জানাযার নামাযে কি পড়া হবে?
ইমাম নববী (রহ) বলেন, জানাযার নামাযে চারটি তাকবীর দিতে হয়। প্রথম তাকবীরের পর ‘তাআওউফ’ (আউযুবিল্লাহ) পড়তে হয়, তারপর পড়তে হয় সূরা ফাতিহা। তারপর দ্বিতীয় তাকবীর দিবে। দ্বিতীয় তাকবীরের পর নবী করীম (সা) –এর ওপর দুরূদ পড়বে। তাতে বলবেঃ আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন’। আর উত্তম হল পূর্ণ দরূদ পড়া। আর সাধারণ লোকদের মত ‘ইন্নাল্লাহা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসাল্লুনা আলান নাবী, ইয়া আউয়ুহাললাযীনা আমানু ছাল্লু আল্লাইহি ওয়া সাল্লিমু তাসলীমা’ বলে ক্ষান্ত হবে না। কারণ কেবলমাএ এ আয়াতের উপর নির্ভর করলে নামায হবে না। তৃতীয় তাকবীর বলে মৃত এবং সমস্ত মুসলমানদের জন্য দুআ করবে। এ দুআ আমরা নিন্মের হাদীসসমূহে বর্ণনা করব ইনশাআল্লাহ। তারপর চতুর্থ তাকবীর বলেও দুআ করবে। উত্তম হল এরূপ বলাঃ অর্থঃ “হে আল্লাহ! এর প্রতিদান থেকে আমাদের বঞ্চিত করো না এবং তারপর আমাদের ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করো না আর আমাদের ও তাকে মাগফিরাত দান কর।” চতুর্থ তকবীরে দুআ দীর্ঘ করা পছন্দনীয়। যদিও অধিকাংশ লোকের অভ্যাস তার বিপরীত। এব্যাপারে ইবনে আবি আওয়াকার হাদীস রয়েছে। যা আমরা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। তৃতীয় তাকবীরের পরে যে দুআগুলো পড়তে হয তার কয়েকটি এখানে উদ্ধত করছিঃ-
৯৩৬. হযরত আবু আবদুর রহমান আউফ ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) একটি জানাযার নামায পড়েন। আমি তার দু’আটি মুখস্থ করে ফেলেছি। তিনি দু’আ করেনঃ “আল্লাহুম্মাগফির লাহু ওয়ারহামহু ওয়া আফিহি ওয়া’ফু আনহু, ওয়া আকরিম নুযুলাহু ওয়া ওয়াসসি’ মুদখালাহু, ওয়াগসিলহু বিল মা-য়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদে ওয়া নাককিহি মিনাল খাতাইয়া কামা নাককাইতাস সাওবাল আবইয়াদ্বা মিনাদ দানাসি, ওয়া আবদিলহু দারান খাইরান মিন দারিহি, ওয়া আহলা, খাইরাম মিন আহলিহি, ওয়া যাওজান খাইরাম মিন যাওজিহি ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আ’ইযহু মিন আযাবিল কাবরি ওয়া মিন আযাবিন্নারি- (হে আল্লাহ!) তাকে মাফ করে দিন, তাকে রহম করুন, তাকে নিরাপত্তা দান করুন, তাকে ক্ষমা করে দিন, বেহেশতে তাকে মর্যাদাপূর্ণ স্থান দান করুন, তার কবরকে প্রশস্ত করুন, তার গুনাহকে ধুয়ে দিন, পানি, বরফ ও তুষারের শুভ্রতা দিয়ে, তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দিন, যেমন আপনি পরিষ্কার করেন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে, তার ঘর অপেক্ষা ভাল ঘর তাকে দান করুন, আর তার পরিজনদের অপেক্ষা উত্তম পরিজন তাকে দান করুন, তার স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী তাকে দান করুন, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব ও জাহান্নামের আযাব থেকে আশ্রয় দান করুন। (মুসলিম)
বর্ণনাকারী আবু আব্দুর রহমান বলেন, তাঁর দু’আয় আমার আকাঙ্খা হলো, হায়! আমি যদি এ মৃত ব্যক্তি হতাম।
৯৩৭. হযরত আবু হুরাইরা, আবু কাতাদা ও আবু ইবরাহীম আশহালী তাঁর পিতা (যিনি সাহাবী ছিলেন) (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁরা সকলে রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি এক ব্যক্তির জানাযার নামায পড়লেন, তারপর বললেনঃ “আল্লাহুম্মাগফির লিহাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসানা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবানা, আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহী আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ঈমান আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়া লা তাফতিন্না বা’দাহু” – (হে আল্লাহ!) আমাদের মধ্যে থেকে যারা বেঁচে আছে, যারা মরে গেছে, যারা ছোট, যারা বড়, যারা পুরুষ, যারা নারী, যারা উপস্থিত ও যারা অনুপস্থিত তাদের সবার গুনাহ মাফ করে দিন। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্য থেকে যাদের আপনি জীবিত রেখেছেন তাদের ইসলামের ওপর জীবিত রাখুন। আর আমাদের মধ্যে থেকে আপনি যাদের মৃত্যু দান করেছেন তাদের ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের এর প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করবেন না এবং এর মৃত্যুর পর আমাদের ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করবেন না।” (তথ্যসূত্রঃ তিরমিযী)
ইমাম তিরমিযী আবু হুরাইরা ও আশহালী (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। আর আবু দাঊদ এটি বর্ণনা করেছেন আবু হুরাইরা ও আবু কাতাদা (রা) থেকে। হাকিম বলেন, আবু হুরাইরা বর্ণিত হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তের নিরীখে সহীহ। তিরমিযী বলেছেন, বুখারী বলেন, এ হাদীসটি বর্ণনার দিক থেকে আশহালীর বর্ণনা সর্বাপেক্ষা সহীহ। ইমাম বুখারী বলেন, এই পরিচ্ছেদে সর্বাপেক্ষা নির্ভুল হচ্ছে আওফ ইবনে মালেক (রা) বর্ণিত হাদীস।
৯৩৮. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা কোন মৃতের জানাযার নামায পড়লে তার জন্যে খাঁটি অন্তরে দু’আ কর। (আবু দাঊদ)
৯৩৯. হযরত আবু হুরাইরা (রা) নবী করীম (সা) থেকে জানাযার নামায সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, (তিনি জানাযার নামাযে পড়তেনঃ) “আল্লাহুম্মা আনতা রাববুহা, ওয়া আনতা খালকতাহা, ওয়া আনতা হাদাইতাহা লিল ইসলাম, ওয়া আনতা কাবাদ্বতা রূহাহা, ওয়া আনতা আ’লামু বিসিররিহা ওয়া আলানিয়াতিহা, জি’নাকা শুফা’আ আলাহু ফাগফির লাহু” -হে আল্লাহ! আপনিই তার প্রভু, আপনিই তাকে সৃষ্টি করেছেন, আপনিই তাকে ইসলামের দিকে হিদায়াত করেছেন, আপনিই তার রুহু কবয করেছেন এবং তার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সম্পর্কে আপনিই অধিক জ্ঞাত। আমরা তার জন্য সুপারিশকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাযির হয়েছি। অতএব আপনি তাকে ক্ষমা করুন। (আবু দাঊদ)
৯৪০. হযরত ওয়াসিলা ইবনুল আসক্বা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদেরসহ একজন মুসলমানের জানাযার নামায পড়লেন। অতঃপর আমি তাঁকে বলতে শুনলাম। “আল্লাহুম্মা ইন্না ফুলান ইবনে ফুলানিন ফী যিম্মাতিকা ওয়া হাবলে জাওয়ারিকা ফাকিহি ফিতনাতাল কাবরি ওয়া আযাবান নার, ওয়া আনতা আহলুল ওয়াফায়ে ওয়াল হামদ। আল্লাহুম্মা ফাগফির লাহু ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহীম।” -হে আল্লাহ! অমুকের পুত্র অমুক আপনার যিম্মা ও নিরাপত্তার বাঁধনে আবদ্ধ, তাকে কবরের ফিতনা ও জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আপনিই বিশ্বাস ও প্রশংসার পাত্র। হে আল্লাহ! একে মাফ করে দিন এবং এর ওপর রহম করুন। নিঃসন্দেহে আপনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (আবু দাঊদ)
৯৪১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু আউফা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নিজের মেয়ের জানাযার নামাযে চার তাকবীর বলেন। অতঃপর চতুর্থ তাকবীরের পর দু’ তাকবীরের মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ দাঁড়িয়ে তিনি নিজের মেয়ের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করলেন। তারপর বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) এমনটিই করতেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছেঃ তিনি চার তাকবীর বলার পর এত সময় দাঁড়িয়ে থাকেন যাতে আমি ধারণা করলাম তিনি বুঝি পঞ্চম তাকবীর বলবেন। তারপর তিনি ডানে ও বামে সালাম ফেরান। নামায শেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি করলেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে যেমন করতে দেখেছি তার ওপর একটুও বেশি করিনি। অথবা (তিনি বলেছেন) আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে এভাবেই করতে দেখেছি। তথ্যসূত্রঃ (হাকিম ) তিনি বলেন, হাদীসটি সহীহ।