চিৎকার ও বিলাপ ছাড়া মৃতের জন্য কান্নাকাটি করার অনুমতি
মৃতের জন্য বিলাপ করে কান্না হারাম। এ ব্যাপারে ইনশাআল্লাহ কিতাবুন নাহয়ি (নিষেধাজ্ঞা অধ্যায়ে) একটি পরিচ্ছেদ সংযোজিত হবে। কান্নাকাটি করার ব্যাপারে বহু হাদীসে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। মৃতের পরিবারবর্গের কান্নাকাতির কারণে তার আযাব দেয়া হয়। কিন্তু এ হাদীসগুলো ব্যাখ্যা সাপেক্ষে এবং এর অর্থ হচ্ছে, কেউ কান্নাকাটি ওসিয়াত করে গেলে তাকে আযাব দেয়া হয়। চীৎকার করে কান্নাকাটি করা অথবা বিলাপ করে কান্নাকাটি করাই (হাদীসে) নিষিদ্ধ হয়েছে। আর চীৎকার না করে এবং ইনিয়ে বিনিয়ে শোকগাথা না গেয়ে কান্নাকাটি করার স্বপক্ষে বহু হাদীস পাওয়া যায়। তার কয়েকটি হাদীস এখানে উল্লেখ করা হলঃ
৯২৬. হযরত ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) সা’দ ইবনে উবাদা (রা)-এর অসুস্থাবস্থায় তাকে দেখতে গেলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবদুর রহমান ইবনে আওফ, সা’দ ইবনে আবু ওয়াককাস ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) প্রমুখ সাহাবীগণ। (সা’দ ইবন উবাদার নাজুক অবস্থা দেখে) রাসূলুল্লাহ (সা) কাঁদছেন তখন তারাও কাঁদতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ তোমরা কি শুনছো না? চোখের অশ্রুপাত ও হৃদয়ের শোক প্রকাশের কারণে আল্লাহ আযাব দেন না বরং তিনি এটার জন্য আযাব দেন বা রহম করেন। এ কথা বলে তিনি নিজের জিহ্বার দিকে ইঙ্গিত করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৯২৭. হযরত উসামা ইবন যাইদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট তাঁর মেয়ের শিশু পুত্রকে আনা হল। সে সময় সে মৃত্যুপথযাত্রী। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। সা’দ (রা) তাকে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটা কি? তিনি জবাব দিলেনঃ এটা হচ্ছে রহমত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আর অবশ্যই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে থেকে যারা রহম করে তাদের ওপর তিনি রহম করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৯২৮. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর পুত্র ইবরাহীম (রা)-এর নিকট গেলেন। তিনি তখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা) তাঁকে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনিও কাঁদছেন? জবাব দিলেনঃ হে আউফের পুত্র, এটা হচ্ছে রহমত। এরপর তাঁর চোখ থেকে আবার অশ্রু ঝরতে লাগলো। তারপর তিনি বলেন, চোখ অশ্রু ঝরায়, হৃদয় শোকার্ত হয়, তবে আমরা আমাদের মুখ থেকে এমন কথা বলব যাতে আমাদের রব সন্তুষ্ট হন। আর হে ইবরাহীম! তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত! (বুখারী)