যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) শাদী ও পর্দার আয়াত অবতীর্ণ এবং বিবাহের ওয়ালীমার প্রমাণ।

৯০২. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন শাদী করেন, তখন ওয়ালীমা করেন, কিন্তু যাইনাব (রাঃ)-এর শাদীর সময় যে পরিমাণ ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেছিলেন, তা অন্য কারো বেলায় করেননি। সেই ওয়ালীমাহ ছিল একটি ছাগল দিয়ে।

সহীহুল বুখারী, পৰ্ব ৬৭: বিবাহ, অধ্যায় ৬৮, হাঃ ৫১৬৮; মুসলিম, পর্ব ১৬ : নিকাহ বা বিবাহ, অধ্যায় ১৩, হাঃ ১৪২৭



৯০৩. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যয়নাব বিন্ত জাহশকে যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ে করেন, তখন তিনি লোকদের দাওয়াত দিলেন। লোকরা আহারের পর বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। তিনি উঠে যেতে উদ্যত হচ্ছিলেন, কিন্তু লোকরা উঠছিল না। এ অবস্থা দেখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তিনি উঠে যাওয়ার পর যারা উঠবার তারা উঠে গেল। কিন্তু তিন ব্যক্তি বসেই রইল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের জন্য ফিরে এসে দেখেন, তারা তখনও বসে রয়েছে (তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন)। এরপর তারাও উঠে গেল। আমি গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের চলে যাওয়ার সংবাদ দিলাম। অতঃপর তিনি এসে প্রবেশ করলেন। এরপর আমি প্রবেশ করতে চাইলে তিনি আমার ও তার মাঝে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করেনঃ (يأَيُّهَا الَّذِينَءَامَنُوا لاَ تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ) হে মু’মিনগণ! তোমরা নবীর গৃহে প্রবেশ করো না … শেষ পর্যন্ত।

সহীহুল বুখারী, পূর্ব ৬৫: তাফসীর, অধ্যায় ৮, হাঃ ৪৭৯১; মুসলিম, পর্ব ১৬ : নিকাহ বা বিবাহ, অধ্যায় ১৪, হাঃ ১৪২৮


৯০৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি পর্দা [র আয়াত নাযিল হওয়া] সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত। এ ব্যাপারে উবাই ইবনি কাব [রাদি.] আমাকে জিজ্ঞেস করিতেন। যাইনাব বিনতে জাহশের সঙ্গে নববিবাহিত হিসেবে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]-এর ভোর হল। তিনি মাদীনায় তাঁকে নিকাহ করেছিলেন। বেলা ওঠার পর তিনি লোকজনকে খাওয়ার পরও কিছু লোক তাহাঁর সাথে বসে থাকল। অবশেষে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ] উঠে গেলেন, আমিও তাহাঁর সাথে সাথে গেলাম। তিনি আয়েশা [রাদি.]-এর হুজরার দরজায় পৌঁছলেন। অতঃপর ভাবলেন, লোকেরা হয়ত চলে গেছে। আমিও তাহাঁর সাথে ফিরে আসলাম। [এসে দেখলাম] তারা স্বস্থানে বসেই রয়েছে। তিনি পুনরায় ফিরে গেলেন। আমিও তাহাঁর সঙ্গে দ্বিতীয়বার ফিরে গেলাম। এমনকি তিনি আয়েশা [রাদি.]-এর গৃহের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে আবার ফিরে আসলেন। আমিও তাহাঁর সঙ্গে ফিরে আসলাম। এবার [দেখলাম] তারা উঠে গেছে। অতঃপর তিনি আমার ও তাহাঁর মাঝে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। তখন পর্দার আয়াত নাযিল হল।

[বোখারী পর্ব ৭০ : /৫৯ হাঃ ৫৪৬৬; মুসলিম, ১৬/১৪, হাঃ ১৪২৮]।এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৯০৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর যখন যাইনাব [রাদি.]-এর সাথে শাদী হয়, তখন উম্মু সুলায়ম আমাকে বলিলেন, চল, আমরা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর জন্যে কিছু হাদীয়া পাঠাই। আমি তাকে বললাম, হ্যাঁ, এ ব্যবস্থা করুন। তখন তিনি খেজুর, মাখন ও পনির এক সাথে মিশিয়ে হালুয়া বানিয়ে একটি ডেকচিতে করে আমার মারফত রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে পাঠালেন। আমি সেসব নিয়ে তাহাঁর খিদমতে উপস্থিত হলে তিনি এগুলো রেখে দিতে বলেন এবং আমাকে কয়েকজন লোকের নাম উল্লেখ করে ডেকে আনার আদেশ করিলেন। আরো বলিলেন, যার সাথে দেখা হয় তাকেও দাওয়াত দিবে। তিনি যেভাবে আমাকে হুকুম করিলেন, আমি সেইভাবে কাজ করলাম। যখন আমি ফিরে এলাম, তখন ঘরে অনেক লোক দেখিতে পেলাম। নাবী [সাঃআঃ] তখন হালুয়া [হাইশা] পাত্রের মধ্যে হাত রাখা অবস্থায় ছিলেন এবং আল্লাহ্ তাআলার মর্জি মোতাবেক কিছু কথা বলিলেন। অতঃপর তিনি দশ দশ জন করে লোক খাবারের জন্য ডাকলেন এবং বলিলেন, তোমরা বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু কর এবং প্রত্যেকে পাত্রের নিজ নিজ দিক হইতে খাও। যখন তাহাদের খাওয়া-দাওয়া শেষ হল তাহাদের মধ্য থেকে অনেকেই চলে গেল এবং কিছু সংখ্যক লোক কথাবার্তা বলিতে থাকল। যা দেখে আমি বিরক্তি বোধ করলাম। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] সেখান থেকে বের হয়ে অন্য ঘরে গেলেন। আমিও সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি বললাম, তারাও চলে গেছে তখন তিনি নিজের কক্ষে ফিরে এলেন এবং পর্দা ফেলে দিলেন। তিনি তাহাঁর কক্ষে থাকলেন এবং এ আয়াত পাঠ করলেনঃ মুমিনগণ, তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া হলে তোমরা খাবার তৈরির অপেক্ষা না করে নাবীগৃহে খাবারের জন্য প্রবেশ করো না। তবে যদি তোমাদেরকে ডাকা হয় তাহলে প্রবেশ কর এবং খাওয়া শেষ করে চলে যাবে। তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না এবং তোমাদের এরূপ আচরণে নাবীর মনে কষ্ট হয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন, কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা সত্য বলিতে সংকোচ বোধ করেন না।

[বোখারী পর্ব ৬৭: /৬৪, হাঃ ৫১৬৩]। এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Was this article helpful?

Related Articles