মাদীনাহ্‌র মর্যাদা, সেখানকার মাল সম্পদে বারাকাতের জন্য নাবী [সাঃআঃ]-এর দুআ, সে স্থান হারাম হওয়া, সেখানে শিকার করা, বৃক্ষ কর্তন করা নিষিদ্ধ এবং এর হারামের সীমারেখা।

৮৬৩. আবদুল্লাহ ইবনি যায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, ইবরাহীম [আ.] মাক্কাহ্‌কে হারাম ঘোষণা করিয়াছেন ও তার জন্য দুআ করিয়াছেন। আমি মাদীনাহ্‌কে হারাম ঘোষণা করেছি, যেমন ইবরাহীম [আ.] মাক্কাহ্‌কে হারাম ঘোষণা করিয়াছেন এবং আমি মাদীনাহ্‌র মুদ ও সাআ এর জন্য দুআ করেছি। যেমন ইবরাহীম [আ.] মাক্কাহ্‌র জন্য দুআ করেছিলেন।

[বোখারী পর্ব ৩৪/৫৩ হাঃ ২১২৯, মুসলিম পর্ব ১৫/৮৫, হাঃ ১৩৬০] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৮৬৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] আবু ত্বলহাকে বলেন, তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে একটি ছেলে খুঁজে আন, যে আমার খেদমত করিতে পারে। এমনকি তাকে আমি খায়বারেও নিয়ে যেতে পারি। অতঃপর আবু ত্বলহা [রাদি.] আমাকে তার সওয়ারীর পেছনে বসিয়ে নিয়ে চললেন। আমি তখন প্রায় সাবালক। আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর খেদমত করিতে লাগলাম। তিনি যখন অবতরণ করিতেন, তখন প্রায়ই তাকে এই দুআ পড়তে শুনতামঃ হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি। পরে আমরা খায়বারে গিয়ে হাজির হলাম। অতঃপর যখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে দুর্গের উপর বিজয়ী করিলেন, তখন তাহাঁর নিকট সাফিয়্যাহ বিনতু হুয়াই ইবনি আখতাবের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করা হলো, তিনি ছিলেন সদ্য বিবাহিতা; তাহাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল এবং আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাঁকে নিজের জন্য মনোনীত করিলেন। অতঃপর তাঁকে নিয়ে রওয়ানা দিলেন। আমরা যখন সাদ্দুস্ সাহ্বা নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন সাফিয়্যাহ [রাদি.] হায়েয থেকে পবিত্র হন। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] সেখানে তাহাঁর সঙ্গে বাসর যাপন করেন। অতঃপর তিনি চামড়ার ছোট দস্তরখানে হায়সা প্রস্তুত করে আমাকে আশেপাশের লোকজনকে ডাকার নির্দেশ দিলেন। এই ছিল আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সাফিয়্যার বিয়ের ওয়ালিমাহ। অতঃপর আমরা মাদীনাহ্‌র দিকে রওয়ানা দিলাম। আনাস [রাদি.] বলেন, আমি দেখিতে পেলাম যে, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাহাঁর পেছনে চাদর দিয়ে সাফিয়্যাহ্‌কে পর্দা করছেন। উঠানামার প্রয়োজন হলে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাহাঁর উটের কাছে হাঁটু বাড়িয়ে বসতেন, আর সাফিয়্যাহ [রাদি.] তাহাঁর উপর পা রেখে উটে আরোহণ করিতেন। এভাবে আমরা মাদীনাহ্‌র নিকটবর্তী হলাম। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] উহুদের দিকে তাকিয়ে বলিলেন, এটি এমন এক পর্বত যা আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। অতঃপর মাদীনাহ্‌র দিকে তাকিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহ, এই কঙ্করময় দুটি ময়দানের মধ্যবর্তী স্থানকে আমি হারাম বলে ঘোষণা করছি, যেমন ইব্রাহীম [আ.] মাক্কাহকে হারাম ঘোষণা করেছিলেন। হে আল্লাহ্! আপনি তাহাদের মুদ এবং সাতে বরকত দান করুন।

[বোখারী পর্ব ৭০/২৮ হাঃ ২৮৯৩, মুসলিম পর্ব ১৫/৮৫ হাঃ ১৩৬৫] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৮৬৫. আসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নাবী [সাঃআঃ] কি মাদীনাহ্‌কে হারাম [সংরক্ষিত এলাকা] হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন? উত্তরে তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, অমুক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত। এ এলাকার কোন গাছ কাটা যাবে না, আর যে ব্যক্তি এখানে বিদ্আত সৃষ্টি করিবে তার উপর আল্লাহ্ তাআলা, ফেরেশ্‌তা ও সকল মানব সম্প্রদায়ের লানাত। আসিম বলেন, আমাকে মূসা ইবনি আনাস বলেছেন, বর্ণনাকারী [আরবী] কিংবা বিদ্আত সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দেয় বলেছেন।

[বোখারী পর্ব ৯৬/৬ হাঃ ৭৩০৬, মুসলিম পর্ব ১৫/৮৫ হাঃ ১৩৬৬] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৮৬৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি তাহাদের মাপের পাত্রে বরকত দিন এবং তাহাদের সাআ ও মুদ-এ বরকত দিন অর্থাৎ মাদীনাহ্‌বাসীদের।

[বোখারী পর্ব ৩৪/৫৩ হাঃ ২১৩০, মুসলিম পর্ব ১৫/৮৫ হাঃ ১৩৬৭] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৮৬৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মাক্কাহইতে তুমি যে বরকত দান করেছ, মাদীনাহ্‌তে এর দ্বিগুণ বরকত দাও। উসমান বিন উমার উক্ত হাদীস ইউনুস থেকে বর্ণনার ক্ষেত্রে জারীরের অনুসরণ করিয়াছেন।

[বোখারী পর্ব ২৯/১০ হাঃ ১৮৮৫, মুসলিম পর্ব ১৫/৮৫, হাঃ ১৩৬৯] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৮৬৮. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

একবার আলী [রাদি.] পাকা ইটে নির্মিত একটি মিম্বরে আরোহণ করে আমাদের উদ্দেশে খুত্‌বা পাঠ করিলেন। তাহাঁর সঙ্গে একটি তরবারী ছিল, যার মাঝে একটি সহীফা ঝুলন্ত ছিল। তিনি বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমাদের নিকট আল্লাহ্‌র কিতাব এবং যা এই সহীফাতে লিপিবদ্ধ আছে এ ব্যতীত অন্য এমন কোন কিতাব নেই যা পাঠ করা যেতে পারে। অতঃপর তিনি তা খুললেন। তাতে উটের বয়স সম্পর্কে লেখা ছিল এবং লেখা ছিল যে, আয়র [পর্বত] থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মাদীনাহ হারাম [পবিত্র এলাকা] বলে বিবেচিত হইবে। যে কেউ এখানে কোন অন্যায় করিবে তার উপর আল্লাহ্, ফেরেশ্‌তাকুল ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের অভিসম্পাত। আর আল্লাহ্ তাআলা তার ফার্‌য ও নফল কোন ইবাদাতই কবূল করবেন না এবং তাতে আরও ছিল যে, এখানকার সকল মুসলিমের নিরাপত্তা একই পর্যায়ের। একজন নিম্ন পর্যায়ের ব্যক্তিও [অন্য কাউকে] নিরাপত্তা প্রদান করিতে পারবে। যদি কোন ব্যক্তি অপর একজন মুসলিমের প্রদত্ত নিরাপত্তাকে লংঘন করে, তাহলে তার উপর আল্লাহ্‌র, ফেরেশ্‌তাকুলের ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের লানাত [অভিসম্পাত]। আল্লাহ্ তাআলা তার ফার্‌য ও নফল কোন ইবাদাতই কবূল করবেন না। তাতে আরও ছিল, যদি কোন ব্যক্তি তার [আযাদকারী] মনিবের অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে নিজের [গোলাম থাকাকালীন সময়ের] মনিব বলে উল্লেখ করে, তাহলে তার উপর আল্লাহ্‌র, ফেরেশ্‌তাকুলের ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের অভিসম্পাত। আর আল্লাহ্ তাআলা তার ফার্‌য, নফল কোন ইবাদাতই গ্রহণ করবেন না।

[বোখারী পর্ব ৯২/৫ হাঃ ৭৩০০, মুসলিম পর্ব ১৫/৮৫ হাঃ ১৩৭০] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৮৬৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলিতেন, আমি যদি মাদীনাতে কোন হরিণকে বেড়াতে দেখি তাহলে তাকে আমি তাড়াব না। [কেননা] আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মাদীনার প্রস্তরময় পাহাড়ের দু এলাকার মধ্যবর্তী এলাকা হল হারম বা সম্মানিত স্থান

Was this article helpful?

Related Articles