মহান আল্লাহ বলেনঃ
‘আর তাদেরকে এই মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা যেন আল্লাহর দ্বীনের প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে কেবল তাঁরই বন্দেগী করে; আর তারা যেন (একাগ্রচিত্তে) নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে আর এটাই হলো সঠিক ও সুদৃঢ় বিধান।’ (সূরা বাইইয়্যেনাহঃ ৫)
তিনি আরো বলেনঃ
তোমাদের (কুরবানীর পশুর) গোশত ও রক্ত কোনটাই আল্লাহর নিকট পৌঁছে না, তাঁর নিকট পৌঁছে শুধু তোমাদের পরহেজগারী। (সূরা হজ্বঃ ৩৭)
তিনি আরো বলেনঃ
হে নবী! লোকদেরকে বলে দাও, তোমরা কোন বিষয় মনে গোপন রাখো কিংবা প্রকাশ করো, তা সবই আল্লাহ জানেন। (সূরা আলে-ইমরানঃ ২৯)
১. আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনে খাত্তাব (রা) বর্ননা করেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সকল কাজের প্রতিফল কেবল নিয়্যাতের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তিই নিয়্যাত অনুসারে তার কাজের প্রতিফল পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সন্তুষ্টির) জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। পক্ষান্তরে যার হিজরত দুনিয়া হাসিল করা কিংবা কোন নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে সম্পন্ন হবে, তার হিজরত সে লক্ষ্যেই নিবেদিত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
২. উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ একটি সেনাদল কাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আক্রমণ চালাতে যাবে। তারা যখন সমতল ভূমিতে পৌঁছবে, তখন তাদেরকে সামনের ও পিছনের সমস্ত লোকসহ ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। হযরত আয়েশা (রা) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে আগের ও পরের সমস্ত লোকসহ তাদেরকে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে? যখন তাদের মধ্যে অনেক শহরবাসী থাকবে এবং অনেকে স্বেচ্ছায় ও সানন্দে তাদের মধ্যে শামিল হবে না? রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আগের ও পরের সমস্ত লোককেই ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর লোকদের নিয়্যাত অনুসারে তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম) এখানে শব্দাবলী শুধু বুখারী থেকে উদ্বৃত করা হয়েছে।
৩. হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত করার অবকাশ নেই। তবে জিহাদ ও নিয়্যাত অব্যাহত রয়েছে। তোমাদেরকে যখন জিহাদের জন্য ডাক দেয়া হবে, তখন তোমরা অবশ্যই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়বে। (বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীসের তাৎপর্য এই যে, এখন আর মক্কা মুয়াজ্জমা থেকে হিজরত করার কোন প্রয়োজন নেই। এই কারণে যে, মক্কা এখন দারুল ইসলামে পরিণত হয়েছে।
৪. হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আল-আনসারী (রা) বর্ণনা করেন, আমরা রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক যুদ্ধে শরীক হলাম, তিনি বললেন, মদীনায় এমন কিছু লোক রয়েছে, তোমরা যেখানেই সফর কর এবং যে উপত্যকায় অতিক্রম কর, তারা তোমাদেরই সঙ্গে থাকে। রোগ-ব্যাধি তাদেরকে আটকে রেখেছে। (মুসলিম) অন্য বর্ণনা মতে, তারা সওয়াবে তোমাদের সাথেই শরীক থাকবে। ইমাম বুখারী এই হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে এভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর তিনি বললেনঃ আমাদের পিছনে মদীনায় এমন কিছু লোক রয়ে গেছে, যারা আমাদের সাথেই রয়েছে, তবে কোন উপত্যকা বা ঘাঁটি অতিক্রমকালে তারা আমাদের সাথে আসেনি। এক ধরনের ওজর তাদেরকে আটকে রেখেছে।
৫. হযরত মা’ন ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আখ্নাস বর্ণনা করেনঃ (মা’ন, তার পিতা, দাদা সবাই সাহাবী ছিলেন) আমার পিতা ইয়াযীদ সদকা করার জন্য কিছু দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) বের করলেন এবং মসজিদে গিয়ে এক ব্যক্তিকে তা দিয়ে দিলেন। আমি লোকটির কাছ থেকে তা ফেরত নিয়ে আমার পিতার কাছে চলে এলাম। আমার পিতা বললেনঃ আল্লাহর কসম! এটা তো আমি তোমাকে দেয়ার মনস্থ করিনি। এরপর আমরা এ বিষয়টাকে রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পেশ করলাম। তিনি বলেনঃ হে ইয়াযীদ! তুমি তোমার নিয়্যাতের সওয়াব পেয়ে গেছো আর হে মা’ন! তুমি যে মাল নিয়েছ, তা তোমারই। (বুখারী)
৬. হযরত আবু ইসহাক সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা) বর্ণনা করেনঃ আমি বিদায় হজ্জের বছরে খুব কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার খোঁজ-খবর নিতে এলেন। আমি নিবেদন করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার রোগের তীব্রতা আপনি লক্ষ্য করছেন। আমি অনেক ধন-মালের অধিকারী। কিন্তু আমার উত্তরাধিকারী শুধুমাত্র আমার মেয়েই। এমতাবস্থায় আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদকা করে দিতে পারি? রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘না’। আমি নিবেদন করলামঃ ‘তাহলে অর্ধেক পরিমাণ (দান করে দেই) তিনি বললেনঃ না। আমি পুনরায় নিবেদন করলামঃ ‘তাহলে এক-তৃতীয়াংশ (দান করে দেই)? তিনি বললেনঃ ‘হাঁ’, এক-তৃতীয়াংশ দান করতে পার’। অবশ্য এটাও অনেক বেশি অথবা বড়। তোমাদের উত্তরাধিকারীগণকে একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় না রেখে তাদেরকে বিত্তবান অবস্থায় রেখে যাওয়াই শ্রেয়, যেন তাদেরকে মানুষের সামনে হাত পাততে না হয়। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছুই ব্যয় করবে, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুলে দিবে, তার সবকিছুরই সওয়াব (প্রতিদান) তোমাকে দেওয়া হবে। এরপর আমি (বর্ণনাকারী আবু ইসহাক) বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার সঙ্গী সাথীগণের (মদীনায়) চলে যাবার পর আমি কি পিছনে (মক্কায়) থেকে যাবো? তিনি বললেনঃ পিছনে থেকে গেলে তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কাজই করবে, তাতে তোমার সম্মান ও মর্যাদা অত্যন্ত বেড়ে যাবে। আশা করা যায়, তুমি দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। ফলে কিছু লোক তোমার দ্বারা উপকৃত হবে, আবার অন্য কিছু লোক তোমার দ্বারা কষ্ট পাবে। হে আল্লাহ! আমার সাহাবীদের হিজরত পূর্ণ করে দাও এবং তাদেরকে ব্যর্থতার কবল থেকে রক্ষা কর। তবে সা’দ ইবনে খাওলা যথার্থই কৃপার পাত্র। মক্কায় তাঁর মৃত্যু ঘটলে রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মর্মে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন যে, তিনি হিজরতের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হন। (বুখারী ও মুসলিম)
৭. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ননা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের চেহারা ও দেহের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তোমাদের অন্তর ও কর্মের প্রতি লক্ষ্য আরোপ করেন। (মুসলিম)
৮. হযরত আবু মুসা আশ’আরী (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ এক ব্যক্তি শৌর্য-বীর্য প্রদর্শনের জন্য, এক ব্যক্তি আত্মগৌরব ও বংশীয় মর্যাদার জন্য এবং অপর এক ব্যক্তি লোক দেখানের জন্য লড়াই করে। এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করে? রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি কেবল আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার জন্য লড়াই করে সে-ই আল্লাহর পথে রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
৯. হযরত আবু বাকরাহ নুফাই’ ইবনে হারিস সাকাফী (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন দু’জন মুসলমান তরবারী কোষমুক্ত করে পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামের যোগ্য হয়ে যায়। আমি নিবেদন করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামের হকদার হওয়াটাতো বুঝলাম; কিন্তু নিহত ব্যক্তির জাহান্নামী হওয়ার কারণটা কী? রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কারণটা হলো এই যে, সেও তো তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে চেয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)
১০. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পুরুষদের পক্ষে জামা’য়াতে নামায আদায় করার সওয়াব তার ঘরে ও বাজারে নামাজ পড়ার চেয়ে পঁচিশ গুণ বেশি। এই কারণে যে, কোনো ব্যক্তি যখন খুব ভালভাবে ওযু করে নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করে এবং নামাজ ছাড়া তার মনে আর কোন উদ্দেশ্য থাকে না, তখন মসজিদে প্রবেশ না করা পর্যন্ত তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি গুনাহও মাফ হয়ে যায়। মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকে, ততক্ষণ সে নামাযের অনুরূপ সওয়াবই পেতে থাকে। আর যে ব্যক্তি নামায আদায়ের পর কাউকে কষ্ট না দিয়ে অযুসহ মসজিদে অবস্থান করে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার মার্জনার জন্য এই বলে দো’আ করতে থাকেঃ হে আল্লাহ! একে তুমি ক্ষমা করে দাও; হে আল্লাহ এর তওবা কবুল কর; হে আল্লাহ! এর প্রতি তুমি দয়া প্রদর্শন করো। (বুখারী ও মুসলিম)
১১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহিমান্বিত প্রভুর সূত্রে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা সৎকাজ ও পাপ কাজের সীমা চিহ্নিত করে দিয়েছেন এবং সেগুলোর বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে বিবৃত করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজে সংকল্প ব্যক্ত করেও এখন পর্যন্ত তা সম্পাদন করতে পারেনি, আল্লাহ তার আমলনামায় একটি পূর্ণ নেকী লিপিবদ্ধ করার আদেশ দেন। আর সংকল্প পোষণের পর যদি উক্ত কাজটি সম্পাদন করা হয়, তাহলে আল্লাহ তার আমলনামায় দশটি নেকী থেকে শুরু করে সাত শো, এমনকি তার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি নেকী লিপিবদ্ধ করে দেন। আর যদি সে কোনো পাপ কাজের ইচ্ছা পোষণ করেও তা সম্পাদন না করে, তবে আল্লাহ তার বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি পূর্ণ নেকী লিপিবদ্ধ করেন। আর যদি ইচ্ছা পোষণের পর সেই খারাপ কাজটি সে করেই ফেলে, তাহলে আল্লাহ তার আমলনামায় শুধু একটি পাপই লিখে রাখেন। (বুখারী ও মুসলিম)
১২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ পুর্বেকার যুগে তিন ব্যক্তি কোথাও যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বৃষ্টি এসে পড়ল। তারা রাত কাটানোর জন্য একটি পর্বত গুহায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হলো কিন্তু তারা গুহায় প্রবেশ করার সাথে সাথে একটি পাথর খণ্ড গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা স্থির করল যে, তাদের নেক আমলকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দো’আ করলে এই কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। তাদের একজন দো’আ করলঃ হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা অত্যন্ত বৃদ্ধ। আমি আমার পরিবার-পরিজনের আগেই তাদেরকে দুধ পান করাতাম। একদিন আমায় জ্বালানী কাঠের সন্ধানে অনেক দূরে যেতে হলো। আমি যখন রাতে বাড়ি ফিরে এলাম, তখন আমার পিতা-মাতা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আমি দুধ নিয়ে যথারীতি তাদের কাছে গিয়ে দেখি, তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাদেরকে জাগিয়ে তোলা আমি সমীচীন মনে করলাম না। আবার তাদের খাওয়ার পূর্বেই পরিবারের লোকদের দুধ পান করানোও সঙ্গত মনে হলো না। আমি দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে রাতভর পিতা-মাতার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা আমি সঙ্গত মনে করলাম না। এদিকে বাচ্চারা আমার পায়ের কাছে বসে ক্ষুধায় কাঁদছিল। এই অবস্থায় সকাল হয়ে গেল এবং তারা ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। আমি তাদরেকে দুধ পান করালাম। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে আমার ওপর থেকে পাথরের এই বিপদ দূর করে দাও। এতে পাথর খণ্ড কিছুটা দূরে সরে গেল বটে, কিন্তু গুহা থেকে কেউ বেরিয়ে আসতে পারল না।
অপর ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল; আমার কাছে তাকে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি সুন্দরী বলে মনে হতো। (এক বর্ণনা মতে) তার সাথে আমার অসামান্য ভালোবাসা ছিল। পুরুষ নারীকে যতটা ভালবাসতে পারে, আমি ততটাই তাকে ভালবাসতাম। আমি তার সঙ্গে কামনা চরিতার্থ করার আকাঙ্খা ব্যক্ত করলাম। কিন্তু সে এতে সম্মত হলো না। অবশেষে এক দুর্ভিক্ষের বছরে সে দুর্বল হলে আমার নিকট এলো। আমি তাকে আমার সাথে নির্জনে মিলনের শর্তে একশো বিশটি স্বর্ণমুদ্রা (দিনার) দিলাম। আমার প্রস্তাবে সে সম্মত হলো। আমি তখন তাকে নিয়ন্ত্রণে নিলাম। অন্য বর্ণনা মতে আমি যখন তার দুই হাঁটুর মাঝখানে বসলাম, তখন সে কম্পিত কন্ঠে বললঃ ‘ওহে! তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং অবৈধভাবে আমার সতীত্ব নষ্ট করো না।’ আমি তৎক্ষণাৎ মেয়েটিকে ছেড়ে চলে গেলাম। অথচ আমি মেয়েটিকে তীব্রভাবে ভালোবাসতাম। আমি তাকে যে স্বর্ণ মুদ্রা দিয়েছিলাম তাও ফেলে এলাম। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে এই বিপদ থেকে আমাদেরকে মুক্তি দান করো। এর ফলে পাথর খণ্ডটি আরও কিছুটা সরে গেল। কিন্তু এতেও তারা বের হতে পারল না।
তৃতীয় ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহ! আমি কয়েকজন শ্রমিককে কাজে লাগিয়েছিলাম। আমি তাদেরকে যথারীতি পারিশ্রমিক দিলাম। কিন্তু একজন শ্রমিক তার পারিশ্রমিক কম ভেবে তা না নিয়েই চলে গেল। আমি তার পারিশ্রমিককে ব্যবসায়ে নিয়োগ করলাম। এতে তার পারিশ্রমিকের অংক অনেক বেড়ে গেল। কিছুদিন পরে লোকটি ফিরে এলো। এসে আমায় সম্বোধন করে বললঃ হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে আমার প্রাপ্য পারিশ্রমিকটা দিয়ে দাও। আমি বললামঃ সামনে যত উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ও চাকর-বাকর দেখছো, সবই তোমার পারিশ্রমিক। সে বললঃ হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করো না। আমি তাকে বললামঃ আমি তোমার সাথে মোটেই ঠাট্টা করছি না। এরপর সে সব মালামাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই রেখে গেল না। হে আল্লাহ! আমি যদি তোমার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজ করে থাকি, তাহলে আমাদের থেকে এ বিপদটা দূর করে দাও। এরপর গুহার মুখ থেকে পাথর খণ্ডটি সরে গেল এবং তারা সকলেই বের হয়ে আপন গন্তব্যের দিকে চলে গেল। (বুখারী ও মুসলিম)