মহান আল্লাহ বলেনঃ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যনিষ্ঠ লোকদের সাথে থাকো। (সূরা তওবাঃ ১১৯)
মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
সত্যনিষ্ঠ পুরুষ ও নারীগণ! ……… আল্লাহ তাদের জন্য মার্জনা ও বিরাট পুরস্কার তৈরি করে রেখেছেন। (সূরা আহযাবঃ ৩৫)
মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
তারা যদি আল্লাহর নিকট অঙ্গীকারে সত্যতার প্রমাণ দিতো, তাহলে তাদের জন্য কতই না ভাল হতো! (সূরা মুহাম্মাদঃ ২১)
৫৪. হযরত ইবনে মাসউদ (রা) রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেনঃ সত্যপ্রীতি বা সত্যনিষ্ঠা সততার পথ দেখায় আর সততা (মানুষকে) জান্নাতের দিকে চালিত করে। মানুষ সত্যের অনুশীলন করতে করতে এক পর্যায়ে আল্লাহর নিকট সিদ্দিক (সত্যবাদী) নামে পরিচিত হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা অশ্লীলতার দিকে চালিত করে আর অশ্লীলতা মানুষকে জাহান্নামের (আগুনের) দিকে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যার অনুশীলন করতে করতে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট মিথ্যাবাদী নামে পরিচিত হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
৫৫. আবু মুহাম্মদ হাসান ইবনে আবু তালিব (রা) বর্ণনা করেনঃ আমি রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই কথাগুলো মুখস্ত করেছিঃ ‘যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে তা ছেড়ে দাও আর যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে না, তা-ই গ্রহণ করো। সত্যপ্রীতি অবশ্যই শান্তিদায়ক আর মিথ্যা সন্দেহ সৃষ্টিকারী।
ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে সহীহ হাদীস আখ্যা দিয়েছেন।
৫৬. আবু সুফিয়ান সাখ্র ইবনে হার্ব (রা) এক দীর্ঘ হাদীসে হিরাকলের কাহিনী বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেনঃ হিরাকল জিজ্ঞেস করল যে, নবী তোমাদের কী কী কাজের আদেশ করেন? আবু সুফিয়ান বলেনঃ তিনি (নবী) বলেন; ‘তোমরা একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী (দাসত্ব) করো এবং তার সাথে কোন ব্যাপারে কাউকে শরীক করো না। তোমরা তোমাদের বাপ-দাদা যা বলে গেছেন তা পরিহার করো। পক্ষান্তরে নবী আমাদেরকে নামায, সত্যনিষ্ঠা, ঔদার্য ও মধুর সম্পর্কের আদেশ করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৫৭. বদরী সাহাবী সাহল ইবনে হুনাইফ (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট যথার্থই শাহাদাতের মৃত্যু চায়, সে নিজের বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায় ভূষিত করেন।’ (মুসলিম)
৫৮. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জনৈক নবী (ইউশা’ ইবনে নূন) জিহাদ করতে গিয়ে তাঁর জাতিকে বললেনঃ যে ব্যক্তি সদ্য বিয়ে করেছে; কিন্তু স্বীয় স্ত্রীর সাথে এখনো মিলিত হয়নি, যে ব্যক্তি ঘর তৈরি করেছে কিন্তু এখনো ছাদ তৈরি করেনি, এবং যে ব্যক্তি গর্ভবতী ছাগল বা উষ্টনী খরিদ করে তার বাচ্চার জন্য অপেক্ষমান, তারা যেন আমার সাথে জিহাদে গমন না করে। অতঃপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং যে জায়গায় যুদ্ধ করার কথা ছিল, সেখানে আসরের নামাযের কাছাকাছি সময় উপনীত হলেন। তখন তিনি সূর্যকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ ‘ওহে, তুমিও আল্লাহর নির্দেশের অধীন আর আমিও তাঁর নির্দেশের অধীন। হে আল্লাহ! তুমি সূর্যকে আটকে রাখো।’ অতঃপর জিহাদে জয়লাভ করা পর্যন্ত তাকে আটকে রাখা হলো। তিনি গনীমতের মাল একত্র করে রাখলে আগুন সেগুলোকে জ্বালিয়ে ভস্ম করার জন্য এগিয়ে এল; কিন্তু (শেষ পর্যন্ত) আগুন তা জ্বালালো না। তখন তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে কেউ গনীমতের মাল খিয়ানত (আত্নসাৎ) করেছে। অতএব, তোমাদের প্রত্যেক গোত্রের একজনকে আমার হাতে বাইয়াত করতে হবে।’
কিন্তু বাইয়াত করতে গিয়ে এক ব্যক্তির হাত তাঁর হাতের সাথে আটকে গেল। তখন তিনি (লোকটিকে) বললেনঃ ‘তোমাদের মধ্যেই খিয়ানতকারী রয়েছে। সুতরাং তোমার গোত্রের সব লোককে আমার হাতে বাইয়াত করতে হবে।’ এভাবে বাইয়াত করতে গিয়ে দুই তিন জনের হাত তাঁর হাতের সাথে আটকে গেল। তখন তিনি বললেনঃ ‘তোমাদের দ্বারাই এ খিয়ানতের কাজটি হয়েছে।’ তারা তখন একটি গরুর মাথার সমান সোনার মাথা নিয়ে এল। তারপর সেটাকে তিনি মালের ভেতর রেখে দিলেন; কিন্তু আগুন এসে তা সবই খেয়ে ফেলল। উল্লেখ্য যে, আমাদের পূর্বে কারো জন্য গনিমতের মাল হালাল করা হয়নি। আল্লাহ আমাদের দুর্বলতার দিক বিবেচনা করে আমাদের জন্য এটা হালাল করে দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৫৯. হযরত আবু খালিদ ইবনে হিযাম (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্রেতা ও বিক্রেতা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের কেনাবেচা বাতিল করে দেয়ার অধিকার রাখে। তারা যদি উভয়ে সত্য পথে থাকে, তাহলে তাদের কেনাবেচা বরকতপূর্ণ হয়। আর যদি তারা মিথ্যা (বা অসাধু) পথে থাকে, তাহলে তা লেনদেনের বরকত নষ্ট করে দেয়। (বুখারী ও মুসলিম)