যে লোকের সামনে প্রশংসা করা হলে আত্নখুশিবোধ ইত্যাদি ফিতনায় পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তার সামনে প্রশংসা করা খারাপ। তবে এ জাতীয় কিছু ঘটার আশঙ্কা না থাকলে সামনা-সামনি প্রশংসায় কোন ক্ষতি নেই।
১৭৯০. হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (স) এক ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তির প্রশংসা করতে শুনলেন। সে তার প্রশংসায় অতিশয়োক্তি করছিল। তিনি বলেন, “তোমরা ধ্বংস করলে, তোমরা ঐ ব্যক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে দিলে।” ( বুখারী ও মুসলিম )
১৭৯১. হযরত আবু বকর (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (স) -এর সামনে এক ব্যক্তি কথা উঠালে আরেক এক ব্যক্তি তার প্রশংসা করল। নবী করীম (স) বলেন, তোমার জন্য অক্ষেপ! চুপ থাক! তুমি তোমার বন্ধুর ঘাড় কেটে দিয়েছ। কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন, যদি তোমাদের কেউ কারো প্রশংসা করতেই হয়, তবে বলবে, আমি অমুক ব্যক্তিকে এরূপই মনে করি, যদি সে তার ঐ রূপই হয়। তবে আল্লাহর-ই তার প্রকৃত হিসাব গ্রহণকরী। আল্লাহ ছাড়া কেউ কারো ভাল হওয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করতে পারে না। (বুখারী ও মুসলিম)
১৭৯২. হযরত হাম্মাম ইবন হারেস ও মিকদাদ (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ওসমান (রা) -এর প্রশংসা করছিল। তখন মিকদাদ (রা) হাঁটু গেড়ে বসে গেলেন এবং তার মুখমণ্ডলে কংকর নিক্ষেপ করতে আরম্ভ করেন। হযরত ওসমান (রা) তাকে জিজ্ঞেস করেন, কি ব্যাপার? উত্তরে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বললেন, যখন তোমরা কাউকে মুখের ওপর প্রশংসা করতে দেখ, তখন তাদের মুখমণ্ডলে মৃত্তিকা নিক্ষেপ কর। ( মুসলিম)
ইমাম (রা) বলেন, উল্লিখিত হাদীসসমূহে সামান-সামনি কারো প্রশংসা করতে নিষেধ করা হয়েছে। অবশ্য সামনা-সামনি প্রশংসা করা জায়েয সম্বন্ধেও প্রচুর হাদীস রয়েছে। মনীষীগণ এ উভয় প্রকার হাদীসের মধ্যে সামঞ্জ্য বিধান করেছেন। তারা বলেছেন, প্রশংসিত ব্যক্তি যদি পরিপূর্ণ ঈমান ও প্রত্যয়ের অধিকারী হয়ে থাকে, পরিশুদ্ধ মন ও জ্ঞানের অধিকারী হয়ে থাকে, সামনা-সামনি প্রশংসা করার কারণে যদি ক্ষতির মধ্যে পড়ার এবং গর্বিত হাবার এবং প্রশংসা কুড়িয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করার মানসিকতসম্পন্ন না হয়, তবে এসব ক্ষেত্রে প্রশংসা করা হারাম বা মাকরূহ নয়। কিন্তু যদি উল্লিখিত দোষগুলোর কোন একটি বা একাধিক দোষ প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে সামনা-সামনি প্রংশসা করা খুবই খারাপ কাজ। এ ব্যাপারে বহু হাদীস থেকে প্রমাণ পেশ করা যায়।
প্রশংসা জায়েয হওয়ার পক্ষে যেসব হাদীস রয়েছে তার মধ্যে আবু বকর (রা) এর প্রশংসায় নবী করীম (স) এর হাদীস, “আমি আশা করি আপনি তাদের একজন হবেন যাদেরকে বেহেশতের একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে আমন্ত্রণ জানানো হবে।”
অন্য এক হাদীসে তিনি বলেছেন, “আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।” অথাৎ যারা অহংকার প্রর্দশনের জন্য নিজেদের কাপড় পায়ের গোছার নীচে পরিধান করে আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত নন।
ওমর (রা) সম্পর্কে নবী করীম (স) -এর বানী, “যখনই শয়তান তোমাকে কোন রাস্তা দিয়ে যেতে দেখে, তখনই সে আপনার পথ ত্যাগ করে অন্য পথ ধরে।” (বুখারী ও মুসলিম)