সাফা এবং মারওয়ায় সাঈ [দৌড়াদৌড়ি] করা হাজ্জের রুকন্- এটা পালন না করলে হাজ্জ বিশুদ্ধ না হওয়ার বর্ণনা।

৮০২. উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বাল্যকালে একদা নাবী [সাঃআঃ]-এর সহধর্মিণী আয়িশাহ্ [রাদি.]-কে বললাম, আল্লাহর বাণীঃ “সাফা ও মারওয়াহ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবা গৃহের হাজ্জ কিংবা উমরাহ সম্পন্ন করে এ দুটির মধ্যে সায়ী করিতে চায়, তার কোন গুনাহ্ নেই”- [আল-বাকারাহঃ ১৫৮]। তাই সাফা-মারওয়াহ্‌র সায়ী না করা আমি কারো পক্ষে অপরাধ মনে করি না। আয়িশাহ্ [রাদি.] বলেন, বিষয়টি এমন নয়। কেননা, তুমি যেমন বলছ, ব্যাপারটি তেমন হলে আয়াতটি অবশ্যই এমন হতঃ “সাফা ও মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবা গৃহের হাজ্জ কিংবা উমরাহ সম্পন্ন করে এ দুটির মধ্যে সায়ী করে, তার কোন পাপ নেই”- [আল-বাকারাদি. ১৫৮]। অর্থাৎ এ দুটির মাঝে তাওয়াফ করলে কোন পাপ নেই। এ আয়াত তো আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। কেননা তারা মানাতের জন্য ইহ্‌রাম বাঁধত। আর মানাত কুদায়দের সামনে ছিল। তাই আনসাররা সাফা-মারওয়া তাওয়াফ করিতে দ্বিধাবোধ করত। এরপর ইসলামের আবির্ভাবের পর তারা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবা গৃহের হাজ্জ কিংবা উমরাহ করিতে চায় তার জন্য এ দুটির মধ্যে সায়ী করায় কোন গুনাহ্ নেই

[বোখারী পর্ব ২৬/১০ হাঃ ১৭৯০, মুসলিম পর্ব ১৫/৪৩ হাঃ ১২৭৭] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৮০৩. উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ্ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, মহান আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? “সাফা ও মারওয়াহ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। কাজেই যে কেউ কাবা ঘরে হাজ্জ বা উমরাহ সম্পন্ন করে, এ দুটির মাঝে যাতায়াত করলে তার কোন দোষ নেই”- [আল-বাকারাহঃ ১৫৮]। [আমার ধারণা যে] সাফা-মারওয়াহর মাঝে কেউ সাঈ না করলে তার কোন দোষ নেই। তখন তিনি {আয়েশা [রাদি.]} বলিলেন, ওহে বোনপো! তুমি যা বললে, তা ঠিক নয়। কেননা, যা তুমি তাফসীর করলে, যদি আয়াতের মর্ম তা-ই হতো, তাহলে আয়াতের শব্দ বিন্যাস এভাবে হতো [আরবী]- “দুটোর মাঝে সাঈ না করায় কোন দোষ নেই।” কিন্তু আয়াতটি আনসারদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মুশাল্লাল নামক স্থানে স্থাপিত মানাত নামের মূর্তির পূজা করত, তার নামেই তারা ইহরাম বাঁধত। সে মূর্তির নামে যারা ইহরাম বাঁধত তারা সাফা-মারওয়াহ সাঈ করাকে দোষাবহ মনে করত। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁরা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর কাছে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল ! পূর্বে আমরা সাফা ও মারওয়া সাঈ করাকে দোষাবহ মনে করতাম [এখন কী করবো?] এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা [আরবী] অবতীর্ণ করেন। আয়িশাহ্ [রাদি.] বলেন, [সাফা ও মারওয়ার মাঝে] উভয় পাহাড়ের মাঝে সাঈ করা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]র বিধান দিয়েছেন। কাজেই কারো পক্ষে এ দুয়ের সাঈ পরিত্যাগ করা ঠিক নয়। [রাবী বলেন] এ বছর আবু বাকার ইবনি আবদুর রহমান [রাদি.]-কে ঘটনাটি জানালাম। তখন তিনি বলিলেন, আমি তো এ কথা শুনিনি, তবে আয়িশাহ্ [রাদি.] ব্যতীত বহু আলিমকে উল্লেখ করিতে শুনিয়াছি যে, মানাতের নামে যারা ইহরাম বাঁধত তারা সকলেই সাফা ও মারওয়া সায়ী করত, যখন আল্লাহ কুরআনে বাইতুল্লাহ তাওয়াফের কথা উল্লেখ করিলেন, কিন্তু সাফা ও মারওয়ার আলোচনা তাতে হলো না, তখন সাহাবাগণ বলিতে লাগলেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমরা সাফা ও মারওয়া সাঈ করতাম, এখন দেখি আল্লাহ কেবল বাইতুল্লাহ তাওয়াফের কথা অবতীর্ণ করিয়াছেন, সাফার উল্লেখ করেননি। কাজেই সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ী করলে আমাদের দোষ হইবে কি? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন¬ [আরবী] আবু বাক্‌র [রাদি.] আরো বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি, আয়াতটি দু প্রকার লোকদের উভয়ের প্রতি লক্ষ্য করেই অবতীর্ণ হয়েছে, অর্থাৎ যারা জাহিলী যুগে সাফা ও মারওয়া সাঈ করা হইতে বিরত থাকতেন, আর যারা তৎকালে সায়ী করত বটে, কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর সায়ী করার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের দ্বিধার কারণ ছিল আল্লাহ বাইতুল্লাহ তাওয়াফের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু সাফা ও মারওয়ার কথা উল্লেখ করেননি? অবশেষে বাইতুল্লাহ তাওয়াফের কথা আলোচনা করার পর আল্লাহ সাফা ও মারওয়া সাঈ করার কথা উল্লেখ করেন।

[বোখারী পর্ব ২৫/৭৯ হাঃ ১৬৪৩, মুসলিম পর্ব ১৫/৪৩, হাঃ ১২৭৭] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৮০৪. আসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে বললাম, আপনারা কি সাফা ও মারওয়া সাঈ করিতে অপছন্দ করিতেন? তিনি বলিলেন, হাঁ। কেননা তা ছিল জাহিলী যুগের নিদর্শন। অবশেষে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেনঃ

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا

“নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন। কাজেই হাজ্জ বা উমরাহকারীদের জন্য এ দুইয়ের মধ্যে সাঈ করায় কোন দোষ নেই”-

[আল-বাকারাদি. ১৫৮]। [বোখারী পর্ব ২৫/৮০ হাঃ ১৬৪৮, মুসলিম পর্ব ১৫/৪৩, হাঃ ১২৭৮] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Was this article helpful?

Related Articles