মেহমানের সম্মান ও তাকে [মেহমানকে] প্রাধান্য দেয়ার ফাযীলাত

১৩৩০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক লোক নাবী [সাঃআঃ]-এর খেদমতে এল। তিনি [সাঃআঃ] তাহাঁর স্ত্রীদের কাছে লোক পাঠালেন। তাঁরা জানালেন, আমাদের নিকট পানি ছাড়া কিছুই নেই। তখন রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, কে আছ যে এই ব্যক্তিকে মেহমান হিসেবে নিয়ে নিজের সাথে খাওয়াতে পার? তখন এক আনসারী সাহাবী {আবু ত্বলহা } বলিলেন, আমি। এ বলে তিনি মেহমানকে নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বলিলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর মেহমানকে সম্মান কর। স্ত্রী বলিলেন, বাচ্চাদের খাবার ছাড়া আমাদের ঘরে অন্য কিছুই নেই। আনসারী বলিলেন, তুমি আহার প্রস্তুত কর এবং বাতি জ্বালাও এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাহাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দাও। সে বাতি জ্বালাল, বাচ্চাদেরকে ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরি ছিল তা উপস্থিত করিল। বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মত শব্দ করিতে লাগলেন এবং মেহমানকে বুঝাতে লাগলেন যে, তারাও সঙ্গে খাচ্ছেন। তাঁরা উভয়েই সারারাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট গেলেন, তখন তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহ্ তোমাদের গত রাতের কাণ্ড দেখে হেসে দিয়েছেন অথবা বলেছেন খুশী হয়েছেন এবং এ আয়াত নাযিল করিয়াছেন।

وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأَولئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

তারা অভাবগ্রস্ত সত্ত্বেও নিজেদের উপর অন্যদেরকে অগ্রগণ্য করে থাকে। আর যাদেরকে অন্তরের কৃপণতা হইতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলতাপ্রাপ্ত [সূরাহ আল-হাশর ৫৯/৯]।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৩৭৯৮; মুসলিম ৩৬/৩২, হাঃ ২০৫৪]


১৩৩১. আবদুর রহমান ইবনি আবু বাক্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সফরে নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে আমরা একশ ত্রিশজন লোক ছিলাম। সে সময় নাবী [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের কারো সঙ্গে কি খাবার আছে? দেখা গেল, এক ব্যক্তির সঙ্গে এক সা কিংবা তার কমবেশী পরিমাণ খাদ্য আছে। সে আটা গোলানো হল। অতঃপর দীর্ঘ দেহী এলোমেলো চুলওয়ালা এক মুশরিক এক পাল বকরী হাঁকিয়ে নিয়ে এল। নাবী [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন। বিক্রি করিবে, না, উপহার দিবে? সে বলিল, না, বরং বিক্রি করব। নাবী [সাঃআঃ] তার নিকট হইতে একটা বকরী কিনে নিলেন। সেটাকে যব্‌হ করা হল। নাবী [সাঃআঃ] বকরীর কলিজা ভুনা করার আদেশ দিলেন। আল্লাহর কসম! একশ ত্রিশজনের প্রত্যেককে নাবী [সাঃআঃ] সেই কলিজার কিছু কিছু করে দিলেন। উপস্থিতদের হাতে দিলেন; আর অনুপস্থিত ছিল তার জন্য তুলে রাখলেন। অতঃপর দুটি পাত্রে তিনি গোশত ভাগ করে রাখলেন। সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে গেল। আর উভয় পাত্রে কিছু উদ্বৃত্ত রয়ে গেল। সেগুলো আমরা উটের পিঠে উঠিয়ে নিলাম। অথবা রাবী যা বলিলেন।

[বোখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ২৬১৮; মুসলিম ৩৬/৩২ হাঃ ২০৫৬]


১৩৩২. আবদুর রহমান ইবনি আবু বাক্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আসহাবে সুফ্‌ফা ছিলেন খুবই দরিদ্র। [একদা] নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ যার নিকট দুজনের আহার আছে সে যেন [তাঁদের হইতে] তৃতীয় জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আর যার নিকট চারজনের আহারের সংস্থান আছে, সে যেন পঞ্চম বা ষষ্ঠজনকে সঙ্গে নিয়ে যায়। আবু বাক্‌র [রাদি.] তিনজন সাথে নিয়ে আসেন এবং আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] দশজন নিয়ে আসেন। আবদুর রহমান [রাদি.] বলেন, আমাদের ঘরে এবং আবু বাকরের ঘরে আমি, আমার পিতা ও মাতা [এই তিন জন সদস্য] ছিলাম। রাবী বলেন, আমি জানি না, তিনি আমার স্ত্রী এবং খাদিম একথা বলেছিলেন কি-না? আবু বাক্‌র [রাদি.] আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] -এর ঘরেই রাতের আহার করেন, এবং ইশার সলাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ইশার সলাতের পর তিনি আবার [রাসূলুল্লাহ্[সাঃআঃ]-এর ঘরে] ফিরে আসেন এবং নাবী [সাঃআঃ]-এর রাতের আহার শেষ করা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় রাতের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বাড়ি ফিরলে তাহাঁর স্ত্রী তাঁকে বলিলেন, মেহমানদের নিকট আসতে কিসে আপনাকে ব্যস্ত রেখেছিল? কিংবা তিনি বলেছিলেন, [বর্ণনাকারীর সন্দেহ] মেহমান হইতে। আবু বাক্‌র [রাদি.] বলিলেন, এখনও তাহাদের খাবার দাওনি? তিনি বলিলেন, আপনি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেন। তাহাদের সামনে হাযির করা হয়েছিল, তবে তারা খেতে সম্মত হননি। আবদুর রহমান [রাদি.] বলেন, [পিতার তিরস্কারের ভয়ে] আমি সরে গিয়ে আত্মগোপন করলাম। তিনি [রাগানি¦ত হয়ে] বলিলেন, ওরে বোকা এবং ভর্ৎসনা করিলেন। আর [মেহমানদের] বলিলেন, খেয়ে নিন। আপনারা অস্বস্তিতে ছিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমি তা কখনই খাব না। আবদুর রহমান বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমরা লুক্‌মা উঠিয়ে নিতেই নীচ হইতে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ পূর্বের চেয়ে অধিক খাবার রয়ে গেলো। আবু বাক্‌র [রাদি.] খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখিতে পেলেন তা পূর্বের সমপরিমাণ কিংবা তার চেয়েও বেশি। তিনি তাহাঁর স্ত্রীকে বলিলেন, হে বানূ ফিরাসের বোন। একি? তিনি বলিলেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো এখন পূর্বের চেয়ে তিনগুণ বেশি! আবু বাক্‌র [রাদি.]-ও তা হইতে আহার করিলেন এবং বলিলেন, আমার সে শপথ শয়তানের পক্ষ হইতেই হয়েছিল। অতঃপর তিনি আরও লুক্‌মা মুখে দিলেন এবং অবশিষ্ট খাবার নাবী [সাঃআঃ]-এর দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাদ্য আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর কাছেই ছিল। এদিকে আমাদের ও অন্য একটি গোত্রের মাঝে যে সন্ধি ছিলো তার সময়সীমা পূর্ণ হয়ে যায়। [এবং তারা মাদীনায় আসে] আমরা তাহাদের বারজনের নেতৃত্বে ভাগ করে দেই। তাহাদের প্রত্যেকের সংগেই কিছু কিছু লোক ছিলো। তবে প্রত্যেকের সঙ্গে কতজন ছিল তা আল্লাহ্ই জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য হইতে আহার করেন। [রাবী বলেন] কিংবা আবদুর রহমান যেভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ৯ অধ্যায় ৪১ হাদীস নং ৬০২; মুসলিম ৩৬/৩২, হাঃ ২০৫৭]

Was this article helpful?

Related Articles