শাসকদের প্রজাদের প্রতি বন্ধুত্বসুলভ আচরণ, শুভাকাঙ্ক্ষিতা, সদুপদেশ ও স্নেহ-মমতার নির্দেশ এবং তাদের সাথে প্রতারণা, কঠোরতা, তাদের অধিকার হরণ ও তাদের প্রয়োজন থেকে নিরুদ্বেগ থাকার বর্ণনা

প্রজাদের প্রতি শাসকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

[Note: এ অধ্যায়ের কুরআনের আয়াত গুলো পরে আপডেট করা হবে]

৬৫৩. ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের প্রত্যেকেই রক্ষণাবেক্ষণকারী (বা দায়িত্বশীল) এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুরুষ তার পরিবার ও সংসারের জন্য দায়িত্বশীল এবং তাকে তার রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। স্ত্রীলোক তার স্বামীর ঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারিনী এবং তাকে সে সম্পর্কে জওয়াবদিহি করতে হবে। খাদেম তার মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তাকে তার সে দায়িত্বপালন সম্পর্কে জওয়াবদিহি করতে হবে। অতএব তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জওয়াবদিহি করতে হবে। (বুখারী, মুসলিম)


৬৫৪. আবু ইয়ালা মা’কিল ইবনে ইয়াসার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাঁর কোন বান্দাকে প্রজাসাধারণের তত্ত্বাবধায়ক বানাবার পর সে যদি তাদের সাথে প্রতারণা করে থাকে, তবে সে যেদিনই মরুক, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।

ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অন্য এক রিওয়ায়াতে আছেঃ সেই ব্যক্তি যদি তার প্রজাদের কল্যাণ সাধনে আত্মনিয়োগ না করে, তাহলে সে জান্নাতের সুবাসটুকুও পাবে না। মুসলিমের এক বর্ণনায় আছেঃ যে শাসক মুসলিমদের যাবতীয় বিষয়ের তত্ত্বাধায়ক নিযুক্ত হয়; তারপর তাদের উপকারের জন্য কোনরূপ চেষ্টা যত্ন করে না এবং তাদের কল্যাণ সাধনে এগিয়ে আসে না, সে মুসলমানদের সাথে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।


৬৫৫. আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে আমার এ ঘরেই বলতে শুনেছিঃ হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের কোন কাজের তত্ত্বাবধায়ক হয়, অতঃপর সে তাদের প্রতি কঠোরতা করলে তুমিও তার প্রতি কঠোরতা করো। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের কোন কাজের তত্ত্বাবধায়ক হয়, অতঃপর সে তাদের প্রতি নরম ও কোমল আচরণ করলে তুমিও তার প্রতি কোমল আচরণ করো।   (মুসলিম)


৬৫৬. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলের রাজনৈতিক কার্যক্রমের পরিচালক ছিলেন তাদের নবীগণ। এক নবীর ওফাতের পর পরবর্তী নবী তাঁর স্থান পূরণ করতেন। কিন্তু আমার পরে আর কোন নবী নেই। অচিরেই আমার পরে বেশ কিছু সংখ্যক খলিফা হবে। সাহাবীগণ বলেনঃ তখনকার জন্য আমাদের প্রতি আপনার কি নির্দেশ? তিনি বলেনঃ তোমরা পর্যায়ক্রমে একজনের পর আরেকজনের বাইয়াত পূর্ণ করবে, অতঃপর তাদের প্রাপ্য তাদের প্রদান করবে এবং তোমাদের প্রাপ্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে। কারণ আল্লাহ তাদের উপর জনসাধারণের তত্ত্বাবধানের যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি নিজেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।    (বুখারী, মুসলিম)


৬৫৭. আয়েয ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের নিকট উপস্থিত হয়ে বলেন, হে বৎস! আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ নিকৃষ্ট শাসক সেই ব্যক্তি যে জনগণের প্রতি কঠোর ও অত্যাচারী। কাজেই তুমি সতর্ক থাকবে যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত না হও। (বুখারী, মুসলিম)


৬৫৮. আবু মারইয়াম আল-আযদী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি মু’আবিয়া (রা)-কে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ যাকে আল্লাহ মুসলিমদের শাসক নিযুক্ত করেন এবং সে তাদের প্রয়োজন, চাহিদা ও দারিদ্রাবস্থা দূর করার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না, আল্লাহও কিয়ামাতের দিন তার প্রয়োজন, চহিদা ও দারিদ্র্য পুরণের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবেন না। অতঃপর মু’আবিয়া (রা) জনগণের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্য একজনকে নিয়োগ করেন। (আবু দাঊদ ও তিরমিযী)


 

Was this article helpful?

Related Articles