[Note: এ অধ্যায়ের কুরআনের আয়াত গুলো পরে আপডেট করা হবে]
৩৯৬. ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সর্বসমর্থিত সত্যবাদী রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেককে তার মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্র আকারে জমা রাখা হয়। অতঃপর তা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়ে এই পরিমাণ সময় থাকে এবং পরে তা মাংসপিণ্ড আকারে অনুরূপ সময় জমা রাখা হয়। অতঃপর একজন ফেরেশতা পাঠানো হয়। তিনি তাতে আত্মা ফুঁকে দেন এবং চারটি বিষয় লেখার আদেশ করা হয়। তা হলোঃ তার রিযিক, তার হায়াত, তার আমল ও সে দুর্ভাগা হবে অথবা সৌভাগ্যবান হবে। সেই সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই! তোমাদের কেউ জান্নাতবাসীদের আমল করবে, এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে। ফলে সে জাহান্নামীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে। আর তোমাদের কেউ জাহান্নামীদের কাজ করবে, এমনকি তার মাঝে ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে। ফলে সে জান্নাতীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন।
৩৯৭. ইবনে মাসঊদ (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার লাগাম হবে, আবার প্রতিটি লাগামের জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে এবং এ লাগাম ধরে টানবে।
ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।
৩৯৮. নু’মান ইবনে বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা) বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে লঘু শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির শাস্তি হবে এই যে, তার দুই পায়ের উপর আগুনের দু’টি অংগার রাখা হবে এবং তাতে তার মস্তষ্ক সিদ্ধ হতে থাকবে। সে মনে করবে, তার চাইতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ সে-ই জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে হালকা শাস্তিপ্রাপ্ত।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।
৩৯৯. সামুরা ইবনে জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেনঃ জাহান্নামের আগুনে জাহান্নামীদের কারো গোড়ালী পর্যন্ত, কারো হাটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো গলা পর্যন্ত পুড়তে থাকবে (প্রত্যেকে নিজ নিজ গুনাহ অনুযায়ী শাস্তিতে পতিত হবে)।
ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন।
৪০০. ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেনঃ মানুষ যেদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে, সেদিন তাদের কেউ কেউ তার নিজের ঘামে কানের অধ্যাংশ পর্যন্ত ডুবে যাবে।
আর-রাশহু অর্থ ঘাম।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
৪০১. আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের সামনে ভাষণ দান করেন যার অনুরূপ আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেনঃ আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে পারতে, তবে নিশ্চয়ই খুব কম হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীগণ কাপড়ে মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলেন এবং ডুকরে কাঁদতে শুরু করেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অপর এক বর্ণনায় আছেঃ একদা রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবীদের কাছ থেকে কোন ব্যাপারে কিছু শুনতে পেয়ে একটি ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেনঃ আমার সামনে জান্নাত ও দোযখ পেশ করা হয়েছে। সেদিনের মতো ভালো ও মন্দ আর কখনো দেখিনি। আমি এ ব্যাপারে যা জানি, তোমরাও যদি তা জানতে পারতে তবে অবশ্যই হাসতে খুব কম এবং কাঁদতে খুব বেশি।
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীদের উপর এ দিনের মতো কঠিন দিন আর আসেনি। তাই তারা তাদের মাথা ঢেকে ফেলেন এবং ডুকরে কাঁদতে থাকেন।
আল-খানিন অর্থ নাকের বাঁশির শব্দসহ ফুঁপিয়ে কান্নাকাটি করা।
৪০২. মিকদাদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টজীবের এতো কাছাকাছি নিয়ে আসা হবে যে, তা তাদের থেকে এক মাইলের ব্যবধানে অবন করবে। এ হাদীসের রাবী সুলাইম ইবনে আমের (র) মিকদাদ (রা) থেকে বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি জানিনা, মাইল বলতে এটা কি যমীনের দূরত্ব বুঝানোর মাইল বলা হয়েছে নাকি চোখে সুরমা দেয়ার শলাকা বুঝানো হয়েছে? (রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ) অতঃপর মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী ঘামের ভেতর ডুবতে থাকবে। তাদের কেউ গোড়ালি পর্যন্ত, কেউ হাঁটু পর্যন্ত, কেউ কোমর পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে। আর তাদের মধ্যে কাউকে ঘামের লাগাম পরানো হবে। এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ (সা) নিজের হাত দিয়ে তাঁর মুখের দিকে ইশারা করেন (অর্থাৎ কারো মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে)।
ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।
৪০৩. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষের এত ঘাম বেরুবে যে, তা যমীনে সত্তর গজ উঁচু হয়ে বইতে থাকবে এবং তাদেরকে ঘামের লাগাম পরানো হবে, এমনকি তা তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
৪০৪. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি কোন বস্তুর গড়িয়ে পড়ার শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কিসের শব্দ তা কি তোমরা জানো? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ এটা একটি পাথর যা সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। অদ্যাবদি তা জাহান্নামেই গড়াচ্ছিল এবং এখন গিয়ে তার গর্তে পতিত হয়েছে। তোমরা এর পতনের শব্দই শুনতে পেলে।
ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।
৪০৫. আদী ইবনে হাতেম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সাথে তার রব কথা বলবেন। তার ও আল্লাহর মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না। সে তার ডানে তাকিয়ে তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না এবং বাঁয়ে তাকিয়েও তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না, আর সামনে তাকিয়ে তার চোখের সামনে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। তাই তোমরা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করো। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
৪০৬. আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আমি যা দেখতে পাচ্ছি, তোমরা তা দেখতে পাচ্ছো না। আকাশ উচ্চস্বরে শব্দ করছে, আর এর উচ্চস্বরে শব্দ করার অধিকার আছে। কেননা তাতে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালি নেই, বরং ফেরেশতারা তাতে আল্লাহর জন্য সিজদায় তাদের কপাল ঠেকিয়ে রেখেছেন। আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি, যদি তোমরা তা জানতে পারতে, তাহলে তোমরা অবশ্যই হাসতে কম কাঁদতে বেশি; আর তোমরা স্ত্রীদের সাথে বিছানায় শুয়ে আমোদ-আহলাদও করতে না এবং মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য বনে-জঙ্গলে বেরিয়ে যেতে।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এ হাদীসটি হাসান।
৪০৭. আবু বারযা নাদলা ইবনে উবায়েদ আসলামী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন (হাশরের ময়দানে) বান্দাহ তার স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না তাকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ তার জীবনকাল কিরূপে অতিবাহিত করেছে, তার জ্ঞান কি কাজে লাগিয়েছে, তার সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে এবং কোন্ খাতে খরচ করেছে এবং তার শরীর কিভাবে পুরোনো করেছে।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
৪০৮. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “সেদিন তা (যমীন) তার সমস্ত বিষয় বর্ণনা করবে “(সূরা যিলযালঃ ৪)। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জানো সেদিন যমীন কি বর্ণনা করবে? উপস্থিত সবাই বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ যমীন যে বিষয় বর্ণনা করবে তা এই যেঃ তার উপরে প্রত্যেক নর-নারী যে যে করেছে সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, তুমি এই এই দিন এই এই কাজ করেছো। এগুলো হলো তার বর্ণনা।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।
৪০৯. আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আমি কিভাবে নিশ্চিন্ত বসে থাকতে পারি, অথচ শিঙ্গাধারী ফেরেশতা (ইসরাফীল) মুখে শিঙ্গা লাগিয়ে কান খুলে অপেক্ষা করছেন কখন তাকে ফুঁ দেয়ার আদেশ করা হবে, আর তিনি তাতে ফুঁ দিবেন? মনে হলো যেন এ কথায় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীগণ সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা বলো, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি খুবই উত্তম অভিভাবক।
ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান।
৪১০. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (শেষ রাতে শত্রুর লুটতরাজকে) ভয় করে, সে সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা হয় এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা হয়, সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। জেনে রাখো, আল্লাহর সামগ্রী খুবই মূল্যবান। জেনে রাখো, আল্লাহর সামগ্রী হলো জান্নাত।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান হাদীস।
৪১১. হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন লোকদের খালি পায়ে, উলঙ্গ শরীরে এবং খাতনাহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সমস্ত নারী-পুরুষ একসাথে হলে তো তারা একে অপরকে দেখবে? তিনি বলেনঃ হে আয়িশা! মানুষ যা কল্পনা করে সেদিনের পরিস্থিতি তার চাইতেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, মানুষ একে অপরের দিকে তাকানোর চাইতেও সেদিনের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।