[Note: এ অধ্যায়ের কুরআনের আয়াত গুলো পরে আপডেট করা হবে]
৪৪৬. ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) আমাকে বললেনঃ আমার সামনে কুরআন তেলাওয়াত কর। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার সামনে পড়বো, অথচ আপনার উপর তা নাযিল হয়েছে? তিনি বললেনঃ আমি অপরের তিলাওয়াত শুনতে ভালোবাসি। সুতরাং আমি তাঁর সামনে সূরা আন্ নিসা পড়লাম। আমি যখন এই আয়াতে পৌঁছলামঃ “তখন কি অবস্থা হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মাত থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করবো? “(সূরা নিসাঃ৪১) তিনি বললেনঃ এখন যথেষ্ট হয়েছে। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তাঁর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। (বুখারী, মুসলিম)
৪৪৭. আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এমন এক (নসিহতপূর্ণ) ভাষণ দিলেন, যে ধরনের ভাষণ আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বললেনঃ আমি যা জানি তোমরাও যদি তা জানতে তবে খুব কমই হাসতে এবং অধিক কাঁদতে। তিনি (রাবী) বলেন, এ কথা শুনে রাসূল (সা)-এর সাহাবীগণ কাপড়ে তাদের মুখ ঢাকলেন এবং ডুকরে কাঁদতে লাগলেন। (বুখারী, মুসলিম)
৪৪৮. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত দুধ স্তনে ফিরে না আসে।৬০ আর আল্লাহর পথে জিহাদে ধুলো মলিন (পদদ্বয়) এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না (অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে ধুলি মলিন হয়েছে, সে জান্নাতে যাবে)। (বুখারী, মুসলিম)
*৬০. অর্থাৎ দুধ স্তনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাটাও সম্পূর্ণ অসম্ভব।
৪৪৯. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ সাত ধরনের লোককে আল্লাহ সেদিন তাঁর সুশীতল ছায়াতলে স্থান দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়াই থাকবে না। তারা হলঃ (১) ন্যায়বিচারক শাসক বা নেতা, (২) মহান আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল যুবক, (৩) মসজিদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি, (৪) যে দু’জন লোক একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালোবাসে এবং একতাবদ্ধ থাকে, আবার এজন্যই পুনরায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, (৫) এরূপ ব্যক্তি, যাকে কোনো অভিজাত পরিবারের সুন্দরী নারী খারাপ কাজে আহ্বান করেছে, কিন্তু সে বলে দিয়েছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৬) যে ব্যক্তি এতো গোপন ভাবে দান্তখয়রাত করে যে, তার ডান হাত কি দান করলো, তার বাঁ হাতও তা জানতে পারলো না এবং (৭) এরূপ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর যিকির করে এবং তার দু’চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। (বুখারী, মুসলিম)
৪৫০. আবদুল্লাহ ইবনুশ শিখখীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে এসে দেখি তিনি নামায পড়ছেন এবং আল্লাহর ভয়ে কাঁদার দরুন তাঁর পেট থেকে হাঁড়ির মতো আওয়াজ বেরুচ্ছে।
হাদীসটি সহীহ। ইমাম আবু দাঊদ এটি বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম তিরমিযী সহীহ সনদসহ এটি তাঁর শামাইল গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
৪৫১. আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) উবাই ইবনে কাব (রা) কে বললেনঃ মহামহিম আল্লাহ আমাকে তোমার সামনে সূরা (বায়্যিনাহ) পড়তে আদেশ করেছেন। তিনি (উবাই) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি কি আমার নাম উল্লেখ করে বলেছেন? তিনি (নবী) বললেনঃ হ্যাঁ। উবাই (রা) আবেগে কেঁদে ফেললেন।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর এক বর্ণনায় আছেঃ তৎক্ষণাৎ উবাই (রা) কাঁদতে লাগলেন।
৪৫২.আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এর ইন্তিকালের পর আবু বকর (রা) উমার (রা) কে বললেন, চলো আমরা উম্মু আয়মানকে দেখে আসি, যেমন রাসূল (সা) তাঁকে দেখতে যেতেন। অতঃপর তাঁরা যখন তাঁর কাছে পৌঁছলেন, তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁরা তাঁকে বললেন, আপনি কাঁদছেন কেন? আপনি কি জানেন না যে, মহান আল্লাহর কাছে রাসূলুল্লাহ (সা) -এর জন্য কত কল্যাণ আছে? তিনি বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি না যে, আল্লাহর কাছে রাসূলুল্লাহ (সা) -এর কি অফুরন্ত কল্যাণ রয়েছে তা আমি জানি না, বরং আমি কাঁদছি এজন্য যে, আসমান থেকে ওহী আসা যে বন্ধ হয়ে গেলো! তাঁর এ কথায় তাঁদের উভয়ের অন্তর প্রভাবিত হলো এবং তাঁর সাথে তাঁরাও কাঁদতে লাগলেন। (মুসলিম)
৪৫৩. ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) -এর রোগ যখন তীব্র আকার ধারণ করলো, তখন তাঁকে নামাযের কথা বলা হলে তিনি বললেনঃ আবু বকরকে আদেশ করো, সে যেন লোকদের নামায পড়ায়। আয়িশা (রা) বললেন আবু বকর তো অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের মানুষ। যখন তিনি কুরআন তেলাওয়াত করবেন, তখন ক্রন্দন তাঁর উপর প্রভাব বিস্তার করবে। তিনি আবার বললেনঃ তাঁকে আদেশ করো সে যেন নামায পড়ায়। আয়িশা (রা) থেকে অপর এক বর্ণনায় আছেঃ তিনি (আয়িশা) বলেন, আমি বললাম, আবু বকর যখনি আপনার জায়গায় দাঁড়াবেন কান্নার কারণে মুসল্লীদের কুরআন শুনাতে পারবেন না। (বুখারী, মুসলিম)
৪৫৪. ইবরাহীম ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা) থেকে বর্ণিত। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা)-এর সামনে খাবার পেশ করা হলো, তিনি ছিলেন রোযাদার। তিনি বলেনঃ মুসআব ইবনে উমাইর (রা) শহীদ হয়েছেন এবং তিনি ছিলেন আমার চাইতে উত্তম লোক। তাঁকে কাফন দেয়ার মতো কোন কাপড়ের ব্যবস্থাই ছিল না একটি চাদর ছাড়া। তা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকা হলে তাঁর পা দু’টি অনাবৃত হয়ে যেতো এবং পা ঢাকা হলে তাঁর মাথা অনাবৃত হয়ে যেতো। অতঃপর আমাদের পর্যাপ্ত পার্থিব প্রাচুর্য দেয়া হলো। ফলে আমরা শংকিত হয়ে পড়লাম যে, আমাদের সৎ কাজের বিনিময় দুনিয়াতেই দেয়া হচ্ছে কিনা। অতঃপর তিনি কেঁদে দিলেন, এমনকি খাবার ত্যাগ করলেন। (বুখারী)
৪৫৫. আবু উমামা সুদাই ইবনে আজলান আল-বাহিলী (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেনঃ মহান আল্লাহর কাছে দু’টি বিন্দু (ফোঁটা) এবং দু’টি নিদর্শনের চাইতে প্রিয় বস্তু আর কিছু নেই। তার একটি হলো আল্লাহর ভয়ে নির্গত অশ্রুবিন্দু এবং অপরটি হলো আল্লাহর পথে (জিহাদে) প্রবাহিত রক্তবিন্দু। আর দু’টি নিদর্শন বা চিহ্ন হলো আল্লাহর পথে (জিহাদে আহত হওয়ার) চিহ্ন এবং আল্লাহর ফরযসমূহের মধ্য থেকে কোন ফরয আদায় করার চিহ্ন।
ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান। এই অনুচ্ছেদে আরও বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে বিদআত থেকে দূরে থাকা সম্পর্কিত অনুচ্ছেদে ইতিপূর্বে একাধিক স্থানে তা বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা)-র হাদীসঃ
৪৫৬. ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের সামনে এমন এক উপদেশপূর্ণ ভাষণ দেন যাতে আমাদের অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।