মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং আশা আকাংখা কম করা
[Note: এ অধ্যায়ের কুরআনের আয়াত গুলো পরে আপডেট করা হবে]
৫৭৪. ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমার কাঁধ ধরে বললেনঃ দুনিয়াতে এভাবে কাটাও যেন তুমি একজন মুসাফির বা পথিক। ইবনে উমার (রা) বলতেনঃ তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সকাল বেলার অপেক্ষা (আশা) করো না এবং সকালে উপনীত হয়ে সন্ধ্যা বেলার অপেক্ষা করো না। সুস্বাস্থ্যের দিনগুলোতে রোগব্যাধির (দিনগুলোর) জন্য প্রস্তুতি নাও এবং জীবদ্দশায় মৃত্যুও জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো। (বুখারী)
৫৭৫. ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে মুসলিম ব্যক্তির নিকট ওসিয়াত করার মত কিছু থাকে। তা লিখে না রেখে দু’রাতও কাটানো উচিত নয়।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তবে মুল পাঠ বুখারীর। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছেঃ তিন রাতও কাটানো উচিত নয়। ইবনে উমার (রা) বলেন, যেদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি, তখন থেকে আমার এমন একটি রাতও অতিবাহিত হয়নি, যখন আমার সাথে আমার (লিখিত) ওসিয়াতনামা ছিল না।
৫৭৬. আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) কয়েকটি রেখা টানলেন, তারপর বলেনঃ এটা হচ্ছে মানুষ এবং এটা তার মৃত্যু। মানুষ এভাবেই থাকা অবস্থায় নিকটবর্তী রেখা (মৃত্যু) এসে উপস্থিত হয়। (বুখারী)
৫৭৭. ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) একটি বর্গক্ষেত্র আঁকলেন, তার মাঝ বরাবর কয়েকটি সরল রেখা টানলেন যা বর্গক্ষেত্র ভেদ করে বাইরে চলে গেছে। তিনি মধ্যবর্তী এ রেখাটির সাথে যুক্ত আরো কতগুলো ছোট ছোট সরল রেখা (আড়াআড়ি ভাবে) টানলেন, তারপর বলেনঃ এটা হল মানুষ এবং এটা তার মৃত্যু যা তাকে বেষ্টন করে আছে। (বর্গক্ষেত্র ভেদ করে) বাইরে বেরিয়ে যাওয়া রেখাটুকু হচ্ছে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। ছোট ছোট রেখাগুলো হল তার জীবনের বিপদাপদ। একটি বিপদ থেকে ছুটতে পারলে অপর বিপদ এসে তাকে খামচাতে থাকে। আবার দ্বিতীয়টি থেকে রেহাই পেলে তৃতীয়টি তাকে নিষ্পেষিত করে। (বুখারী)
৫৭৮. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা) বললেনঃ সাতটি জিনিস প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই তোমরা নেক কাজের দিকে সত্ত্বর অগ্রসর হওঃ (১) তোমরা কি অপেক্ষা করছো এমন দরিদ্র্যের যা অমনোযোগী (অক্ষম) করে দেয়, (২) অথবা এমন প্রাচুর্যের যা ধর্মোদ্রোহী বানায়, (৩) অথবা এরূপ রোগ-ব্যাধির যা (দৈহিক সামর্থ্যকে) তছনছ করে দেয়, (৪) অথবা এমন বৃদ্ধাবস্থার যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে লোপ করে দেয়, (৫) অথবা এমন মৃত্যুর যা অলক্ষ্যেই উপস্থিত হয়, (৬) কিংবা দাজ্জালের, যা অপেক্ষামাণ নিকৃষ্ট অনুপস্থিত বস্তু, (৭) অথবা কিয়ামাতের যা অত্যন্ত বিভীষিকাময় ও তিক্ত।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এটি হাসান হাদীস।
৫৭৯. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমরা (দুনিয়ার) স্বাদ-আহলাদ নিঃশেষকারী মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।
৫৮০. উবাই ইবনে কা’ব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিয়ম ছিলঃঃ রাতের এক-তৃতীয়াংশ পার হয়ে গেলে তিনি (ঘুম থেকে) উঠে বলতেনঃ হে মানুষ! আল্লাহ কে স্মরণ কর। প্রথম ফুৎকার তো এসেই গেছে। তার পরপরই আসছে দ্বিতীয় ফুৎকার। তার সাথেই আসছে মৃত্যু। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার উপর খুব বেশি বেশি দরূদ পড়ে থাকি। আপনি আমাকে বলুন, আপনার প্রতি দরূদের জন্য আমি কতটুকু সময় নির্দিষ্ট করবো। তিনি বলেনঃ তোমার যতটুকু ইচ্ছা। আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বলেনঃ তুমি যতটুকু সমীচীন মনে কর। তবে তুমি যদি এর চাইতেও বৃদ্ধি কর, তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, তাহলে দুই ভাগের এক ভাগ? তিনি বলেনঃ সেটা তোমার ইচ্ছা। তবে এর চাইতেও বেশি করলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, তবে দুই-তৃতীয়াংশ? তিনি বলেনঃ তুমি যেটা ভালো মনে কর। তবে এর চাইতেও বেশি করতে পারলে তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, আচ্ছা, দরূদ পড়ার জন্য পুরো সময়কেই যদি আমি নির্দিষ্ট করে নিই, তাহলে কিরূপ হয়? তিনি বলেনঃ এরূপ করতে পারলে, এ দরূদ তোমার যাবতীয় দুশ্চিন্তাকে দূরীভূত করার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহরাশিকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে।*
ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান।
* মৃত্যু অতি ভয়ানক বিষয়। মৃত্যুর পরবর্তী অধ্যায়গুলো আরও বেশি বিভীষিকাময়। মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা ও স্মৃতিপটে জাগরুক রাখার দ্বারা এ নশ্বর জগতের প্রতি মানুষের মহ ধীরে ধীরে কমে যায়। দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসাই যাবতীয় গুনাহের ভিত্তি ও উৎসস্থল। পার্থিব লোভ-লালসা থেকে আত্মরক্ষা করে আখিরাতের চিন্তায় নিজেকে সদা নিমগ্ন রাখা প্রতিটি মানুষের একান্ত কর্তব্য। এর দ্বারাই গুনাহ থেকে মুক্তি সম্ভব এবং পরকালীন নাজাত ও কল্যাণ লাভের আশা করা যায়। এজন্য কুরান-হাদীসে এর প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।