সুসংবাদ ও মুবারকবাদ দেয়া মুস্তাহাব
[Note: এ অধ্যায়ের কুরআনের আয়াত গুলো পরে আপডেট করা হবে]
৭০৮. আবু ইবরাহীম অথবা আবু মুহাম্মাদ অথবা আবু মু’আবিয়া আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) খাদীজা (রা)-কে জান্নাতে মুক্তা নির্মিত একটি প্রাসাদের সুসংবাদ দিয়েছেন যাতে কোনরূপ প্রতিধ্বনি, শোরগোল বা ক্লেশ থাকবে না। (বুখারী, মুসলিম)
৭০৯. আবু মূসা আশ’আরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নিজের ঘরে উযু করে বেরিয়ে পড়লেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গ নিব এবং আমার পুরো দিনটি তাঁর সাথেই কাটাব। তিনি মসজিদে এসে সেখানে নবী (সা) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবীগণ ইশারায় বলেন, নবী (সা) ওদিকে গেছেন। আবু মূসা (রা) বলেন, আমি তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ করে রওনা করলাম এবং তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে করতে সামনে অগ্রসর হলাম। ততক্ষণে রাসূলুল্লাহ (সা) বীরে আরীসে (একটি কূপের নাম) প্রবেশ করেছেন। আমি দরজার কাছে বসে পড়লাম, রাসূলুল্লাহ (সা) নিজের প্রয়োজন সেরে উযু করলেন। আমি উঠে তাঁর দিকে গিয়ে দেখি তিনি আরীস কূপের উপর বসা। তিনি কূপের চত্বরে তাঁর উভয় হাঁটুর নিম্নদেশ অনাবৃত করে পা দু’টি কূপের মধ্যে ঝুলিয়ে দিয়ে বসে রয়েছেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তারপর ফিরে এসে দরজায় বসে পড়লাম। আমি মনে মনে বললাম, আজ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দ্বাররক্ষী হব। এমন সময় আবু বকর (রা) দরোজায় টোকা দিলেন। আমি বললাম, কে? তিনি বলেন, (আমি) আবু বকর। আমি বললাম, থামুন। আমি গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এই যে আবু বকর আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেনঃ তাকে অনুমতি দাও, সেই সাথে তাকে জান্নাতের সুসংবাদও জানিয়ে দাও। আমি ফিরে এসে আবু বকরকে বললাম, আসুন, আর হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ (সা) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। আবু বকর (রা) প্রবেশ করলেন এবং নবী (সা)-এর সাথে তাঁর ডান পাশে বসে পড়লেন। তিনিও তাঁর উভয় হাঁটুর নিম্নদেশ অনাবৃত করে কূপের গহ্বরে পা দু’টি ঝুলিয়ে দিলেন, যেরূপ রাসূলুল্লাহ (সা) করেছেন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম। আমি আমার ভাইকে ছেড়ে এসেছিলাম, তিনি তখন উযু করছিলেন এবং আমার পরপরই তার আসার কথা ছিল। আমি মনে মনে বললাম, যদি আল্লাহ তার মঙ্গল চান তাহলে এ মুহূর্তে তাকে নিয়ে আসবেন। এমন সময় কে যেন দরজা নাড়া দিল। আমি বললাম, কে? আগন্তুক বললেন, উমার ইবনুল খাত্তাব। আমি বললাম, থামুন। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে এসে তাকে সালাম জানালাম এবং বললাম, এই যে উমার আপনার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেনঃ তাঁকে অনুমতি দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। আমি উমারের নিকট এসে বললাম, রাসূলুল্লাহ (সা) আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন এবং আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন। উমার (রা) প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ (সা) এর বাম পাশে বসলেন। তিনিও কূপের চত্বরে বসে কূপের ভেতর পা দু’টি ঝুলিয়ে দিলেন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম আর মনে মনে বললাম, আল্লাহ যদি অমুকের অর্থাৎ তার ভাইয়ের কল্যাণ চান, তাহলে তাকে পাঠিয়েই দিবেন। এমন সময় এক লোক এসে দরজা নাড়া দিল। আমি বললাম, কে? তিনি বলেন, উসমান ইবনে আফফান। আমি বললাম, থামুন। আমি নবী (সা)-এর নিকট এসে তাঁকে উসমানের সংবাদ দিলাম। তিনি বলেনঃ তাঁকে অনুমতি দাও এবং কিছু বিপদ-মুসিবতের সাথে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি এসে বললাম, ভেতরে আসুন, রাসূলুল্লাহ (সা) আপনাকে কিছু বিপদ-মুসিবতের সাথে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনিও প্রবেশ করলেন। তিনি দেখলেন চত্বর পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তিনি অপর অংশের সামনের দিকে বসে পড়লেন। সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব (র) বলেন, তিনজনের এক জায়গায় বসার তাৎপর্য হলঃ তাঁদের কবর একই জায়গায় হবে, এটা ছিল তারই ইঙ্গিত।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর এক রেওয়ায়াতে আরো আছেঃ আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা) দ্বার রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ দিলেন। তাতে এও রয়েছেঃ উসমানকে সুসংবাদ দেয়া হলে তিনি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন এবং বললেন, আল্লাহ মদদগার ও সাহায্যকারী।
৭১০. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চারপাশে বসা ছিলাম। আবু বকর ও উমার (রা) আমাদের সাথে একই মজলিসে বসা ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের সামনে থেকে উঠলেন এবং বাইরে চলে গেলেন। আমাদের নিকট তাঁর ফিরতে বেশ বিলম্ব হল। আমাদের আশংকা হল, আমাদের অনুপস্থিতিতে তাঁর কোন বিপদ ঘটে না যায়। আমরা ঘাবড়ে গেলাম এবং সবাই উঠে পড়লাম। আমিই প্রথম ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। খুঁজতে খুঁজতে আমি বনী নাজ্জারের এক আনসারীর বাগানের বেষ্টনীর নিকট এসে পোঁছলাম। দরজার সন্ধানে আমি তার চর্তুদিকে ঘুরলাম, কিন্তু কোন দরজা পেলাম না। একটি ক্ষুদ্র নালা আমার চোখে পড়ল, যেটি বাইরের একটি কূপ থেকে বাগানের মধ্যে চলে গেছে। আমি সংকুচিত হলাম এবং (ঐ নালার মধ্য দিয়ে) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট হাযির হলাম। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ আবু হুরাইরা? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তা কি সংবাদ তোমার? আমি বললাম, আপনি আমাদের সাথে ছিলেন, অতঃপর সেখান থেকে উঠে চলে এলেন। আমাদের নিকট ফিরতে আপনার দেরি হতে থাকে। আমরা শংকিত হলাম যে, পাছে আমাদের অনুপস্থিতিতে আপনার কোন বিপদ ঘটে না যায়। আমরা তাই ঘাবড়ে গেলাম এবং আমিই সবার আগে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আমি এ বাগানের বেষ্টনী পর্যন্ত এসে পৌঁছলাম। আমি সংকুচিত হলাম, যেরূপ শৃগাল সংকুচিত হয়, তারপর বাগানে ঢুকলাম। অবশিষ্ট লোক আমার পেছনে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর জুতা জোড়া আমাকে দিয়ে বলেনঃ হে আবু হুরাইরা! আমার জুতা জোড়া নিয়ে যাও। এ বাগানের বাইরে গিয়ে যার সাথেই তোমার সাক্ষাত হবে সে যদি সাচ্চা দিলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) একথার সাক্ষ্য দেয়, তাহলে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। এরপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। (মুসলিম)
৭১১. ইবনে শুমাসা (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আমর ইবনুল আস (রা)-র নিকট হাযির হলাম। তিনি ছিলেন তখন মুমূর্ষু অবস্থায় মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর। তিনি বহুক্ষণ কাঁদলেন এবং তাঁর চেহারা দেয়ালের দিকে ফিরিয়ে নিলেন। তাঁর পুত্র তাঁর উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, আব্বাজান! রাসূলুল্লাহ (সা) কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ দেননি? অতঃপর তিনি মুখ ফিরিয়ে বলেন, আমাদের জন্য সর্বোত্তম পুঁজি হলঃ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল) একথার সাক্ষ্যদান। বস্তুত জীবনে আমি তিন তিনটি পর্যায় অতিক্রম করেছি। আমার জীবনের এমন একটি পর্যায়ও ছিল যখন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাইতে আর কারো প্রতি আমার এতো বেশি কঠোর বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছিল না। ঐ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত, তাহলে আমি নিশ্চিত জাহান্নামী হতাম। আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের আকর্ষণ জাগ্রত করে দিলেন তখন আমি নবী (সা)-এর নিকট এসে বললাম, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি অবশ্যই আপনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে চাই। নবী (সা) তাঁর ডান হাত দরায করে দিলেন। এবার আমি আমার হাত গুটিয়ে নিলাম। তিনি বলেনঃ কি ব্যাপার, হে আমর? আমি বললাম, আমি একটি শর্ত করতে চাই। তিনি বলেনঃ তা কি শর্ত করতে চাও তুমি? আমি বললাম, আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। তিনি বলেনঃ তোমার কি জানা নেই যে, ইসলাম তার পূর্বেকার যাবতীয় গুনাহ মিটিয়ে দেয়, হিজরাত তার পূর্বেকার সকল গুনাহকে ধ্বংস করে দেয় এবং হজ্জ তার পূর্বেকার যাবতীয় গুনাহ বিলীন করে দেয়? (যাই হোক, এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করলাম)। তখন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাইতে অধিক প্রিয় আমার নিকট আর কেউ রইল না। আমার চোখে তাঁর চাইতে মর্যাদাবানও আর কেউ থাকলো না। তাঁর অপরিসীম মর্যাদা-গাম্ভীর্যের দরুন আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারতাম না। ফলে আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা) এর আকৃতি-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তার বর্ণনা দিতেও আমি অক্ষম। কারণ আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে কখনো তাঁর দিকে তাকাইনি। এ অবস্থায় আমার যদি মৃত্যু হয়ে যেত, তবে আমার জান্নাতী হবার নিশ্চিত আশা ছিল। এরপর আমাদের অনেক যিম্মাদারি মাথায় নিতে হয়। জানি না, সেসব ব্যাপারে আমার অবস্থা কি দাঁড়ায়? যাই হোক আমি মৃত্যুবরণ করলে আমার জানাযায় যেন কোন বিলাপকারিনীও না থাকে এবং মশাল মিছিলও না হয়। তোমরা আমাকে যখন দাফন করবে, আমার কবরে অল্প অল্প করে মাটি ফেলবে, এরপর আমার কবরের চারপাশে এতটুকু সময় অবস্থান করবে, যে সময়ের মধ্যে উট যবাই করে তার গোশত বণ্টন করা যায়, যাতে আমি তোমাদের ভালোবাসা ও সান্নিধ্য লাভ করতে পারি এবং দেখি আমার প্রভুর দূতগণের সাথে কি ধরণের বাক্য বিনিময় করি। (মুসলিম)