ক্ষমা করা এবং অজ্ঞদের এড়িয়ে চলার বর্ণনা
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
“ক্ষমাকে ধারণ কর, সৎকাজের আদেশ দাও এবং জাহেলদের এড়িয়ে চল।” (সূরা আরাফঃ ১৯৯)
তিনি আরো বলেছেনঃ
“সুন্দর ভাবে ক্ষমা কর।” (সূরা হিজরঃ ৮৫)
তিনি আরো বলেছেনঃ
“আর তারা যেন ক্ষমা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুক।” (সূরা নূরঃ ২২)
তিনি আরো বলেছেনঃ
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করবে এবং ক্ষমা করবে, এটি হবে সাহসিকতাপূর্ণ উচ্চমানের কাজ।” (সূরা শুরাঃ ৪৩)
৬৪৩. আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী (সা) কে বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিনের চাইতেও বেশি কঠিন কোন দিন কি আপনার উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, আকাবার দিন আমি তোমার জাতির কাছ থেকে এমন আচরণের সম্মুখীন হয়েছি, যা উহুদের দিনের চাইতেও অধিকতর কঠিন ছিল, যখন আমি (তাওহীদের বাণী পেশ করার উদ্দেশ্যে) ইবনে আবদ ইয়ালীল ইবনে আবদ কুলালের নিকট নিজেকে পেশ করলাম। আমি যা চেয়েছিলাম, সে তার কোন জবাব দিল না। আমি তাই সেখান থেকে চিন্তাক্লিষ্ট মন নিয়ে চললাম, এমনকি কারনুস সা’আলিব নামক স্থানে পৌঁছার আগ পর্যন্ত যেন আমার হুঁশই ছিল না। এখানে আমি মাথা তুলতেই দেখলাম, এক খণ্ড মেঘ আমার উপর ছায়া বিস্তার করে আছে। তাতে আমি জিবরীল আলাইহিস সালামকে দেখতে পেলাম। জিবরীল আমাকে ডেকে বলেন, মহান আল্লাহ আপনার কাউমের কথা ও আপনাকে তারা যে জবাব দিয়েছে তা শুনেছেন। আল্লাহ আপনার নিকট পাহাড়ের ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে আপনি তাকে আপনার ইচ্ছামত নির্দেশ দিতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে ডেকে বলল, হে মুহাম্মদ! আল্লাহ আপনার সাথে আপনার কওমের কথাবার্তা শুনতে পেয়েছেন। আমি হচ্ছি পাহাড়ের ফেরেশতা। আমাকে আমার রব আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। আপনি নিজ ইচ্ছামত আমাকে যে কোন কাজের হুকুম করতে পারেন। আপনি যদি চান, তা হলে আমি উভয় পাহাড়কে তাদেরসহ একত্রে মিলিয়ে দেই এবং কাফেরদের সমূলে ধ্বংস করে দিই। নবী (সা) বলেনঃ (আমি তাদের ধ্বংস কামনা করি না) আমি বরং আশা পোষণ করি যে, আল্লাহ এদের ঔরসে এমন সব লোক পয়দা করবেন যারা এক আল্লাহর দাসত্বকে কবুল করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। (বুখারী, মুসলিম)
৬৪৪. আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ব্যতীত কখনো কাউকে মারেননি, না কোন স্ত্রীলোককে না কোন খাদেমকে। তাঁকে কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তিনি কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। অবশ্য আল্লাহ নির্ধারিত কোন হারামকে লংঘন করা হলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিশোধ গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম)
৬৪৫. আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে হাঁটছিলাম। তাঁর গায়ে ছিল মোটা বা চেপ্টা পাড়বিশিষ্ট একটি নাজরানী চাদর। এক বেদুঈন তাঁর নিকট এসে তাঁর চাদরটি ধরে ভীষণ সজোরে টান দিল। আমি লক্ষ্য করলাম, নবী (সা)-এর ঘাড়ের পার্শ্বদেশে সজোরে চাদর টানার দরুন চাদরের পাড়ের দাগ পড়ে গেছে। বেদুঈন বলল, হে মুহাম্মদ! আপনার নিকট আল্লাহর দেয়া যে মাল-সম্পদ রয়েছে, তা থেকে আমাকে কিছু দেয়ার ব্যবস্থা করুন। তিনি লোকটির প্রতি তাকিয়ে হেসে দিলেন, তারপর তাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দিলেন। (বুখারী, মুসলিম)
৬৪৬. ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দিকে তাকিয়ে আছি, তিনি আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাতু ওয়াসসালামের মধ্যকার একজন সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন। তাঁকে তাঁর জাতি আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল। তিনি নিজের চেহারা থেকে রক্ত মুছছিলেন আর বলছিলেনঃ হে আল্লাহ! আমার কওমকে ক্ষমা করুন। কারণ এরা তো অবুঝ। (বুখারী, মুসলিম)
৬৪৭. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ কুস্তিতে প্রতিপক্ষ কে হারিয়ে জয়লাভ করাতে বীরত্ব নেই, বরং ক্রোধের মুহূর্তে নিজকে সংবরণ করতে পারাই প্রকৃত বীরত্বের পরিচায়ক। (বুখারী, মুসলিম)