পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা নিয়োগ করে চেষ্টা সাধনা করার বিবরণ

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেনঃ

যারা আমার জন্যে চেষ্টা-সংগ্রামে নিরত থাকবে, তাদেরকে আমি আমার পথ দেখাবো। আর আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই সৎকর্মশীল লোকদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আন্‌কাবুতঃ ৬৯)

মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

তুমি তোমার প্রভুর ইবাদত করো। সেই মুহূর্ত (মৃত্যু) পর্যন্ত, যা তোমার নিকট নিশ্চিতভাবে আসবেই। (সূরা হিজরঃ ৯৯)

মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

তুমি তোমার প্রভুর নাম স্মরণ করতে থাকো এবং অন্য সবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে শুধুমাত্র তাঁরই দিকে মনোনিবেশ করে। (সূরাঃ মুয্‌যাম্মিলঃ ৮)

মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

অতঃপর কোন ব্যক্তি বিন্দু পরিমান ভালো কাজ করলেও তা (সে) দেখতে পাবে। (সূরা যিল্‌যালঃ ৭)

মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

আর যে কোন ভালো কাজ তোমরা আগে করে রাখবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম ও বিপুল বিনিময়রূপে পাবে। (সূরা মুয্‌যাম্মিলঃ ২০)

মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ

তোমরা যে উত্তম কাজই করো, তা আল্লাহ খুব ভাল করে জানেন। (সূরা বাকারাঃ ২৭৩)

 

৯৫. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার আলী (বন্ধু) কে কষ্ট দেয়, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দাহ আমার নির্ধারিত ফরজ কাজের মাধ্যমে, যা আমার নিকট প্রিয় তার মাধ্যমে এবং নফল কাজের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। এভাবে (এক পর্যায়ে) আমি তাকে ভালোবাসতে থাকি। আর আমি যখন তাকে ভালোবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধারণ করে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটা-চলা করে। আর যদি সে আমার নিকট কিছু প্রার্থনা করে, আমি তা পূরণ করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দান করি। (বুখারী)


৯৬. হযরত আনাস (রা) রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ বান্দাহ যখন আমার দিকে এক বিঘৎ পরিমান এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত পরিমান এগিয়ে যাই। আর যখন সে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর যখন সে আমার কাছে পায়ে হেঁটে আসে, আমি তার কাছে ছুটে চলে যাই। (বুখারী)


৯৭. হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দুটি নিয়ামত (আল্লাহর দান)-এর ব্যাপারে দুনিয়ায় বহু লোক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে; তা হলো দৈহিক স্বাস্থ্য ও অবসর কাল। (বুখারী)


৯৮. হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা এত বেশি ইবাদত করতেন যে, তার ফলে তাঁর পবিত্র পদযুগল পর্যন্ত ফুলে ফেটে যেত। একদিন আমি তাঁকে বললামঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এত কষ্ট করছেন কেন, আল্লাহ তো আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ তাই বলে আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়া পছন্দ করবো না?’ (বুখারী ও মুসলিম)

হাদীসটিতে উদ্ধৃত শব্দাবলী বুখারীর। বুখারী ছাড়া মুসলিমেও মুগীরা ইবনে শু’বার সূত্রে অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।


৯৯. হযরত আয়েশা (রা) বলেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র রমযানের শেষ দশক এলে রাতভর জেগে ইবাদত করতেন এবং আপন পরিবারবর্গকেও জাগিয়ে দিতেন। এ সময় তিনি শক্তভাবে ইবাদতে মশগুল থাকতেন (অর্থ্যাৎ পুরো প্রস্তুতি নিয়ে গোটা সময়টা ইবাদতে ব্যয় করতেন।)


১০০. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘শক্তিমান মু’মিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক ভালো ও অধিক প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ ও মঙ্গল (চেতনা) রয়েছে। তোমার জন্য যা উপকারী, তার জন্য আগ্রহ পোষণ করো এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। আর (কোন ব্যাপারে) দুর্বলতা প্রদর্শন করো না; আর কখনো বিপদ এলে একথা বলো না যে, আমি এইরূপ কাজ করলে ঐরূপ হতো; বরং একথা বলো যে, আল্লাহ (আমার) তকদীরে এটাই রেখেছেন এবং তাঁর যা ইচ্ছা তা-ই করেন। কেননা, ‘যদি’ শব্দটি শয়তানী কাজের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়। (মুসলিম)


১০১. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জাহান্নামকে লোভনীয় জিনিস দ্বারা আড়াল করে রাখা হয়েছে। আর জান্নাতকে রাখা হয়েছে দুঃখ কষ্টের আড়ালে। (বুখারী ও মুসলিম)


১০২. হযরত আবু আবদুল্লাহ হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রা) বলেনঃ আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক রাতে নামায পড়েছি। তিনি সূরা বাকারার তিলাওয়াত শুরু করলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, তিনি হয়তো একশো আয়াত পড়ে রুকুতে যাবেন। কিন্তু তিনি একশো আয়াতের পরও পড়তে লাগলেন। আমি ভাবলাম, তিনি হয়তো গোটা সূরাটি এক রাক্‌আতেই পড়ে শেষ করবেন। তিনি এক নাগাড়ে পড়তে লাগলেন। এক পর্যায়ে ভাবলাম, তিনি হয়তো এর পরই রুকুতে যাবেন। কিন্তু (বাকারার সমাপ্তির পর) তিনি সূরা আলে ইমরান তেলাওয়াত শুরু করলেন। তিনি ধীরে ধীরে ‘তারতিলে’র সাথে পড়ছিলেন। উল্লেখ্য, আল্লাহর তাসবীহ বা গুণাবলী সম্পন্ন কোন আয়াত পড়লে তিনি যথারীতি তবসীহই পড়তেন। আর কোন আয়াতে চাওয়ার কিছু থাকলে সেখানে তিনি আল্লাহর কাছে চাইতেন। আবার (কোন ক্ষতি থেকে) যখন আশ্রয় প্রার্থনার মতো কোন আয়াত পড়তেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। এরপর তিনি রুকুতে গিয়ে বলতে থাকলেন, ‘সুবহা-না রাব্বিয়াল ‘আজীম’ (আমার মহান প্রভু পবিত্র)।   তাঁর রুকুও ছিল কিয়ামের (দাঁড়িয়ে সূরা বাকারা পড়ার) মতোই দীর্ঘ। এরপর তিনি ‘সামিআল্লাহহু লিমান হামিদাহ’ (যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তার প্রশংসা শোনেন) বললেন। এরপর প্রায় রুকুর মতোই তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। এরপর সিজদায় গিয়ে বললেনঃ ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা (আমার রব্ব পবিত্র, যিনি সর্বোচ্চ)।   তাঁর সিজদাও ছিল দাঁড়ানোর মতোই দীর্ঘ।


১০৩. হযরত ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেনঃ একরাতে আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামায আদায় করেছি। তিনি নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমনকি, (তখন) আমি একটা খারাপ কাজের ইচ্ছা করলাম। এ কথায় ইবনে মাসউদকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, কি খারাপ কাজের ইচ্ছা করেছিলে? তিনি বললেন, আমি নামায ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ার ইচ্ছা করেছিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)


১০৪. হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘মৃত ব্যক্তিকে তিনটি জিনিস অনুসরণ করেঃ তার পরিবার, তার ধন-মাল এবং তার আমল (বা কাজ) তারপর দু’টি জিনিস ফিরে আসে, তার পরিবার ও ধন-মাল। আর সঙ্গে থেকে যায় তার আমল।’ (বুখারী ও মুসলিম)


১০৫. হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাত তোমাদের প্রত্যেকের জন্য তার জুতার ফিতার চেয়েও নিকটে; আর দোযখের অবস্থানও তাই। (বুখারী)


১০৬. হযরত আবু ফিরাস রাবি’আ ইবনে কা’ব আসলামী (রা) বলেন, তিনি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম ও আসহাবে সুফ্‌ফার একজন (সদস্য) ছিলেন। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে রাত যাপন করতাম এবং তাঁকে অযুর পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এনে দিতাম। (একবার) তিনি আমায় বললেন; ‘আমার নিকট (তোমার যা ইচ্ছা) চাইতে পারো।’ আমি বললামঃ আমি জান্নাতে আপনার সঙ্গে থাকতে চাই। তিনি জানতে চাইলেনঃ ‘এছাড়া আর কিছু?’ আমি বললামঃ ‘এটাই চাই’।  তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি নিজের জন্য বেশি বেশি সিজদা (অর্থ্যাৎ নামায) দ্বারা আমায় সাহায্য করো।’


১০৭. রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুক্ত করা গোলাম সাওবান (রা) বলেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ ‘তোমার বেশি বেশি সিজদা (অর্থ্যাৎ নামাজ আদায়) করা উচিত। কেননা তুমি আল্লাহর জন্য একটা সিজদা করলে তার বিনিময়ে আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে একটা উচ্চ মর্যাদা দান করেন এবং তোমার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (মুসলিম)


১০৮. হযরত আবু সাফওয়ান আবদুল্লাহ ইবসে বুস্‌র আসলামী (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (লোকদের মধ্যে) সেই ব্যক্তি উত্তম যার বয়স দীর্ঘ এবং কাজও সুন্দর। ইমাম তিরমিযী একে ‘হাসান হাদীস’ রূপে আখ্যায়িত করেছেন।


১০৯. হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন, আমার চাচা আনাস ইবনে নাদ্‌র (রা) বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে তিনি বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! মুশরিকদের বিরুদ্ধে আপনার পরিচালিত কোনো যুদ্ধে এই প্রথম আমি অনুপস্থিত ছিলাম। এখন আল্লাহ যদি আমায় মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে সুযোগ করে দেন, তাহলে আমি কি করতে পারি, তা নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) (মানুষকে) দেখিয়ে দিবেন। অতঃপর ওহুদের যুদ্ধের দিন এলে মুসলমানরা কাফেরদের আক্রমণের সম্মুখীন হলেন। (অর্থ্যাৎ দৃশ্যত তাদের পরাজয় ঘটলো)।   তখন ইবনে নাদ্‌র বললেনঃ হে আল্লাহ! আমার সঙ্গীরা যা করেছে, আমি সেজন্য তোমার নিকট ওযর পেশ করছি এবং মুশরিকদের কার্যকলাপের সাথে আমার সম্পূর্ণ নিঃসম্পর্কতা ঘোষণা করছি।’ এরপর তিনি সামনে এগুতে থাকলে সা’দ ইবনে মু’আযের সাথে সাক্ষাত হলো। তখন তাকে তিনি বললেনঃ ‘হে সা’দ ইবনে মু’আয! কা’বার প্রভুর কসম! আমি ওহুদের পেছন থেকে জান্নাতের খুশবু পাচ্ছি।’ সা’দ বললেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে যে কি করেছে, আমি তা বর্ণনা করতে পারছি না।’ আনাস (রা) বলেনঃ আমরা তার শরীরে তরবারীর অথবা বর্শার কিংবা তীরের আশিটির বেশি আঘাত দেখেছি। আরো দেখেছি সে শাহাদাত বরণ করেছে আর মুশরিকরা তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ (বিশ্রীভাবে) কেটে ফেলেছে। ফলে আমরা কেউ তাকে চিনতেই পারলাম না। অবশ্য তাঁর বোন তাঁর আঙ্গুলের ডগা দেখে তাঁকে চিনতে পারলেন। আনাস বলেনঃ আমরা ধারণা করলাম যে, তাঁর ও তাঁর মতো লোকদের ব্যাপারেই এই আয়াত নাযিল হয়েছেঃ মু’মিনদের মধ্যে এমন সব লোক রয়েছে যারা আল্লাহর নিকট কৃত ওয়াদাকে সত্যে পরিণত করেছে। তাদের মধ্যে কেউ মৃত্যুবরণ করেছে আর কেউ (তার) অপেক্ষায় রয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)


১১০. হযরত আবু মাসউদ উকবা ইবনে ‘আমর আনসারী বদরী (রা) বর্ণনা করেনঃ যখন সাদকা সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হলো তখন আমরা পিঠে বোঝা বহনের কাজ করতাম। (অর্থ্যাৎ এ কাজের মজুরি থেকে আমরা সাদকা দান করতাম)।   এরূপ অবস্থায় একটি লোক একটু বেশি পরিমাণে সাদকা দান করলো। মুনাফিকরা প্রচার করলোঃ এ ব্যক্তি রিয়াকার, অর্থ্যাৎ লোক দেখানো কাজ করে। এরপর আর এক ব্যক্তি এসে এক সা’ পরিমাণ সাদকা দান করলো। তখন মুনাফিকরা বললোঃ আল্লাহ মোটেই এই এক সা’ পরিমাণ সাদকার মুখাপেক্ষী নন। তখন এই আয়াত নাযিল হলো, (আল্লাহ সেই কৃপণ বৃত্তশালী লোকদেরকে খুব ভাল করে জানেন) যারা আন্তরিক সন্তোষ ও আগ্রহের সাথে দানকারী ঈমানদার লোকদের আর্থিক ত্যাগ স্বীকার সম্পর্কে বিদ্রুপাত্নক কথা বলে এবং তাদেরকে ঠাট্টা করে যাদের নিকট (আল্লাহর পথে দান করার জন্য) শুধু তাই আছে যা তারা নিজেদের অপরিসীম কষ্ট স্বীকার করেই দান করে, তাদের (বিদ্রুপকারীদের) প্রতি আল্লাহও বিদ্রুপ করেন এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।’ (বুখারী ও মুসলিম)


১১১. হযরত আবু যার জুনদুব ইবনে জুনাদা (রা) রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি নিজের ওপর জুলুমকে হারাম করে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর জুলুম করো না। হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে হেদায়েত দিয়েছি, সে ছাড়া তোমাদের প্রত্যেকেই গোমরাহ (পথভ্রষ্ট)।   অতএব, তোমরা আমার কাছে হেদায়েত চাও। আমি তোমাদের হেদায়েত দান করবো। হো আমার বান্দাগণ! আমি যাকে খাদ্য দিয়েছি, সে ছাড়া তোমাদের আর সবাই ক্ষুধার্ত। কাজেই তোমরা আমার কাছে খাদ্য চাও, আমি তোমাদেরকে খাদ্য দেব। হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে কাপড় (আচ্ছাদন) দিয়েছি, সে ছাড়া তোমাদের প্রত্যেকেই উলঙ্গ। কাজেই আমার কাছে কাপড় চাও, আমি তোমাদেরকে কাপড় দেব। হে আমার বান্দারা! তোমরা দিন-রাত ভুল করে থাকো, আর আমি সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিই। অতএব, তোমরা আমার কাছে ভুল-ত্রুটির (গুনাহ-খাতার) জন্য ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না, পারবে না আমার কোন লাভও করে দিতে। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের সমস্ত জিন ও মানুষ তোমাদের মধ্যকার শ্রেষ্ঠতম খোদাভীরু ব্যক্তির দিলের মতো হয়ে যায়, তবুও তাতে আমার রাজত্বের এতটুকু মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে না। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের সমস্ত জিন ও মানুষ তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে খারাপ মানুষের দিলের মতো হয়ে যায়, তবুও তাতে আমার রাজত্বের এতটুকুও মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে না। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের পূর্বের ও পরের সমস্ত জিন ও মানুষ কোন এক ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার কাছে চায় এবং আমি তাদের প্রত্যেককে তার প্রয়োজন পূর্ণ করে দেই তাহলে তাতে আমার নিকট যে ভাণ্ডার আছে তার এতটুকু কমে যেতে পারে, যতটুকু সমুদ্রে একটি সূচ ফেললে তার পানি কমে যায়। হে আমার বান্দারা! আমি তোমাদের নেক আমলকে তোমাদের জন্যে জমা করে রাখছি; তারপর একদিন আমি তোমাদেরকে তার পূর্ণ বিনিময় (প্রতিফল) দেব। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন কল্যাণের অধিকারী হয়, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে। আর যে ব্যক্তি অকল্যাণের কিছু পায়, সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে।

ইমাম বুখারী এ হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ) বলেনঃ সিরিয়াবাসীদের কাছে এর চেয়ে মূল্যবান আর কোন হাদীস নেই।


 

Was this article helpful?

Related Articles