যুলূম করা হারাম এবং মজলুমদের সম্পদ ফেরত দেয়ার আদেশের বিবরণ

মহান আল্লাহ বলেনঃ

‘জালিমের জন্য কেউ দরদী বন্ধু হয়ো না আর না এমন কোন সুপারিশকারী হবে যার কথা মেনে নেওয়া হবে।’ (সূরা আল মুমিনঃ ১৮)

মহান আল্লাহ বলেনঃ

‘জালিমের কোন সাহায্যকারী হবে না। (সূরা আল হাজ্জঃ ৭৯)

 

২০৩. হযরত জাবের বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা জুলুম করা থেকে দূরে থাকো। কেননা, কিয়ামতের দিন জুলুম অন্ধকারময় ধোঁয়ায় পরিণত হবে। (তোমরা) কার্পণ্যের কলুষতা থেকেও দূরে থাকো। কেননা, কার্পণ্যই তোমাদের পূর্বেকার অনেক জনগোষ্টীকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কার্পণ্য তাদেরকে রক্তপাত ও মারপিট করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হারামকে হালাল করতে উস্কানি যুগিয়েছে। (মুসলিম)


২০৪. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মহান) আল্লাহ কিয়ামতের দিন অবশ্যই পাওনাদারের পাওনা আদায় করাবেন; এমনকি শিংযুক্ত ছাগল থেকে শিংবিহীন ছাগলের প্রতিশোধ নেয়া হবে। (মুসলিম)


২০৫. হযরত ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেনঃ একদা আমরা বিদায় হজ্জ সম্পর্কে পরস্পরে কথাবার্তা বলছিলাম। তখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝেই উপস্থিত ছিলেন। তখনও বিদায় হজ্জ কি এবং বিদায় হজ্জ কাকে বলে, এ বিষয়ে আমাদের ধারণা ছিল না। এ অবস্থায় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর মসীহে দজ্জাল সম্পর্কে খোলামেলা কথাবার্তা বললেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি স্বীয় উম্মতকে দজ্জালের ভয় দেখাননি। নূহ (আ) এবং তাঁর পরবর্তী নবীগণ স্ব স্ব উম্মতকে দজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন এবং এই মর্মে সতর্ক করেছেন যে, তোমাদের মধ্যে দজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবেই। এ বিষয়টা তোমাদের কাছে মোটেই গোপন থাকবে না। তোমরা এটা জেনে রাখো যে দজ্জালের ডান চোখ অন্ধ হবে এবং তা বড় আঙ্গুরের মতো ফোলা হবে। কাজেই তোমরা সাবধান হও। তোমাদের পরস্পরের জীবন (রক্ত) ও ধন-মাল পরস্পরের জন্যে হারাম ও সম্মানার্হ। সাবধান থেকো। আমি কি (আল্লাহর বিধান তোমাদের কাছে) পৌঁছে দিয়েছি? উপস্থিত সবাই বললেনঃ হ্যাঁ (আপনি পৌঁছে দিয়েছেন)।   এরপর তিনি তিনবার বললেনঃ ‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থেকো। (তিনি আবার বললেনঃ) ধ্বংস হোক (অথবা আফসোস হোক), খুব মনযোগ দিয়ে শোন! আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা পরস্পর রক্তপাত করে (আবার) কুফরীতে ফিরে যেও না। (বুখারী ও মুসলিম)


২০৬. হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি এক বিঘৎ পরিমাণ জমিতে জুলুম করল (অর্থ্যাৎ জোরপূর্বক দখল করল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ) তার গলায় সাত তবক জমিন পরিয়ে দেবেন। (বুখারী ও মুসলিম)


২০৭. হযরত আবু মূসা (রা) বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমকে অবকাশ দিয়ে থাকেন; কিন্তু তিনি যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন আর রেহাই দেন না। এরপর তিনি (বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ ‘আর আমার প্রভু (রব্ব) যখন কোন জালিম জনবসতিকে পাকড়াও করেন, তখন তাঁর পাকড়াও এ রকমই (কঠিন) হয়ে থাকে। তাঁর পাকড়াও বড়ই কঠিন ও নির্মম। (সূরা হূদঃ ১০২) (বুখারী ও মুসলিম)


২০৮. হযরত মুয়ায (রা) বলেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (ইয়ামেনের শাসকরূপে) পাঠানোর সময় বলেনঃ তুমি আহলে কিতাবদের অন্তর্ভুক্ত একটি জনগোষ্ঠীর কাছে যাচ্ছো। তুমি তাদেরকে এরূপ সাক্ষ্য দিতে আহবান জানাবেঃ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল।’ তারা যদি এ আহবানে সাড়া দেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, প্রতিটি দিন-রাতের নির্দিষ্ট সময়-সীমার মধ্যে আল্লাহ তাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। তারা যদি তোমার এ কথাও মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তাদের ওপর যাকাত (সাদকা) ফরয করেছেন। এটা তাদের ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে তাদের গরীবদের মধ্যে বন্টন করতে হবে। তারা যদি তোমার এ কথাও মেনে নেয়, তবে বেছে বেছে তাদের উত্তম মালগুলো গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। আর ‘মজলুম বা নির্যাতিতদের (বদ) দো’আকে (অভিশাপকে) ভয় করো। কেননা তার (বদ-দো’আর) ও আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল নেই।’ (বুখারী ও মুসলিম)


২০৯. হযরত আবু হুমাইদ আবদুর রহমান ইবনে সা’দ আস্‌ সা’ইদী (রা) বর্ণনা করেন, আযদ গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত আদায়ের কাজে নিয়োগ করেন। লোকটির ডাক নাম ছিলো ইবনে লুতবিয়্যাহ। সে (যাকাত আদায় করে) ফিরে এসে (রাসূলে আকরামকে) বললোঃ এই মাল আপনার আর এই মাল আমাকে উপঢৌকন স্বরূপ দেয়া হয়েছে। (এ কথা শুনে) রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বললেনঃ দেখো, আল্লাহ আমাকে যেসব পদের অভিভাবক নিযুক্ত করেছেন, তার মধ্য থেকে কোন পদে তোমাদের কাউকে নিযুক্ত করি। সে আমার কাছে ফিরে এসে বলেঃ এগুলো আপনাদের আর এগুলো আমাকে উপহার স্বরূপ দেয়া হয়েছে। এহেন ব্যক্তি তার বাপ-মায়ের ঘরে বসে থাকে না কেন? সে যদি সত্যভাষী হয় তবে সেখানেই তো তাকে উপহার পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহর কসম! তোমাদের কেউ অন্যায় বা অবৈধভাবে কিছু গ্রহণ করলে কিয়ামতের দিন সে তা বহন করতে করতে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। কাজেই আমি তোমাদের কাউকে আল্লাহর দরবারে এ অবস্থায় হাজির হতে দেখতে চাই না যে, সে (আস্ত) উট বহন করবে আর তা আওয়াজ করতে থাকবে অথবা গাভী (বহন করে নিয়ে আসবে আর তা) হাম্বা হাম্বা রব করতে থাকবে। আর ছাগলে বোঝা বহন করে নিয়ে আসবে আর তা ভ্যাঁ ভ্যাঁ রব করতে থাকবে। (বর্ণনাকারী বলেনঃ) অতঃপর তিনি স্বীয় দু’হাত এত ওপরে তুললেন যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা (লোকদের) দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি বললেনঃ ‘হে আল্লাহ! আমি কি (তোমার আদেশ) লোকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি? তিনবার তিনি একথা বললেন। (বুখারী ও মুসলিম)


২১০. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন ব্যক্তির ওপর তার কোন ভাইয়ের যদি কোন দাবী থাকে এবং তা যদি তার মান-সম্ভ্রমের কিংবা অন্য কিছু ওপর জুলুম সম্পর্কিত হয়, তবে সে যেন আজই একেবারে নিঃস্ব হওয়ার পূর্বে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। নচেত (কিয়ামতের দিন) তার জুলুমের সমপরিমাণ পুণ্য (নেকী) তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হবে। যদি তার কোন পুণ্য আদৌ না থাকে তবে তার প্রতিপক্ষ মজলুমের গুনাহ থেকে সমপরিমাণ জুলুম তার হিসাবের শামিল করে দেওয়া হবে। (বুখারী)


২১১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস্‌ (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মুসলমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার মুখ ও হাতের ক্ষতি থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। আর মুহাজির হলো সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিস পরিহার করে চলে। (বুখারী ও মুসলিম)


২১২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) বর্ণনা করেন, কিরকিরা নামক এক ব্যক্তি রাসূলে আকরামের মালপত্র দেখাশুনার কাজে নিযুক্ত ছিল। লোকটি মারা গেলে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি দোযখে যাবে। (এ কথার পর) সাহাবীগণ তার বাড়িতে খোঁজ-খবর নিতে গেলেন। (উদ্দেশ্য, লোকটি কেন দোযখী হলো)।   তাঁরা লোকটির ঘরে একটি ‘আবা’ (এক ধরনের পোশাক) পেলেন। লোকটি এই পোশাক আত্মসাৎ করেছিল। (বুখারী)


২১৩. হযরত আবু বকর (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেন, সেদিন থেকেই যুগ বা কাল নির্দিষ্ট ধারায় আবর্তন করছে। অর্থ্যাৎ এক বছরে বারো মাস, যার মধ্যে চারটি হলো নিষিদ্ধ মাসঃ এর তিনটি পর পর আসে। যেমন যিলক্কাদ, যিলহাজ্জ ও মুহাররম এবং মুদার গোত্রের রজব মাস যা জামাদিউস সানী ও শাবান মাসের মাঝখানে অবস্থিত। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটি কোন্ মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই এটা ভালো জানেন। এ জবাব শুনে তিনি নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। আমরা মনে করলাম, তিনি হয়ত এর নতুন কোন নামকরণ করবেন। কিন্তু তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কি যিলহাজ্জ মাস নয়? আমরা বললামঃ ‘হ্যাঁ’।   তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কোন শহর? আমরা বললামঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই এটা ভালো জানেন। এ জবাব শুনে তিনি নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। আমরা মনে করলাম, তিনি হয়ত এর নতুন কোন নামকরণ করবেন।

তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কি (মক্কা) শহর নয়? আমরা জবাব দিলাম ‘হ্যাঁ’।   তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কোন্‌ দিন? আমরা বললামঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই এটা ভালো জানেন। এ জবাব শুনে তিনি নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। আমরা মনে করলাম, তিনি হয়ত এর নতুন কোন নামকরণ করবেন। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ এটা কি কুরবানীর দিন নয়? জবাবে আমরা বললাম, হ্যাঁ। এরপর তিনি বললেনঃ তোমাদের আজকের এই দিনটি যেমন পবিত্র, তোমাদের শহরটি যেমন পবিত্র এবং তোমাদের মাসটি যেমন পবিত্র, তেমনি তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-মাল এবং তোমাদের মান-ইজ্জতও পবিত্র এবং শ্রদ্ধার্হ। তোমরা অচিরেই তোমাদের প্রভুর সাথে মিলিত হবে। তিনি তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। সাবধান! আমার অবর্তমানে তোমরা পরস্পর রক্তারক্তি করে কুফরীতে জড়িয়ে পড়ো না। এ বিষয়ে তোমরা সতর্ক থেকো আর উপস্থিত লোকেরা যেন অনুপস্থিত লোকদের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেয়। কেননা এটা অসম্ভব নয় যে, যে ব্যক্তি এটা পৌঁছে দেবে তার চেয়ে যার কাছে পৌঁছানো হবে সে অধিক হেফাজতকারী হবে। এরপর তিনি প্রশ্ন করলেনঃ আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? আমরা বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থেকো। (বুখারী ও মুসলিম)


২১৪. হযরত আবু উমামা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা হলফের মাধ্যমে কোন মুসলমানের হক আত্মসাৎ করবে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন অনিবার্য এবং জান্নাত হারাম করে দেবেন। এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলোঃ হে আল্লাহর রাসূল! সেটা যদি কোন তুচ্ছ জিনিস হয়? তিনি বললেন, তা পিলু গাছের একটি ডাল হলেও। (মুসলিম)


২১৫. হযরত আদী ইবনে উমায়ের (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমরা তোমাদের কাউকে কোন সরকারী পদে নিয়োগ করলাম। এরপর সে একটা সূঁচ পরিমাণ অথবা তারচেয়ে বেশি কিছু যদি আমাদের থেকে গোপন করে, তবে সে খেয়ানতকারীরূপে গণ্য হবে। সে কিয়ামতের দিন তা নিয়ে হাযির হবে। আনসার গোত্রের জনৈক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিন। (বর্ণনাকারী) বলেনঃ আমি যেন এ দৃশ্যটা এখনও দেখতে পাচ্ছি। তিনি বললেনঃ তোমার হি হয়েছে? সে বললোঃ আমি আপনাকে এভাবে এভাবে বলতে শুনেছি। তিনি বললেনঃ আমি এখনও তাই বলবো। আমরা তোমাদের কাউকে কোন পদে নিয়োগ করলে সে কম-বেশি সবকিছু নিয়ে আসবে। তার থেকে তাকে যা দেয়া হবে তা-ই সে নেবে আর যা থেকে তাকে বারণ করা হবে, তা থেকে বিরত থাকবে। (মুসলিম)


২১৬. হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা) বলেনঃ খায়বারের যুদ্ধের দিন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একদল সাহাবী এসে বললেনঃ অমুক ব্যক্তি শহীদ, অমুক ব্যক্তি শহীদ। এভাবে তারা এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ অমুক ব্যক্তি শহীদ। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কখখনো নয়, আমি তাকে একটি চাদর কিংবা একটি আবা’র জন্য জাহান্নামী হতে দেখেছি। এটা সে আত্মসাৎ করেছিল। (মুসলিম)


২১৭. হযরত আবু কাতাদা (রা) বর্ণনা করেনঃ একদা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে দাঁড়ালেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং আল্লাহর ওপর ঈমান রাখা সবচেয়ে উত্তম কাজ। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললোঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি মনে করেন, আমি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হলে আমার গুনাহসমূহের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে বললেনঃ ‘হ্যাঁ’, তুমি যদি ধৈর্যশীল, সওয়াবের প্রত্যাশী ও সামনে অগ্রসরমান হও এবং পলায়নপর না হও’।   এরপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কি আর কিছু বলতে চাও? লোকটি আবার বললেনঃ ‘আপনার কি মত, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই তবে আমার গুনাহসমূহের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে?’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘হ্যাঁ’, তুমি যদি ধৈর্যশীল, সওয়াবের প্রত্যাশী ও সামনে অগ্রসরমান হও ও পালায়নপর না হও। তবে (অন্যের) ঋণ ক্ষমা করা হবে না। জিবরাইল (আ) আমায় এ কথা বলেছেন। (মুসলিম)


২১৮. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন; একদা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জানো কোন্‌ ব্যক্তি দরিদ্র-নিঃস্ব? সাহাবীগণ বললেনঃ আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি দরিদ্র যার কোন ধন-মাল নেই। তিনি বললেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সবচাইতে দরিদ্র হবে, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি যাবতীয় ইবাদত নিয়ে উপস্থিত হবে; কিন্তু (দেখা যাবে যে) সে কাউকে গালমন্দ করেছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো ধন-মাল আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে মারধোর করেছে (অর্থ্যাৎ এসব অপরাধ ও সে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে।) এদেরকে তার সৎকাজগুলি দিয়ে দেয়া হবে। উল্লেখিত দাবিগুলো পূরণ করার পর্বেই যদি তার সৎকাজ শেষ হয়ে যায়, তাহলে দাবিদারদের গুনাহসমূহ তার ঘাড়ে চাপানো হবে। এরপর তাকে দোযখে ছুঁড়ে মারা হবে। (মুসলিম)


২১৯. হযরত উম্মে সালামা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘আমি একজন মানুষ। তোমরা তোমাদের ঝগড়া-ফাসাদ নিস্পত্তির জন্য আমার কাছে এসে থাকো। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ দলিল প্রমাণ উত্থাপনে প্রতিপক্ষের তুলনায় বেশি সুদক্ষ হতে পারে। আমি তাদের বক্তব্য শুনে সেই অনুসারে হয়ত ফয়সালা দিতে পারি। এভাবে আমি যদি (অজ্ঞাতসারে) কারো ভাইয়ের হক তাকে দেয়ার ফয়সালা করি, তবে (জেনে রাখবে) আমি তাকে জাহান্নামের একটি টুকরাই দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)


২২০. হযরত ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মুসলমান সব সময় সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করে, যতক্ষণ সে অন্যায়ভাবে রক্তপাত না করে (অর্থ্যাৎ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করে)। (বুখারী)


২২১. হযরত হামযার স্ত্রী হযরত হাওলা বিনতে ‘আমের আল-আনসারী বলেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ এমন অনেক লোক আছে যারা আল্লাহর মাল (অর্থ্যাৎ সরকারী ধন-সম্পদ) অবৈধভাবে ব্যয় করে— অপচয় করে। কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তির জন্যে জাহান্নামের আগুন নির্ধারিত রয়েছে। (বুখারী)


 

Was this article helpful?

Related Articles