[Note: এ অধ্যায়ের কুরআনের আয়াত গুলো পরে আপডেট করা হবে]
৩৯০. ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ আমি ততক্ষণ পর্যন্ত (আল্লাহর পক্ষ থেকে) লোকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে আদিষ্ট, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল, আর তারা নামায কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে। তারা এগুলো করলে তাদের রক্ত ও সম্পদ আমার কাছ থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের হক (অপরাধের শাস্তি) তাদের উপর থাকবে। আর তাদের প্রকৃত ফায়সালা আল্লাহ তা’য়ালার উপর সমর্পিত।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।
৩৯১.আবু আবদুল্লাহ তারিক ইবনে উশায়েম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা) বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রাসূল, এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যেসব বস্তুর পূজা করা হয়, সে সেগুলোকে অস্বীকার করে, তার জান ও মাল নিরাপদ হয়ে গেল; আর তার হিসাব মহান আল্লাহর উপর সমর্পিত।
ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন।
৩৯২.আবু মা’বাদ মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহকে (সা) জিজ্ঞেস করলামঃ আপনি কি বলেন, যদি কোন কাফিরের সাথে আমার মুকাবিলা হয় এবং পারস্পরিক যুদ্ধে সে তরবারির আঘাতে আমার দুই হাতের একটি কেটে ফেলে, অতঃপর সে আমার পাল্টা আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য একটি গাছের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে বলে, আমি আল্লাহর জন্য ইসলাম গ্রহণ করলাম। ইয়া রাসূলুল্লাহ! তার ঐ কথা বলার পর আমি কি তাকে হত্যা করব? তিনি বলেনঃ তাকে হত্যা করো না। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে তো আমার দুই হাতের একটি কেটেছে, অতঃপর একথা বলেছে। তিনি বলেনঃ তাকে হত্যা করো না। কেননা তুমি যদি তাকে হত্যা করো, তাহলে তুমি তাকে হত্যা করার পূর্বে যে মর্যাদায় ছিলে, সে সেই মর্যাদায় পৌঁছে যাবে; আর যে কলেমা সে পাঠ করেছে, সেই কলেমা পাঠের পূর্বে সে যে স্তরে ছিল, তুমি (তাকে হত্যা করলে) সেই স্তরে নেমে যাবে।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। (আরবী) কথার অর্থ হলোঃ ইসলাম গ্রহন করার কারণে সে ব্যক্তির রক্তপাত হারাম হয়ে গেছে। আর (আরবী) কথার অর্থ হলোঃ তুমি তাকে হত্যা করার দরুন তার ওয়ারিসদের পক্ষ থেকে কিসাসস্বরূপ তোমার রক্ত প্রবাহিত করা তাদের জন্য বৈধ হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি তার মতো কাফির হয়ে যাবে না। আল্লাহই ভালো জানেন।
৩৯৩. উসামা ইবনে যায়িদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদেরকে জুহাইনা গোত্রের খেজুরের বাগানে প্রেরণ করেন। আমরা প্রত্যুষে তাদের পানির ঝরণা ঘেরাও করি। অতঃপর আমি ও জনৈক আনসারী তাদের এক ব্যক্তিকে ধরে ফেলি। যখন আমরা তার উপর চড়াও হই অমনি সে বলে উঠলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। (এ কথা শুনেই) আনসারী থেমে যায়; আর আমি আমার বর্শার আঘাতে তাকে হত্যা করি। অতঃপর আমরা মদিনায় ফিরে এলে সেই হত্যার ঘটনা নবী (সা) এর কানে পৌঁছল। তিনি আমাকে বললেনঃ হে উসামা সে লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ বলার পরও তাকে হত্যা করলে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তা তো ছিল জান বাঁচানোর জন্য। তিনি বললেনঃ সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার পরও তুমি তাকে হত্যা করলে? অতঃপর তিনি বারবার একথা বলতে লাগলেন যে, আমি যদি ইতোপূর্বে মুসলিম না হতাম (তাহলে এই গুনাহ আমার ভাগ্যে লেখা হতো না)।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।
অপর এক বর্ণনায় আছেঃ অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলল, আর তুমি তাকে হত্যা করলে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে তো তরবারির ভয়ে এ কথা বলেছে। তিনি বলেনঃ তুমি তার অন্তর ফেড়ে দেখলে না কেন, তাহলে জানতে পারতে সে তা তার অন্তর থেকে বলেছে কি না! তিনি বরাবর এ কথা বলতে লাগলেন, এমনকি আমি আক্ষেপ করতে লাগলাম, আমি যদি আজই মুসলিম হতাম।
৩৯৪. জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) মুশরিকদের একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি মুসলিম বাহিনী প্রেরণ করলেন। তাদের মুকাবিলা হল। মুশরিকদের এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত সাহসী। সে মুসলমানদের যাকে পেতো তাকেই হত্যা করত। মুসলমানদের মধ্যে এক ব্যক্তি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম যে, তিনি তো উসামা ইবনে যায়েদ। (সুযোগ পেয়ে) তিনি যখন তরবারি উঠান, সে বলে উঠলো, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ “। এতদসত্ত্বেও তিনি তাকে হত্যা করে ফেললেন। তারপর বিজয়ের সুসংবাদ বাহক রাসূলুল্লাহ (সা) -এর কাছে পৌঁছলো। তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে সব অবহিত করলো, এমনকি সেই লোকটি কিরূপ করেছিল, তাও বললো। তিনি তাকে (উসামাকে) ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে হত্যা করলে কেন? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে তো মুসলিমদের মাঝে সন্ত্রাস ও ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং অমুক অমুককে হত্যাও করেছে। তিনি কয়েক জনের নাম উল্লেখ করলেন। আমি (সুযোগ পেয়ে) যখন আক্রমণ করি সে তরবারি দেখে বলে উঠে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ “। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তুমি তাকে হত্যা করলে? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কি উত্তর দিবে? উসামা (রা) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কি উত্তর দিবে? তিনি এর থেকে আর কোন কিছু বাড়িয়ে বলেননি (শুধু বলতে থাকলেন) যে, কিয়ামতের দিন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কি জবাব দেবে?
ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি রিওয়ায়েত করেছেন।
৩৯৫. আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসঊদ (রা) বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলাল্লাহ (সা) -এর যুগে মানুষকে ওহীর মাধ্যমে যাচাই করা হতো। আর এখন তো ওহী বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমরা এখন থেকে তোমাদের যাচাই করবো তোমাদের বাহ্যিক কাজ-কর্মের ভিত্তিতে। যে ব্যক্তি আমাদের সামনে ভালো কাজের প্রকাশ ঘটাবে, আমরা তা বিশ্বাস করবো এবং তাকে নিকটবর্তী বলে গ্রহণ করে নেবো, আর তার আভ্যন্তরীণ ব্যাপার দেখার আমাদের দরকার নেই। তার আভ্যন্তরীণ বিষয়ে আল্লাহ হিসাব নেবেন। আর যে ব্যক্তি আমাদের সামনে মন্দ কাজের প্রকাশ ঘটাবে অর্থ্যাৎ বাহ্যত মন্দ কাজ করবে, তবে সে যদিও বলে যে, তার আভ্যন্তরীণ অব খুবই ভালো, তবুও আমরা তার কথা মানবো না এবং তার কথা বিশ্বাসও করবো না।
ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।