আনুগত্যে ভারসাম্য রক্ষা করা
মহান আল্লাহ বলেনঃ
ত্বা-হা। (হে নবী!) আমি তোমার ওপর কুরআন এ জন্যে নাযিল করিনি যে, (এর দরুন) তুমি দুঃখ-কষ্ট ভোগ করবে। (সূরা ত্ব-হাঃ ১)
মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে সহজ ব্যবহার করতে চান এবং কঠিন ব্যবহার করতে চান না। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫)
১৪২. হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, একদিন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন। তখন একজন মহিলা তাঁর কাছে বসা ছিলো। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ এই মহিলাটি কে? আয়েশা (রা) বললেনঃ এ হচ্ছে অমুক মহিলা; সে তার নামায সম্পর্কে আলোচনা করছে। তিনি বললেনঃ থামো; সব কাজই তোমাদের শক্তি অনুযায়ী তোমাদের ওপর ওয়াজিব। আল্লাহর কসম! তোমরা ক্লান্তিবোধ করলেও আল্লাহ সওয়াব দিতে ক্লান্তিবোধ করেন না। আর তাঁর নিকট উত্তম দ্বীনি কাজ সেটাই, যার কর্তা সে কাজটি নিয়মিত সম্পাদন করে। (বুখারী ও মুসলিম)
১৪৩. হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেনঃ একদা তিন ব্যক্তি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের বাড়িতে এসে তারা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছিলো। যখন তাদেরকে এ বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হলো, তারা এটাকে নিজেদের জন্য অপর্যাপ্ত মনে করল। তারা বলতে লাগলঃ ‘রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তুলনায় আমরা কোথায়? আল্লাহ তো তাঁর পূর্বের ও পরের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি (যদি ঘটে থাকে) ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাদের একজন বললঃ ‘আমি জীবনভর সারা রাত মগ্ন থাকবো।’ আরেকজন বললঃ ‘আমি সারা জীবন রোযা পালন করবো’ এবং ‘কখনো পানাহার করবো না।’ আরেকজন বললঃ ‘আমি স্ত্রী সংসর্গ থেকে দূরে থাকবো এবং কখনো বিয়েই করবো না।’ এমনই সময় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি এ ধরনের কখা বলেছো? আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহকে বেশি ভয় করি এবং বেশি তাকওয়া অবলম্বন করি। কিন্তু আমি তো রোযা রাখি আবার পানাহার করি, নামায পড়ি আবার ঘুমাই এবং বিয়ে-শাদিও করি। (এটাই আমার তরিকা– সুন্নাত) যে ব্যক্তি আমার তরিকা মেনে চলে না সে আমার (দলভূক্ত) নয়। (বুখারী ও মুসলিম)
১৪৪. হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘অযথা কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’ তিনি এ কথা তিনবার বলেছেন। (মুসলিম)
১৪৫. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর দ্বীন (জীবন-বিধান) সহজ। যে কেউ এ দ্বীন কে কঠিন বানাবে, তার ওপর তা চেপে বসবে। কাজেই মধ্যম ও সুষম পন্থা অবলম্বন করো, সামর্থ্য মতো কাজ করো। আর সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং সকাল, সন্ধ্যা ও শেষ রাতের কিছু অংশ বন্দেগীক করে আল্লাহর সাহায্য চাও। (বুখারী)
বুখারীর অন্য এক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছেঃ (দৈনন্দিন কাজ কর্মে) মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো ও সামর্থ্য অনুযায়ী (দ্বীন মোতাবেক) কাজ করো এবং সকালে চলো (বন্দেগীর উদ্দেশ্যে) ও রাতে চলো আর শেষ রাতের কিছু অংশে এবং সুষম ও মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো (তাহলে কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে)।’
১৪৬. হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা মসজিদে গিয়ে দেখতে পেলেন, একটি রশি দু’টি খুঁটির মাঝখানে বাঁধা। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘এ রশিটা কিসের?’ সাহাবীগণ বললেনঃ ‘এটা যয়নবের রশি। তিনি নামায পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে এ রশিতে ঝুলে পড়েন।’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘এটা খুলে ফেল। তোমাদের প্রত্যেকেরই শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী নামায পড়া উচিত। আর যখন ক্লান্তি এসে যায়, তখন ঘুমিয়ে পড়া উচিত।’ (বুখারী ও মুসলিম)
১৪৭. হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কারো নামায পড়তে পড়তে ঘুম এসে গেলে তার ঘুমিয়ে নেওয়া উচিত। কেননা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় নামায পড়তে থাকলে সে হয়তো ইস্তেগফারের পরিবর্তে নিজেকেই গালমন্দ করতে থাকবে। (বুখারী ও মুসলিম)
১৪৮. হযরত আবু আবদুল্লাহ জাবির ইবনে সামুরা (রা) বলেনঃ আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামায আদায় করতাম। তাঁর নামায ও খুতবা উভয়ই ছিল পরিমিত। (অর্থ্যাৎ এর কোনটাই খুব বেশি সংক্ষিপ্ত কিংবা খুব বেশি দীর্ঘ ছিল না।) (মুসলিম)
১৪৯. হযরত আবু জুহাইফা ওয়াহাব বিন আবদুল্লাহ (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান ও আবু দারদা (রা)-এর মধ্যে ভ্রাতৃ-সম্পর্ক তৈরি করে দিয়েছিলেন। একদিন সালমান আবু দারদার সঙ্গে দেখা করতে গেলে উম্মে দারদাকে অত্যন্ত জীর্ণ কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখে তার অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে উম্মে দারদা বললেনঃ ‘তোমার ভাই আবু দারদার দুনিয়ায় কোন কিছুর দরকার নেই।’ তারপর আবু দারদা এসে সালমানের জন্য আহারের ব্যবস্থা করে তাকে বললেনঃ তুমি খাও, ‘আমি রোযা রেখেছি।’ সালমান বললেনঃ তুমি না খেলে আমিও খাব না। তখন আবু দারদাও তার সঙ্গে খেলেন। এরপর রাতে আবু দারদা নামাযের জন্য প্রস্তুতি নিতে গেলে সালমান তাকে ঘুমাতে বললেন। আবু দারদা ঘুমালেন। কিছুক্ষণ পরই আবার উঠে নামায পড়তে গেলে সালমান এবারও তাকে ঘুমাতে বললেন। এরপর শেষ রাতে সালমান তাকে জাগতে বললেন এবং দু’জনে নামায পড়লেন। এরপর সালমান তাকে বললেনঃ ‘তোমার ওপর তোমার প্রভুর (রব্ব) হক আছে, তোমার ওপর তোমার নফসেরও হক আছে, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক আছে; অতএব, প্রত্যেক হকদারের হক আদায় করো।’ এরপর আবু দারদা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে সব কথা খুলে বললে তিনি মন্তব্য করলেনঃ সালমান ঠিক কথাই বলেছে। (বুখারী)
১৫০. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হলো যে, আমি বলে থাকি, ‘আল্লাহর কসম! যতদিন জীবিত থাকবো, ততদিন আমি (দিনে) রোযা রাখবো আর রাতে নামাজ পড়তে থাকব।’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমায় জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘তুমি নাকি এরূপ কথা বলে থাকো?’ আমি বললামঃ ‘আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত। হে আল্লাহর রাসূল! আমি ঠিকই একথা বলেছি।’ তিনি বললেনঃ ‘তুমি এরূপ করতে পারবে না। কাজেই, রোযাও রাখো, আবার তা ছেড়েও দাও। তেমনি রাতের বেলা নিদ্রাও যাও আবার রাতে জেগে নফল নামাযও পড়ো; আর প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখো। কারণ সৎকাজে দশগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। এ নিয়মটি পালন করলে এটা প্রতিদিন রোযা রাখার মতো হয়ে যাবে।’ আমি বললাম আমি এর চেয়েও বেশি শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে একদিন রোযা রাখো ও দু’দিন পানাহার করো। এটি হচ্ছে হযরত দাউদ (আ)-এর রোযা। আর এটিই হচ্ছে ভারসাম্যময় রোযা। আমি বললামঃ আমি এর চেয়েও বেশি ক্ষমতা রাখি, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোন রোযা নেই। (হযরত আবদুল্লাহ যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হন, তখন প্রায়শ বলতেনঃ হায়! আমি যদি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা মতো সেই তিন দিনের রোযা মেনে নিতাম, তাহলে তা আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের চাইতেও আমার কাছে বেশি প্রিয় হতো!
অপর এক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাকে কি অবহিত করা হয়নি যে, তুমি প্রতিদিন রোযা রাখো এবং রাতভর নফল নামাজ পড়ো? আমি বললামঃ ‘নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ তুমি এরূপ করো না। রোযা রাখো আবার ভঙ্গও করো।’ ঘুমাও আবার ঘুম থেকে জেগে নফল নামাযও পড়ো। কারণ, তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার ওপর তোমার চোখেরও হক আছে, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীরও হক আছে। তোমার ওপর তোমার অতিথির হক আছে। মূলত প্রতি মাসে তিন দিন রোযা রাখাই তোমার জন্য যথেষ্ট। কেননা, প্রতিটি নেকীর পরিবর্তে তুমি দশগুণ সওয়াব পাবে। এটা সারা বছর বা প্রতিদিন রোযা রাখার সমান হয়ে যায়। আমি (আবদুল্লাহ) নিজেই নিজের ওপর কঠোরতা আরোপ করার ফলে আমার ওপর কঠোরতা চেপে বসেছে। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো নিজের মধ্যে (প্রত্যহ রোযা রাখার মতো) সামর্থ রাখি। তিনি জবাব দিলেনঃ ‘আল্লাহর নবী দাউদের রোযা রাখো এবং তার চেয়ে বাড়িও না।’ আমি জানতে চাইলামঃ দাউদের রাযা কি রকম ছিল? তিনি জবাব দিলেনঃ ‘অর্ধ বছর।’ (অর্থ্যাৎ একদিন রোযা রাখা এবং একদিন তা ভঙ্গ করা)। বুড়ো বয়সে উপনীত হবার পর আবদুল্লাহ বলতেনঃ হায়! আমি যদি সেদিন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেয়া সুবিধাটা গ্রহণ করতাম!
অপর এক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছেঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাকে তো খবর দেয়া হয়েছে- তুমি সারা বছর (অর্থ্যাৎ প্রতিদিন) রোযা রাখো এবং প্রতি রাতে কুরআন খতম করে থাকো! আমি বললামঃ হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কল্যাণ লাভের আকাঙ্খাই এ কাজটা করে থাকি। তিনি বললেনঃ ‘তাহলে তুমি আল্লাহর নবী দাউদের (নিয়মে) রোযা রাখো। কারণ মানুষের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয় বড় ইবাদতকারী। আর প্রতি মাসে একবার কুরআন খতম করো।’ আমি বললাম হে আল্লাহর নবী! আমি তো এর চাইতেও বেশি কুরআন পাঠের ক্ষমতা রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে দশ দিনে (কুরআন) খতম করো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এর চেয়েও বেশি ক্ষমতা রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে এক সপ্তাহে কুরআন খতম করো এবং এর চেয়ে বেশি বাড়িও না। এভাবে আমি নিজেই নিজের ওপর কঠোরতা চাপাতে চাইলাম এবং তা চাপানো হয়েই গেল। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমায় বলেছিলেনঃ তুমি জানো না, হয়তো তোমার বয়স দীর্ঘতর হবে। আবদুল্লাহ (রা) বলেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছিলেন, অবশেষে আমি সেখানে পৌঁছে গেলাম। আর আমি যখন বার্ধক্যে পৌঁছে গেলাম, তখন আমার আফসোস হলো, আমি যদি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেয়া সুবিধা গ্রহণ করতাম!
অপর এক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছেঃ তোমার ওপর তোমার ছেলেরও হক রয়েছে। আরেক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছেঃ যে ব্যক্তি প্রত্যহ রোযা রাখে, মূলত সে রোযাই রাখে না। (এ কথা তিনি তিনবার বলেন) অপর এক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছেঃ আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে পছন্দসই রোযা হচ্ছে দাউদের রোযা আর সবচেয়ে পছন্দনীয় নামায হচ্ছে দাউদের নামায। তিনি রাতের অর্ধাংশে ঘুমাতেন, এক তৃতীয়াংশে (আল্লাহর) বন্দেগী করতেন এবং ষষ্ঠাংশে আবার ঘুমাতেন। অনুরূপভাবে, তিনি একদিন রোযা রাখতেন এবং একদিন রোযা ভঙ্গ (ইফতার) করতেন।
অপর এক রেওয়ায়েত অনুসারে আবদুল্লাহ বলেন, আমার পিতা একটি শরীফ খান্দানের মেয়ের সাথে আমায় বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ করেন। আমার পিতা তার পুত্রবধু থেকে শপথ নিয়ে তাকে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। আমার স্ত্রী তার জবাবে বলতেন, তিনি খুব ভালো লোক; এতো ভালো যে, আমি তার কাছে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত আমার সাথে বিছানায় শয়ন করেননি এবং আমার পর্দাও খোলেননি। অবশেষে আমার পিতা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করলেন। তিনি বললেনঃ ‘তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও?’ এরপর আমি তাঁর সাথে সাক্ষাত করলাম। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তুমি কিভাবে রোযা রাখো? আমি বললামঃ প্রতিদিন। কিভাবে কুরআন খতম করো? জবাব দিলাম, প্রতি রাতে। এরপর তিনি আনুপূর্বিক সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন। আবদুল্লাহ যখন আরাম করতে চাইতেন, তখন কয়েক দিন হিসাব করে রোযা ভঙ্গ করতেন এবং পরে আবার সেগুলোর রোযা পূরণ করে দিতেন।
নবী করীম আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পৃথক হওয়ার পর (তাঁর সাথে ওয়াদাকৃত) তাঁর খেলাফ করাকে তিনি অপছন্দ করতেন।
ইমাম নববী (রহ) বলেন, এ বর্ণনাগুলোর সৃষ্টি অধিকাংশই বুখারী ও মুসলিম উভয় গ্রন্থে বর্ণিত এবং মাত্র সামান্য অংশ এ দুটি গ্রন্থের কোন একটি থেকে গৃহীত হয়েছে।
১৫১. হযরত আবু রিব্য়ী ইবনে হানযালা ইবনে রাবীইল উসাইদী (রা) বর্ণনা করেনঃ তিনি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন শ্রুতি-লেখক ছিলেন। তিনি বলেন, একদিন আবু বকর (রা) আমার সাথে দেখা করে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছো হান্যালা? আমি বললামঃ হান্যালা মুনাফিক হয়ে গেছে। আবু বকর (রা) হতবাক হয়ে বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! এটা তুমি কি বলছো? আমি বললামঃ আমরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছাকাছি থাকলে তিনি আমাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের প্রসঙ্গ তুলে উপদেশ দান করেন। তখন আমরা যেন সবকিছু সাদা চোখে দেখতে পাই। কিন্তু আমরা যখন তাঁর কাছ থেকে সরে গিয়ে স্ত্রী, সন্তান ও ধন-সম্পদের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ি, তখন অনেক কথাই বিস্মৃত হয়ে যাই।’ হযরত আবু বকর (রা) বললেনঃ আমার অবস্থাও কতকটা এই রকম। তারপর আমি ও আবু বকর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! হানযালা তো মুনাফিক হয়ে গেছে।’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্ন করলেনঃ ‘সেটা আবার কি?’ আমি বললামঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার নিকটে থাকলে আপনি আমাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নাম প্রসঙ্গ তুলে নসিহত করেন। তখন আমরা যেন তা চোখের সামনে প্রত্যক্ষ করি। কিন্তু আপনার কাছ থেকে সরে গিয়ে যখন স্ত্রী, সন্তান ও ধন-সম্পদের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ি তখন অনেক কথাই বিস্মৃত হয়ে যাই। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘সেই আল্লাহর কসম! যার মুঠোয় আমার প্রাণ নিবদ্ধ, তোমরা যদি আমার কাছে থাকাকালীন অবস্থার মতো সর্বদা থাকতে এবং আল্লাহর স্মরণে হামেশা নিরত থাকতে, তাহলে ফেরেশতারা তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের চলার পথে সর্বদা করমর্দন (মুসাফাহা) করত। কিন্তু হানযালা! মানুষের অবস্থা তো এক সময় এক রকম আর অন্য সময় অন্য রকম থাকে!’ তিনি এ কথা তিনবার বললেন। (মুসলিম)
১৫২. হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ (একদিন) রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছেন, এমন সময় এক ব্যক্তিকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলেন। তিনি তার সম্পর্কে সন্ধান নিলে সাহাবীগণ বললেনঃ এ লোকটি আবু ইসরাইল। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সে রৌদ্রে দাঁড়িয়ে খুতবা শুনবে, (কোথাও) বসবে না, ছায়ায়ও যাবে না এবং কারো সাথে কথাও বলবে না আর সে রোযা পালন করবে। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে বলো, সে যেন কথা বলে, ছায়ায় আশ্রয় নেয় এবং তার রোযা পূর্ণ করে। (বুখারী)