মহান আল্লাহ বলেনঃ
‘তোমরা যে-কোনো ভালো কাজই করো, আল্লাহ সে বিষয়ে পুরোপুরি অবহিত। (সূরা বাকারাঃ ২১৫)
মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
তোমরা যে কোন ভালো কাজ কর, আল্লাহ তা জানেন। (সূরা বাকারাঃ ১৯৭)
মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
কোন ব্যক্তি বিন্দু পরিমাণ ভালো কাজ করলেও সে তা দেখতে পাবে। (সূরা যিলযালঃ ৭)
মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
যে ব্যক্তি ভালো কাজ করে, তা তার নিজের জন্যেই। (সূরা জাসিয়াঃ ১৫)
১১৭. হযরত আবু যার জুনদুব ইবনে জুনাদা (রা) বলেনঃ ‘আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ কাজটি সব চাইতে উত্তম?’ তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখা এবং তাঁর পথে জিহাদ করা।’ আমি জিজ্ঞেস করলামঃ ‘কোন্ গোলাম মুক্ত করা উত্তম?’ তিনি বললেনঃ ‘যে গোলাম তার মালিকের নিকট বেশি প্রিয় এবং যার মূল্যও বেশি।’ আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আমি যদি (দারিদ্র্যের কারণে) এ কাজ করতে সক্ষম না হই? তিনি বললেনঃ ‘কোনো কারিগরকে সাহায্য করবে অথবা এমন কোনো লোককে কাজটি শিখিয়ে দেবে, তা জানেনা।’ আমি জানতে চাইলামঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি মনে করেন, আমি যদি এই কাজও না করতে পারি?’ তিনি বললেনঃ ‘মানুষের ক্ষতি সাধন থেকে দূরে থাকো। কেননা সেটাও এমন একটা সদ্কা, যা তোমার পক্ষ থেকে তোমারই ওপর আরোপিত হয়।’ (বুখারী ও মুসলিম)
১১৮. হযরত আবু যার জুনদুব ইবনে জুনাদা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের যে কোন লোকেরই শরীরের প্রতিটি গ্রন্থির ওপর সাদকা (ওয়াজিব) হয়। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার— এসবের প্রতিটি (কথাই) এক একটি সদকা। সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজে নিষেধ করাও সাদকা। আর এসব চাশ্ত-এর (দুপুরের পূর্বের) দু’রাকাআত নামায পড়লেই আদায় হয়ে যায়। (মুসলিম)
১১৯. হযরত আবু যার (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার কাছে আমার উম্মতের ভালো ও মন্দ কাজ পেশ করা হয়েছে। তাতে আমি রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলাকে ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত দেখলাম। আর মসজিদে পতিত থুথু মাটিতে চাপা না দেয়াকে মন্দ কাজের অন্তর্ভুক্ত পেলাম। (মুসলিম)
১২০. হযরত আবু যার (রা) বর্ণনা করেনঃ (একদিন) কতিপয় লোক বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ধরবানরা তো সব সওয়াব নিয়ে গেল। তারা আমাদের মতোই নামায পড়ে, আমাদের মতোই রোযা রাখে; আবার তাদের উদ্বৃত্ত মাল থেকে সদকাও প্রদান করে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ কি তোমাদের জন্য এমন ব্যবস্থা করেননি যার মাধ্যমে তোমরা সাদকা করতে পার? জেনে রাখো, প্রতিবার সুবহানাল্লাহ বলা সাদকা; লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা সাদ্কা; এভাবে সৎকাজের আদেশ করা ও অসৎকাজ থেকে বারণ করা সাদ্কা, এমনকি, তোমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলনও সাদকা। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ যৌন চাহিদা মেটালে তাতেও সওয়াব হয়? তিনি প্রশ্ন করলেনঃ আচ্ছা, তোমাদের কেউ হারাম পন্থায় যৌন চাহিদা মেটালে তাতে তার গুনাহ হবে কিনা? (নিশ্চয়ই তার গুনাহ হবে) এভাবে হালাল পন্থায় এ কাজটি করলে তার সওয়াব হবে।’ (মুসলিম)
১২১. হযরত আবু যার (রা) বর্ণনা করেন, আমাকে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন সৎ কাজকে তুচ্ছ মনে করো না, সেটা তোমার ভাই-এর সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করার কাজ হলেও নয়। (মুসলিম)
১২২. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘সূর্যোদয় হয় এমন প্রতিটি দিন মানব দেহের প্রতিটি জোড়া তথা গ্রন্থির ওপর সাদকা ওয়াজিব হয়। তুমি দু’টি মানুষের মধ্যে যে ন্যায়বিচার করো, তা সাদকা। তুমি মানুষকে তার ভারবাহী পশুর ওপর চড়িয়ে দিয়ে কিংবা তার ওপর মালপত্র তুলে দিয়ে যে সাহায্য করো, তাও সাদকা। (এমনিভাবে) কাউকে ভালো কথা বলাও সদকা। নামাযের দিকে যাওয়ার সময় তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ সাদকা। রাস্তা থেকে তুমি যে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেল, তাও সাদকা। (বুখারী ও মুসরিলম)
ইমাম মুসলিম এই একই হাদীস হযরত আয়েশা (রা)-র সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি বনী আদমকে তিনশ’ ষাটটি গ্রন্থির সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করে, তাঁর প্রশংসা ও তারিফ করে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে, সুবহানাল্লাহ বলে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, লোকদের চলাচলের পথ থেকে পাথর, কাঁটা, হাড় ইত্যাদি সরিয়ে ফেলে কিংবা ভালো কাজের আদেশ করে ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রেখে (এগুলো সংখ্যায় তিনশ’ ষাটে উপনীত হয়)। এহেন ব্যক্তির সারাটা দিন এভাবে অতিবাহিত হয় যে, সে যেন নিজেকে দোযখের আগুন থেকে দূরে বাঁচিয়ে রাখল।
১২৩. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় মসজিদে যায় আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে সকালে বা সন্ধ্যায় মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
১২৪. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘হে মুসলিম নারীগণ! কোন মহিলা যেন তার প্রতিবেশী মহিলাকে হাদিয়া বা সাদকা দিতে অবজ্ঞা না করে, এমনকি তা ছাগলের খুর হলেও।
১২৫. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমানের সত্তরের কিছু বেশি কিংবা ষাটের কিছু বেশি শাখা আছে; তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলা আর নিম্নতম হলো (চলাচলের) পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাও ঈমানের একটি শাখা। (বুখারী ও মুসলিম)
১২৬. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জনৈক ব্যক্তি একটি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে তার খুব তৃষ্ণা লাগল। এমনি অবস্থায় সে একটি (অগভীর) কূয়া দেখতে পেল। লোকটি তাতে নেমে পানি পান করে বেরিয়ে এসে দেখল, একটি কুকুর পিপাসায় অস্থির হয়ে জিহ্বা বের করছে এবং ভিজামাটি চাটছে। লোকটি ভাবল, আমি যেমন পিপাসার্ত হয়েছিলাম, তেমনি এ কুকুরটিও পিপাসায় কাতরাচ্ছে। তাই সে কুয়ায় নেমে তার মোজায় পানি ভরে নিজের মুখ দিয়ে ধরে কুয়া থেকে উঠে এল। তারপর সে কুকুরটিকে পানি পান করিয়ে তাকে তৃপ্ত করল। এতে আল্লাহ তার প্রতি দয়া প্রদর্শন করলেন এবং তার গুনাহসমূহ মাফ করে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! পশুদের উপকার করলেও কি আমাদের সওয়াব হবে?’ তিনি বললেন প্রতিটি প্রাণীর ব্যাপারেই সওয়াব আছে।’ (বুখারী ও মুসলিম)
বুখারীর অপর এক বর্ণনায় উল্লেখিত হয়েছে, আল্লাহ তার প্রতি দয়া প্রদর্শন করলেন, তাকে মাগফিরাত দান করলেন এবং জান্নাতে স্থান দিলেন।
বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় উল্লেখিত হয়েছেঃ একদা একটি কুকুর (অস্থিরভাবে) চারদিকে ঘুরছিল। কুকুরটির পিপাসায় মরে যাবার উপক্রম হয়েছিল। এমন সময় বনী ইসরাইলের এক ব্যাভিচারী নারী তাকে দেখতে পেল। সে নিজের মোজা খুলে কুয়া থেকে পানি তুলে কুকুরটিকে পান করালো এবং এ জন্যে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো।
১২৭. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি এমন এক ব্যক্তিকে জান্নাতে চলাফেরা করতে দেখেছি, যে একটা রাস্তার ওপর থেকে একটা গাছ কেটে সরিয়ে ফেলেছিল। কেননা, সেটা মুসলিম পথচারীদেরকে কষ্ট দিচ্ছিল। (মুসলিম) মুসলিমের অপর এক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছেঃ এক ব্যক্তি রাস্তার ওপর দিয়ে চলার সময় একটি কাঁটা গাছের ডাল পথের মাঝখান থেকে সরিয়ে ফেলল। এতে আল্লাহ সুবহানাহু তাঁর ওপর দয়া করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
১২৮. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খুব ভালভাবে অযু করে, তারপর মসজিদে এসে চুপচাপ খুতবা শোনে, তার এক জুমআ থেকে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত এবং তারপরও তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (খুতবার সময়) হাত দিয়ে কোন পাথর খণ্ড নাড়াচাড়া করে, সে গর্হিত কাজ করে। (মুসলিম)
১২৯. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম কিংবা মুমিন বান্দা অযু করতে গিয়ে যখন তার মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সঙ্গে কিংবা পানির শেষ ফোঁটর সঙ্গে তার মুখমণ্ডল থেকে এমন প্রতিটি গুনাহ ঝরে যায়, যা সে চোখের দৃষ্টি দ্বারা করেছে। এরপর যখন সে তার দু’হাত ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে তার হাত থেকে এমন প্রতিটি গুনাহ ঝরে যায়, যা সে হাত দ্বারা করেছে; এমন কি, তার হাত গুনাহ থেকে একেবারে পরিস্কার হয়ে যায়। তারপর যখন সে তার পা দু’টি ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ ফোঁটার সঙ্গে তার পায়ের এমন প্রতিটি গুনাহ ঝরে যায়, যা সে পা দ্বারা সম্পন্ন করেছে। এমন কি, তার পা (সমস্ত সগীরা) গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। (মুসলিম)
১৩০. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্তের নামায, এক জুমআ থেকে আরেক জুমআ এবং এক রমযান থেকে আরেক রমযানের মধ্যবর্তী দিনগুলোর ছোটখাট গুনাহের কাফফারায় পরিমাণ হয়, যদি বড় বড় গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকা হয়। (মুসলিম)
১৩১. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে সেই কাজটির কথা বলবো না, যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের গুনাহসমূহ দূর করে দেন এবং তোমাদের মর্যাদা সমুন্নত করে? সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি অবশ্যই বলুন। তিনি বললেনঃ দুঃখ কষ্টের সময় সুন্দরভাবে অযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি হেঁটে যাওয়া এবং এক নামাযের পর পরবর্তী নামযের জন্য অপেক্ষা করা। আর এটাই হলো তোমাদের জন্য ‘রিবাত’ (বা জিহাদ)। (মুসলিম)
১৩২. হযরত আবু মূসা আশ্আরী (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে জান্নাতে প্রবেশ করল যে ব্যক্তি ফজর ও আসরের নামায (যথারীতি) আদায় করল। (বুখারী ও মুসলিম)
১৩৩. হযরত আবু মূসা আশ্আরী (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা সফর করে তখন সুস্থ ও গৃহবাসী অবস্থায় যে পরিমাণ কাজ করত, সেই পরিমাণ কাজের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়। (বুখারী)
১৩৪. হযরত জাবির (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিটি ভালো কাজই হলো সাদকা। (বুখারী)
ইমাম মুসলিম হতে হযরত হুযায়ফা (রা) সূত্রে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
১৩৫. হযরত জাবির (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন মুসলিম কোন (ফলের) গাছ লাগালে তা থেকে যা কিছু খাওয়া হোক, সেটা তার জন্য সাদকা হবে আর তা থেকে কিছু চুরি হলে এবং কেউ তার ক্ষতি করলে সেটাও তার জন্য সাদকা হিসেবে গণ্য হবে। ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ মুসলমান যে কোন গাছই রোপণ করুক না কেন, তা থেকে মানুষ, পশু ও পাখিরা যা কিছু খায়, কিয়ামত পর্যন্ত তা তার জন্য সাদকা হিসেবে অব্যাহত থাকে। মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ মুসলমান যে কোন গাছ লাগায় ও যেকোন চাষাবাদ করে এবং তা থেকে মানুষ, পশু ও অন্যরা যা কিছু খেয়ে ফেলে, তা তার জন্য সাদকা হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৩৬. হযরত জাবির (রা) বর্ণনা করেন, বনু সালেমার লোকেরা মসজিদে নববীর নিকট স্থানান্তরিত হওয়ার আকাংখা ব্যক্ত করল। এ খবর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছলে তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমার নিকট খবর এসেছে যে, তোমরা নাকি মসজিদের নিকট স্থানান্তরিত হতে চাও? তারা বললো, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এরূপ ইচ্ছাই পোষণ করছি।’ তিনি বললেনঃ ‘বনু সালেমা! তোমরা ঘরেই থাকো, তোমাদের পদচিহ্ন লেখা হয়’; তোমার ঘরেই থাকো, তোমাদের পদচিহ্ন লেখা হয়’। (মুসলিম)
অপর এক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছেঃ প্রতিটি পদক্ষেপে একটি মর্যাদা উন্নীত হয়। ইমাম বুখারী হযরত আনাস (রা)-এর সূত্রে এরই সমার্থক একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
১৩৭. হযরত উবাই ইবনে কা’ব বর্ণনা করেনঃ এক ব্যক্তি মসজিদ থেকে একটু দূরে বাস করত (এবং সে এমন ছিল যে) তার চেয়ে আর কেউ মসজিদ থেকে অতদূরে থাকত বলে আমি জানতাম না। সে কখনো (নামাযের) জামাআত হারাতো না। তাকে বলা হলো (অথবা আমি তাকে বললাম), ‘তুমি একটি গাধা খরিদ করে তার পিঠে চেপে দিনে ও রাতে, অন্ধকারে ও গরমে মসজিদে আসতে পারো।’ সে বললো, মসজিদের নিকটে আমার বাড়ির অবস্থান আমার নিকটে ভালো লাগে না। আমি বরং চাই যে, মসজিদে আমার আসা এবং পরিবারের নিকট ফিরে যাওয়া- এসবই আল্লাহর দরবারে লিখিত হোক। এতে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘আল্লাহ এসবই তোমার জন্য ব্যবস্থা করে রেখেছেন।’
ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
অপর এক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছেঃ তোমার জন্যে সেসব কিছুই রয়েছে, যেগুলোকে তুমি সওয়াব মনে করছো।
১৩৮. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে ‘আস্ (রা) বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চল্লিশটি ভালো কাজের মধ্যে উচ্চতম কাজ হলো দুধ পান করার জন্য কাউকে উষ্ট্রী ধার দেয়া। যে ব্যক্তি এ চল্লিশটি কাজের কোনটি সওয়াবের প্রত্যাশায় করে এবং তার সাথে সম্পৃক্ত ওয়াদাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। (বুখারী)
১৩৯. হযরত ‘আদী ইবনে হাতিম (রা) বলেনঃ আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ‘(তোমারা) আগুন থেকে বাঁচো, তা একটা খেজুরের অর্ধেকটা দান করে হলেও।’ (বুখারী ও মুসলিম)
বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘তোমাদের প্রত্যেকের সাথে তার প্রভু (রব্ব) অচিরেই কথা বলবেন এমন অবস্থায় যে, উভয়ের মধ্যে কোন মাধ্যম বা দোভাষী থাকবে না। মানুষ তার ডান দিকে তাকালে নিজের কৃতকর্মই দেখতে পাবে। বাম দিকে তাকালেও নিজের কৃতকর্মই দেখতে পাবে। আর সামনে তাকালে তো তার মুখের সামনে আগুনই দেখতে পাবে। কাজেই একটা খেজুরের অর্ধেকটা দান করে হলেও তোমরা আগুন থেকে বাঁচো। আর কোন ব্যক্তি তাও না পারলে অন্তত ভালো কথা দ্বারা (আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করবে)।
১৪০. হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ নিশ্চতই তাঁর বান্দার প্রতি এজন্য সন্তুষ্ট হন যে, সে কোনো কিছু খেয়ে তাঁর প্রশংসা করে অথবা কোন কিছু পান করে তাঁর প্রশংসা করে অর্থ্যাৎ আলহামদুলিল্লাহ বলে। (মুসলিম)
১৪১. হযরত আবু মূসা (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘প্রতিটি মুসলিমের ওপর সাদকা (দান-খয়রাত) ওয়াজিব।’ জনৈক সাহাবী বললেনঃ ‘কিন্তু সে যদি (সাদকাহ) দেওয়ার কোন কিছু না পায়? তিনি বললেনঃ ‘তাহলে সে নিজ হাতে কাজ করে নিজেকে লাভবান করবে এবং সাদকাও দেবে।’ আর সে যদি তাও না পারে? তিনি বললেনঃ তাহলে সে দুঃস্থ ও অভাবী লোকদের সাহায্য করবে। সাহাবী বললেনঃ সে যদি তাও না পারে? তিনি বললেনঃ তাহলে সে (লোকদেরকে) ভালো কাজের আদেশ করবে। সাহাবী বললেনঃ যদি সে এটাও না করতে পারে? তিনি বললেনঃ তাহলে সে অন্তত নিজেকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। কেননা, এটাও তার জন্য সাদকাহ। (বুখারী ও মুসলিম)