তকে আহার করাও এবং বন্দীদের মুক্ত কর।” (বুখারী)
৮৯৯. হযরত সাওবান (রা) নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, মুসলমান যখন তার রুগ্ন মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতের খুরফা কি? জবাব দিলেনঃ তার ফলমূল আহরণ করা। (মুসলিম)
৯০০. হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে একথা বলতে শুনেছিঃ এমন কোন মুসলমান নেই, যে সকাল বেলা কোন মুসলমান রোগীকে দেখতে যায় এবং সন্ধ্যে পর্যন্ত সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য দু’আ না করে, আর সন্ধ্যে বেলা কোন রোগীকে দেখতে যায় এবং সকাল পর্যন্ত তার জন্য সত্তর হাজার ফিরিশতা দু’আ না করে। তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান নির্ধারিত করে দেয়া হয়। (তিরমিযী)
৯০১. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একটি ইয়াহূদী ছেলে নবী করীম (সা)-এর খিদমত করতো। সে অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী করীম (সা) তাকে দেখতে গেলেন। তিনি তার মাথার কাছে বসে তাকে বললেনঃ তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। সে তার বাপের দিকে তাকালো। তার বাপ তার নিকটই ছিল। সে (তার বাপ) বললোঃ আবুল কাসেম (সা)-এর আনুগত্য কর। অতঃপর সে ছেলেটি ইসলাম গ্রহণ করলো। নবী করীম (সা) এ কথা বলতে বলতে সেখান থেকে বের হলেনঃ “সমস্ত প্রশংসা সে সত্তার যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।” (বুখারী)