পিতামাতার নাফরমানী এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম

বাপ-মাকে কষ্ট দেয়াতাদের কথা অমান্য করা এবং ত্মীয়তার 

সম্পর্ক ছিন্ন করানিষেধ

মহান আল্লাহ বলেনঃ

‘এখন তোমাদের থেকে এ ছাড়া আর কিছু আশা করা যায় কি যে, তোমরা যদি উল্টো মুখে ফিরে যাও, তবে দুনিয়ায় আবার তোমরা অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং পরস্পরে একজনে অপরজনের গলা কাটবে? এরা তো এমন লোক যাদের ওপর আল্লাহ লানত বর্ষণ করেছেন এবং তাদেরকে অন্ধ ও বধির করে দিয়েছেন। (সূরা মুহাম্মদঃ ২২-২৩)

মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

‘যেসব লোক আল্লাহর সাথে মজবুত ওয়াদা করার পর তা ভঙ্গ করে, যারা এমন সব সম্পর্ক ছিন্ন করে যা রক্ষা করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন আর যারা দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের ওপর লানত। তাদের জন্য আখিরাতে থাকবে খুবই খারাপ জায়গা।’ (সূরা আর রা’দঃ ২৫)

মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

তোমার প্রভু চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন, তোমরা কেবল তাঁরই বন্দেগী করবে এবং বাপ-মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তোমাদের কাছে যদি তাদের কোন একজন কিংবা উভয়েই বুড়ো অবস্থায় থাকে, তবে তুমি তাদেরকে ‘উহ’ পর্যন্ত বলবে না।’ তাদেরকে তিরস্কার করবে না। বরং তাদের সাথে অতীব মর্যাদার সাথে কথা বলবে। বিনয় ও নম্রতার সাথে তাদের সামনে নত হয়ে থাকবে। আর এই দোয়া করতে থাকবেঃ ‘হে আল্লাহ! তাদের প্রতি দয়া (রহম) করো যেমন করে তারা ছোট বেলায় আমাকে স্নেহ-মমতা দিয়ে লালন করেছেন।  (সূরা বনী ঈসরাইলঃ ২৩-২৪)

 

   ৩৩৬. হযরত আবু বাকরাহ নুফাঈ ইবনে হারিস (রা) বলেন, একদা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদেররকে) বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহটির কথা জানাব? এ কথা তিনি তিনবার বললেন। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি অবশ্যই আমাদেরকে বলুন। তিনি বললেনঃ তা হলো, আল্লাহর সাথে শরীক করা, বাপ-মাকে কষ্ট দেয়া। এ কথাগুলো বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। এরপর সোজা হয়ে বসে আবার বললেনঃ সাবধান! মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়াও (সবচেয়ে বড় গুনাহ)।   তিনি কথাগুলো বার বার বলে যাচ্ছিলেন। এমনকি আমরা মনে মনে বলতে লাগলাম আহা! তিনি যদি থেমে যেতেন। (বুখারী ও মুসলিম)


   ৩৩৭. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কবিরা গুনাহ হলো- আল্লাহর সাথে (কাউকে) শরীক করা, বাপ-মায়ের অবাধ্য হওয়া, (অকারণ) কোন মানুষকে হত্যা করা এবং মিথ্যা হলফ করা। (বুখারী)


৩৩৮. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বড় গুনাহসমূহের মধ্যে একটি হলো (নিজের) বাপ-মাকে গাল দেয়া। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কোন লোক কি তার বাপ-মাকে গাল দিতে পারে? তিনি বললেনঃ হাঁ’।   লোকেরা একজন অন্যজনের বাবাকে গাল দেয় আর সে তার জবাবে তার বাবাকে গাল দেয়। একজন অন্যজনের মাকে গাল দেয় আর (এর জবাবে) দ্বিতীয়জন প্রথম জনের মাকে গাল দেয়।  (বুখারী ও মুসলিম)

অপর এক বর্ণনায় আছেঃ সবচাইতে বড় গুনাহর মধ্যে একটি হলো, কোন ব্যক্তির তার মা-বাপকে লানত করা। জিজ্ঞেস করা  হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন ব্যক্তি কি তার মা-বাপকে লানত করে? (তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ) এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির বাপকে লানত আর সে আবার তার বাপকে লানত করে। এ ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির মাকে লানত করে জবাবে এ ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির মাকে লানত করে।


৩৩৯. হযরত আবু মুহাম্মদ যুবাইর ইবনে মুতয়াম বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আবু সুফিয়ান এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ এর অর্থ হলো, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।  (বুখারী ও মুসলিম)


৩৪০. মুগীরা ইবনে শু’বাহ বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা বাপ-মাকে কষ্ট দেয়া, কার্পণ্য করা, অন্যায়ভাবে অন্যের মাল দাবী করা এবং কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া তোমাদের প্রতি হারাম করে দিয়েছেন। এছাড়া তিনি অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, বেশি পরিমাণে চাওয়া এবং সম্পদ ধ্বংস করা তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন।  (বুখারী ও মুসলিম)


 

Was this article helpful?

Related Articles