৩৪১. হযরত ইবনে উমর বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নেক কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেক কাজ হলোঃ কোন ব্যক্তির তার বাবার বন্ধুদের সাথে সদাচরণ করা। (মুসলিম)
৩৪২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে দীনার থেকে আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেনঃ একদা জনৈক বেদুঈন তাঁর সাথে মক্কার পথে সাক্ষাত করলো। ইবনে উমর (রা) তাকে সালাম করলেন এবং তাঁর বাহন গাধার পিঠে তাকেও তুলে নিলেন। (শুধু তা-ই নয়) তিনি নিজের পাগড়ীটাও তাকে মাথায় পরিয়ে দিলেন। ইবনে দীনার বলেনঃ আমরা তাকে বললামঃ আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন; বেদুঈনরা তো অল্পতেই সন্তুষ্টি লাভ করে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বলেনঃ এই লোকটি পিতা উমরের বন্ধু ছিল। আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ নেক কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেক কাজ হলোঃ বাবার বন্ধুদের সাথে সদ্ভাব রক্ষা করা। (মুসলিম)
৩৪৩. হযরত ইবনে দীনার থেকে ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেনঃ তার একটি গাধাঁ ছিল। তিনি মক্কায় গমনকালে উটের পিঠে চড়তে খুব অস্বস্তি বোধ করতেন। ফলে বিশ্রামের জন্য তিনি এ গাধাঁতে চড়তেন এবং নিজের পাগড়ীটা মাথায় জড়িয়ে নিতেন। বরাবরের অভ্যাস মতো একদিন তিনি এ গাধাঁর পিঠে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় এক বেদুঈন এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলো। তুমি কি অমুকের ছেলে অমুক নও? ইবনে উমর বললেন ‘হ্যাঁ’। ইবনে উমর তাকে গাধাঁটা দিয়ে বললেনঃ এর পিঠে আরোহন করো। এরপর তাঁর পাগড়ীটাও তাকে দিয়ে বললেনঃ এটা মাথায় বাঁধো। তাঁর অন্যান্য সঙ্গীরা তাকে বললেনঃ আল্লাহ আপনাকে মাফ করুন। গাধাঁটা আপনি বেদুঈনকে দিয়ে দিলেন, অথচ এর ওপর আপনি আরোহন করতেন। এমনকি, পাগড়ীটাও তাকে দিয়ে দিলেন, অথচ এটা আপনি মাথায় পরতেন। তিনি বললেনঃ আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ নেক কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় নেক কাজ হলোঃ বাবার মৃত্যুর পর তার বন্ধুর পরিবারের সাথে সদাচরণ করা। উল্লেখ্য, এ ব্যক্তির পিতা হযরত উমর (রা)-এর বন্ধু ছিল। (মুসলিম)
৩৪৪. হযরত আবু উসাইদ (রা) বর্ণনা করেন, একদা আমরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। এ সময় বনী সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে নিবেদন করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! মা-বাপের মৃত্যুর পরও তাদের প্রতি সদাচরণ করার দায়িত্ব আমার ওপর বর্তায় কি? বর্তালে তা কিভাবে পালন করতে হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তাদের কল্যাণার্থে দোআ করো, তাদের গুনাহ মুক্তির জন্য ক্ষমা চাও, তাদের কৃত ওয়াদা পূরণ করো, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করো। (এ কারণে যে, এরা তাদেরই আত্মীয়) এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করো। (আবু দাউদ)
৩৪৫. হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের মধ্যে খাদিজা (রা)-এর প্রতি আমার যতটা ঈর্ষা হতো, অন্য কারো প্রতি তেমনটা হতো না। অথচ আমি তাকে কখনও দেখিনি। কিন্তু তিনি (নবী করীম) প্রায়শই তাঁর কথা বলতেন। তিনি যখনই কোন ছাগল (কিংবা দুম্বা) যবাই করতেন এবং তার গোশত টুকরা টুকরা করতেন, তখন তা খাদীজা (রা)-এর বান্ধবীদের কাছে অবশ্যই পাঠাতেন। আমি মাঝে মাঝে তাঁকে বলতাম, সম্ভবত খাদীজার মতো আর কোন নারী দুনিয়ায় ছিল না। তিনি (তাঁর প্রশংসা করে) বলতেনঃ সে এরূপ ছিল (অর্থ্যাৎ নানাভাবে তাঁর উল্লেখ করতেন)। তাঁর গর্ভে আমার কয়েকটি সন্তান জন্মেছিল। (বুখারী ও মুসলিম)
অপর এক বর্ণনায় আছেঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন ছাগল (কিংবা দুম্বা) যবাই করতেন, তার গোশত খাদীজা (রা)-এর বান্ধবীদের কাছে যথাসাধ্য পাঠানোর চেষ্টা করতেন। অপর এক বর্ণনায় আছেঃ তিনি যখন ছাগল (কিংবা দুম্বা) যবাই করতেন, তখন বলতেনঃ খাদিজার বান্ধবীদের বাড়িতে গোশত পাঠাও। অপর এক বর্ণনাতে আয়েশা (রা) বলেন, খয়াইলিদের কন্যা এবং খাদিজার বোন হালাহ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অনুমতি চাইলেন। তখন খাদিজা (রা)-এর অনুমতি চাওয়ার কথা তাঁর মনে ভাস্বর হয়ে উঠল। এতে তিনি আবেগে আত্মহারা হয়ে গেলেন। তিনি (স্বতঃস্ফূর্তভাবে) বলে উঠলেনঃ হে আল্লাহ! হালাহ্ বিনতে খুয়াইলিদ এসেছে।
৩৪৬. হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) বর্ণনা করেঃ (একদা) আমি জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা)-এর সাথে কোন এক সফরে রওয়ানা হলাম। তিনি আমার খুব খেদমত করতে লাগলেন। আমি তাঁকে বারণ করে বললামঃ আপনি এরকম করবেন না। তিনি (জারীর) বললেনঃ আমি আনসারদের দেখেছি, তারা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক কাজ করে দিয়েছেন। তাই আমি অঙ্গীকার করছি, আমি তাদের মধ্যে যারই সাথে থাকি না কেন, তারই খেদমত করতে থাববো। (বুখারী ও মুসলিম)