জীবনের শেষ পর্যায়ে অধিক হারে পুণ্য কর্মের প্রতি অনুপ্রেরণা প্রদানের বিবরণ

জীবনের শেষ পর্যায়ে বেশি বেশি দ্বীনি কাজে উৎসাহ প্রদান

মহান আল্লাহ বলেনঃ (জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত লোকেরা যখন দুনিয়ায় আবার ফিরে এসে দ্বীনের পথে চলার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করবে, তখন তাদেরকে বলা হবে) ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন বয়স দেইনি, যাতে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত? আর তোমাদের কাছে সাবধানকারীও তো এসেছিল। (সূরা ফাতিরঃ ৩৭)

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) ও সত্যসন্ধ (সত্য রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আলেমগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেনঃ আমি কি তোমাকে ষাট বছর বয়স প্রদান করিনি? পরবর্তী হাদীসটি থেকেও এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়। কেউ কেউ এ ব্যাপারে আঠারো বছরের কথাও বলেছেন। অন্যদিকে ইমাম হাসান, ইমাম কাল্‌বী, মাসরুক প্রমুখ চল্লিশ বছরের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর আরেকটি বক্তব্যও এই চল্লিশ বছরের সমর্থনে পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে মদীনাবাসীদের এইরূপ একটি ‘আমল উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, তাদের কেউ চল্লিশ বছরে উপনীত হলে সে নিজের সময়কে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিত। আবার কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন নিছক প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।

অন্যদিকে দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছেঃ আর তোমাদের কাছে সাবধানকারীও এসেছিল।’ এ সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) ও অধিকাংশ আলেমের বক্তব্য হলো, এখানে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। হযরত ইকরামা (রা), উয়াইনা (রা) প্রমুখ ইমামগণের মতে, এর অর্থ হচ্ছে বার্ধক্য।

 

১১২. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ যে ব্যক্তির মৃত্যুকে পিছিয়ে দেন, তার বয়সের ৬০ বছর পর্যন্ত তার ওযর কবুল করতে থাকেন। (অর্থ্যাৎ বয়সের ৬০ বছর হচ্ছে ওযর কবুলের শেষ সময়। এরপর আর কোন ওযর চলে না) (বুখারী)


১১৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেনঃ (হযরত) উমর (রা) আমাকে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে মজলিশে বসালে তাদের কেউ কেউ মনে মনে একটু অস্বস্তি বোধ করতেন এবং বলতেন যে, ‘এ ছেলেটিকে কেন আমাদের সাথে মজলিশে বসানো হয়? আমাদেরও তো তার বয়সী ছেলেপেলে আছে? হযরত উমর (রা) বললেনঃ ‘এ ছেলেটি কোন্ পরিবারের (অর্থ্যাৎ নবী পরিবার) তা তো তোমরা জানো।’ [ইবনে আব্বাস (রা) বলেন] একদিন তিনি আমাকে তাদের সঙ্গে ডেকে বসালেন। আমার ধারণা হলো, নিশ্চয়ই সেদিন তাদেরকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলার জন্যই আমাকে ডাকা হয়েছে। উমর (রা) জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়া জাআ নাসরুল্লাহ আয়াতটির তাৎপর্য কি? জবাবে কেউ কেউ বললেনঃ ‘আল্লাহ যেহেতু আমাদের সাহায্য দান করেছেন এবং বিজয় দান করেছেন সেহেতু তাঁর প্রশংসা করা এবং তাঁর নিকট ক্ষমা চাওয়ার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ অন্য সবাই কিছু না বলে চুপ থাকলেন। তারপর উমর (রা) আমায় জিজ্ঞেস করলেনঃ হে ইবনে আব্বাস! এ ব্যাপারে তোমার বক্তব্যও কি অনুরূপ? আমি বললামঃ ‘না।’ তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘তাহলে তোমার বক্তব্য কি?’ আমি বললাম,‘এর অর্থ হচ্ছে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল, যা আল্লাহ তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন অর্থ্যাৎ আল্লাহ বলেছেন, যেহেতু আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেছে এবং সেটা আপনারই ওফাতের লক্ষণ, কাজেই আপনি স্বীয় প্রভুর প্রশংসা করুন এবং তাঁর নিকট ক্ষমা চান; তিনি তওবা গ্রহণকারী।’ এরপর উমর (রা) বললেনঃ এ ব্যাপারে তুমি যা বললে, তা ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই বলার নেই।’ (বুখারী)


১১৪. হযরত আয়েশা (রা) বলেনঃ সূরা নাস্‌র অর্থ্যাৎ ইযা জাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাত্‌হু সূরাটি নাযিল হওয়ার পর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাযেই ‘সুবহানাকা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলী’ কথাটি নিয়মিত বলতেন।   (বুখারী ও মুসলিম)

বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনা অনুসারে হযরত আয়েশা (রা) বলেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সিজদায় বেশি বেশি করে বলতেনঃ সুব্‌হানাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগ্‌ফিরলী।’ বলা বাহুল্য, কুরআনে আল্লাহ ‘ফাসাব্বিহ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াসতাগফিরহু’ আয়াতটিতে যে তাসবীহ ও ইস্তিগফারের আদেশ দিয়েছেন, তার ওপরই তিনি আমল করতেন।

মুসলিম –এর এক বর্ণনায় আছে! রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে খুব বেশি করে কলতেনঃ ‘সুবহানাকা ওয়া বিহামদিকা আস্তাগফিরুকা‘ ওয়া আতূবু ইলাইকা।’

হযরত আয়েশা (রা) বলেনঃ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এই নতুন কথাগুলোর মর্ম কি যা আপনাকে বলতে দেখছি’? তিনি বললেনঃ ‘আমার জন্য আমার উম্মতের ভেতর একটি নিদর্শনের সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি যখন তা প্রত্যক্ষ করি, এই কথাগুলো বলি।’ এরপর তিনি সূরা নাস্‌র শেষ পর্যন্ত পড়লেন।

মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি’-এ দো’আটি খুব বেশি করে পড়তেন। হযরত আয়েশা (রা) বলেন, আমি নিবেদন করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি লক্ষ্য করছি, আপনি এ কালেমাগুলো খুব বেশি বেশি পড়ছেন। জবাবে তিনি বললেনঃ আমার প্রভু আমায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, তুমি খুব শীঘ্রই তোমার উম্মতের মাঝে একটি বিশেষ লক্ষণ দেখতে পাবে! কাজেই সেটা যখন দেখতে পাই, তখন এই কথাগুলো বেশি বেশি উচ্চারণ করিঃ ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি’।  সে মুতাবেক আমি ঐ লক্ষণটি দেখতে পেয়েছি। আল্লাহ বলেছেনঃ ‘যখন আল্লাহর সাহায্য আসবে এবং বিজয় সম্পন্ন হবে’ অর্থ্যাৎ মক্কা বিজয়’ এবং তুমি লোকদেরকে দেখবে দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করছে, তখন স্বীয় প্রভুর তাসবীহ ও তাহ্‌মীদ গুণর্কীত্তণ ও প্রশংসা করবে এবং তার কাছে ইস্তেগফার করবে। তিনি বড়ই তওবা গ্রহণকারী।’


১১৫. হযরত আনাস (রা) বলেনঃ মহান আল্লাহ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর তাঁর ইন্তেকালের পূর্বে উপর্যুপরি ওহী নাযিল করতে থাকেন। তাঁর ইন্তেকালের নিকটবর্তী সময় থেকে ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত আগের তুলনায় বেশি ওহী নাযিল হয়েছে। আর এ অবস্থায়ই তিনি ইন্তেকাল করেন। (বুখারী ও মুসলিম)


১১৬. হযরত জাবের (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন প্রতিটি বান্দাকে সেই অবস্থায়ই পুনর্জীবিত করা হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে। (মুসলিম)


 

Was this article helpful?

Related Articles