মহামারীগ্রস্ত জনপদ হতে ভয়ে পলায়ন’করা কিংবা বাহির হতে সেখানে গমন করা মাকরূহ

আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ

“তোমরা যেখানেই থাকনা কেন সর্বাবস্থায়ই মৃত্যু তোমাদেরকে গ্রাস করবেই। তোমরা যত মজবুত প্রাসাদের মধ্যেই থাকনা কেন সেখানেও মৃত্যু তোমাদের অনুসরণ করবে।” (সূরা নিসাঃ ৭৮)

তিনি আরো বলেছেনঃ

“তোমরা নিজেদের হাতেই নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষপ কর না।” (সূরা বাকারাঃ ১৯৫)

 

১৭৯৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা) শাম দেশে যাচ্ছিলেন। তিনি যখন ‘সারগ’ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন সৈন্যবাহিনীর অফিসারগণ অথাৎ আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা) ও তাঁর সাথীরা এসে ওমরের সাথে মিলিত হলেন। তাঁরা তাঁকে জানালেন শামেও মহামরী ছড়িয়ে পড়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, তখন হযরত ওমর (রা) আমাকে বলেন, সর্বপ্রথম হিজরতকারী মুহাজিরদেরকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে আস। আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তিনি তাদের সাথে পরামর্শ করলেন এবং বললেন, শাম রাজ্যে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিল। একদল বললেন, আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে বের হয়েছেন, ফিরে যাওয়া ঠিক হবে না। অন্যেরা বললেন, আপনার সাথে রাসূলুল্লাহ (স) -এর সাহাবী এবং আরো অনেকে রয়েছেন। তাদেরকে নিয়ে মহামারীগ্রস্ত এলাকায় যাওয়া ঠিক হবে না। হযরত ওমর (রা) বললেন, তোমরা উঠে যাও। এরপর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে বলেন, আনসারদেরকে ডেকে আন। আমি তাদেরকে ডেকে আনলাম এবং তাদের সাথে পরামর্শ করেন, তাঁরাও মুজাজিরদের পথ অনুসরণ করেন। তাঁদের মতই আনসারগণও সিদ্ধান্ত নিতে মত পার্থক্য করেন। হযরত ওমর (রা) বলেন, তোমরা আপাতত আমার নিকট হতে চলে যাও। এরপর তিনি বলেন, কুরাইশ মুহাজিদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ে শরীক হয়েছিল তাঁদেরকে ডাক। আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তাঁদের মধ্যে দুইজন মতভেদ করেননি। সবাই এক বাক্যে বলেন, লোকদের নিয়ে মহামারী আক্রান্ত এলাকায় না গিয়ে বরং ফিরে যাওয়াকেই আমরা যুক্তিসঙ্গত মনে করি। হযরত ওমর (রা) ঘোষাণা করেন, আমি সকাল বেলা রওয়ানা হব। জনতা যখন সকাল বেলা রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা) বলেন, আল্লাহর সুনির্ধারিত তাকদীর হতে আপনি পলায়ন করছেন? হযরত ওমর (রা) বলেন, হে আবু ওবায়দা! তুমি ছাড়া অন্য কেউ যদি এরূপ কথা বলতো তবে উপযুক্ত মনে করতাম। কিন্তু হযরত ওমর (রা) আবু ওবায়দার এই ভিন্ন মত ভাল মনে করেন না। যাই হোক, তিনি বলেন, হ্যাঁ আমরা আল্লাহর সুনির্ধারিত তাকদীর হতে আল্লাহ নির্ধারিত তাকদীরের দিকে পালায়ন করছি। দেখ! তোমার কাছে যদি উট থাকে তা নিয়ে কোন মাঠ বা উপত্যকায় তুমি চরাতে যাও আর সেই উপত্যকায় যদি দুটি অংশ থাকে একটি সবুজ-শ্যামল ও অপরটি ঘাস-পাতাহীন। এখন বল দেখি! যদি তুমি সবুজ-শ্যামল অংশে উট চরাও তবে কি তা আল্লাহর সুনির্ধারিত তাকদীর নয়? অথবা ঘাস-পাতাহীন অংশে যতি তোমর উট চারাও তাও কি আল্লাহর সুনির্ধারিত তাকদীর নয়? আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, ইতোমধ্যে আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা) এসে উপস্থিত হলেন। কোন দরকারে তিনি এতক্ষণে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা রয়েছে। আমি রাসূলুল্লাহ (স) -কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা কোন অঞ্চলে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার খবর পাবে, তখন সে অঞ্চলের দিকে পা বাড়াবে না। অপরদিকে কোন অঞ্চলে মহামারী দেখা দিয়েছে এবং তোমরা সেখানেই রয়েছ, এ অবস্থায় তোমরা সেখান হতে পালয়ন করবে না। এ হাদীস শুনে হযরত ওমর (রা) আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করেন এবং সেখান হতে প্রত্যার্বতন করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)


১৭৯৪. হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী করীম (স) হতে বর্ণনা করেছেন। নবী করীম (স) বলেন, “তোমার কোন অঞ্চলে মহামারীর কথা শুনলে সেখানে যেয়ো না। অপরদিকে, কোন অঞ্চলে মহামারীর প্রার্দুভাব হয়েছে এবং তোমরা সেখানে রয়েছ এমতাবস্থায় তোমরা সেখানে হতে বেরিয়ে এসো না। (বুখারী ও মুসলিম)


 

Was this article helpful?

Related Articles