দ্বীনি কাজে প্রতিযোগিতা ও সদা তৎপরতা
মহান আল্লাহ বলেনঃ
তোমরা সৎকাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো। (সূরা বাকারাঃ ১৪৮)
মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
তোমরা সেই পথে দ্রুত বেগে এগিয়ে চলো, যা তোমাদের প্রভুর ক্ষমা এবং আকাশ ও পৃথিবীর সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে এগিয়ে গেছে এবং যা খোদাভীরু লোকদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। (আলে-ইমরানঃ ১৩৩)
৮৭. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা মুহুর্তকাল বিলম্ব না করে সৎকাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাও; কারণ খুব শীঘ্রই অন্ধকার রাতের মতো অশান্তি-বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তখন মানুষ সকাল বেলা মুমিন থাকবে তো সন্ধ্যা বেলা কাফির হয়ে যাবে। আবার সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে তো সকাল বেলা কাফির হয়ে যাবে। সে তার দ্বীনকে জাগতিক সম্পদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেবে। (মুসলিম)
৮৮. হযরত ‘উকবা ইবনে হারিস (রা) বর্ণনা করেনঃ একদা আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে মদীনায় আসরের নামায আদায় করলাম। তিনি সালাম ফিরিয়ে দ্রুত উঠে পড়লেন এবং (অনেকটা) লোকদের ঘাড়ের ওপর দিয়েই তাঁর স্ত্রীদের কক্ষের দিকে ছুটে গেলেন। লোকেরা তাঁর এই তাড়াহুড়া দেখে ঘাবড়ে গেল। এরপর তিনি বেরিয়ে এসে দেখলেন যে, তাঁর তাড়াহুড়ার কারণে লোকেরা হতবাক হয়ে গেছে। তিনি তখন বললেনঃ একখন্ড সোনা (বা রূপা)-র কথা আমার মনে পড়েছিল, যা আমাদের কাছে সঞ্চিত ছিল। আমার নিকট এরূপ জিনিস থাকা মোটেই পছন্দ করছিলাম না। তাই সেটাকে (লোকদের মাঝে) বন্টন করার নির্দেশ দিয়ে এলাম। (বুখারী)
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় উল্লেখিত হয়েছে, সাদকার একখণ্ড সোনা ঘরে থেকে গিয়েছিল। তা নিয়ে রাত কাটানো আমার নিকট মোটেই পছন্দনীয় ছিল না।
৮৯. হযরত জাবির (রা) বর্ণনা করেনঃ একটি লোক ওহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমি যদি নিহত হই, তবে আমি কোথায় থাকব? রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘জান্নাতে’ তাৎক্ষনাৎ সে তার হাতের খেজুরগুলো ফেলে দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়ে গেল। (বুখারী ও মুসলিম)
৯০. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেনঃ একদা একটি লোক রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! কোন দানে (সদকায়) সবচেয়ে বেশি সওয়াব? তিনি বললেনঃ তুমি এমন অবস্থায় দান করবে যে, তুমি (শারীরিকভাবে) সুস্থ আছ, ধন-মালের প্রতি লোভ আছে, অভাব-অনটনকে ভয় করছো। এবং সম্পদের আশাও পোষণ করছো। তুমি দান করার ব্যাপারে এমন কার্পণ্য পোষণ করোনা যে, শেষে মৃত্যুর ক্ষণটি এসে যায় এবং তুমি এটা ঘোষণা কর যে, এ পরিমাণ অমুকের এবং সে পরিমাণ অমুকের। অথচ অমুকের জন্যে সে মাল আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। (বুখারী ও মুসলিম)
৯১. হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহুদ যুদ্ধের দিন একখানা তলোয়ার হাতে নিয়ে বললেনঃ ‘কে আমার কাছ থেকে এটা নেবে?’ উপস্থিত লোকদের প্রত্যেকেই বলতে লাগলঃ ‘আমি’ ‘আমি’। তিনি বললেনঃ ‘কে এটার হক আদায় করার জন্যে নেবে’? এ কথায় সকলে স্তব্ধ হয়ে গেল। তখন আবু দুজানা (রা) বললেনঃ ‘আমি এর হক আদায় করার জন্য নেব।’ অতঃপর তিনি সেটা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন এবং মুশরিকদের শিরোচ্ছেদ করলেন। (মুসলিম)
৯২. হযরত যুবাইর ইবনে আদী বর্ণনা করেনঃ আমি আনাস ইবনে মালিক (রা) –এর নিকট এসে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের বাড়াবাড়ির (যে কারণে আমরা কষ্ট পাচ্ছিলাম) বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলাম। তিনি বললেনঃ সবর করো; কারন যে-কোনো যুগই আসুক না কেন, তার পরবর্তী যুগ (পূর্ববতী যুগের চেয়ে) অধিকতর খারাপ। এ অবস্থা তোমার প্রভুর (রব্ব-এর) সাথে সাক্ষাত করা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। একথা আমি তোমাদের নবী (স)-এর নিকট থেকে শুনেছি। (বুখারী)
৯৩. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাতটি অবস্থার পূর্বেই সব কাজ সম্পন্ন করে ফেলঃ তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষায় থাকবে, যা (মানুষকে) ইসলামের হুকুম পালন থেকে ভুলিয়ে রাখে? অথবা এমন ধনাঢ্যতা আসুক যা (তাকে) ইসলাম বৈরিতার দিকে ঠেলে দেয়? অথবা এমন রোগ-ব্যাধির আক্রমণ হোক, যা শরীরকে বিধ্বস্ত করে দেয় কিংবা এমন বার্ধক্য চেপে বসুক যা বিচার-বুদ্ধিকে নষ্ট করে দেয় অথবা হঠাৎ মৃত্যু এসে জীবনের ইতি টেনে দিক কিংবা দুষ্ট অদৃশ্য দজ্জাল আত্নপ্রকাশ করুক অথবা ভয়ঙ্কর কিয়ামত এসে পড়ুক। আর কিয়ামত তো খুবই ভয়াবহ। (হাদীসটি বর্ণনা প্রসঙ্গে ইমাম তিরমিযী একে হাসান হাদীসরূপে আখ্যায়িত করেছেন।)
৯৪. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের যুদ্ধের দিন বলেনঃ এই ঝাণ্ডা আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেব, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে। তার হাতেই আল্লাহ বিজয় দেবেন। ‘উমর (রা) বলেনঃ আমি ঐ দিন ছাড়া আর কোন দিন নেতৃত্ব পেতে আগ্রহ বোধ করিনি। তাই সেদিন আমার আগ্রহ হলো যে, আমাকে ডাকা হোক। কিন্তু রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রা) কে ডেকে তার হাতেই ঝাণ্ডা তুলে দিলেন। সেই সঙ্গে তাঁকে বললেনঃ সামনে এগিয়ে যাও; আল্লাহ তোমায় বিজয় না দেয়া পর্যন্ত কোন দিকে তাকাবে না।’ আলী একটু সামনে এগিয়েই দাঁড়ালেন; কিন্তু এদিক-ওদিক তাকালেন না। বরং চীৎকার করে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! কিসের ভিত্তিতে (এবং কতক্ষণ পর্যন্ত) আমি লোকদের সাথে লড়াই চালিয়ে যাবো? রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘তারা এই কথার সাক্ষ্য না দেয়া পর্যন্ত লড়াই চলতে থাকবে যে পর্যন্ত না তারা বলবে আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল।’ তারা এ সাক্ষ্য দিলে তোমার কবল থেকে তারা তাদের জান-মাল রক্ষা করতে পারবে। সেই সঙ্গে ইসলামের হকও তাদের আদায় করতে হবে। তবে তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর দায়িত্বে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)