আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
“নিশ্চয় খোদাভীরুরা বাগান ও নির্ঝরিনীসহূহে থাকবে। তাদেরকে বলা হবেঃ এগুলোতে নিরাপত্তা ও শান্তি সহকরে প্রবেশ কর।
তাদের অন্তরে যে ক্রোধ ছিল, আমি তা দূর করে দেব। তারা ভাই ভাইয়ের মত সামনা-সামনি আসনে বসবে। সেখানে তাদের মোটেই কষ্ট হবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিস্কৃত হবে না।” (সূরা আল হিজরঃ ৪৫,৪৬,৪৭,৪৮)
তিনি আরো বলেছেনঃ
“সেই দিনটি যখন আসবে, তখন খোদাভীরুরা ছাড়া অন্য সব বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্রু হবে। যারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং অনুগত বান্দা হয়েছিল তাদেরকে সেদিন সম্বোধন করে বলা হবেঃ হে আমার বান্দাগণ, তোমাদের আজ কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না। তোমরা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং তোমরা আজ্ঞাবহ ছিলে। জান্নাতের প্রবেশ কর তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীগণ সানন্দে। তাদের কাছে পরিবেশন করা হবে স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র এবং তথায় রয়েছে মনে যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়। তোমরা তথায় চিরকাল অবস্থান করবে। তোমারা পৃথিবীতে যে সব ভাল কাজ করেছিলে তার বিনিময়ে এই জান্নাতের উত্তরাধিকারী হয়েছ। তথায় তোমাদের জন্যে আছে প্রচুর ফল-মূল, তা থেকে তোমরা আহার করবে।” (সূরা যুখরুফঃ ৬৭-৭৩)
তিনি আরো বলেছেনঃ
“নিশ্চয় খোদাভীরুরা নিরাপদ স্থানে থাকবে। বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে পাতলা রেশমী ও মোটা রেশমী পোশাক পরিহিত অবস্থায় সামনা-সামনী আসনে বসবে। এরূপই হবে তাদের অবস্থা। আর আমি তাদেরকে হুরদের সাথে বিয়ে করিয়ে দিব। সেখানে তারা পূর্ণ নিশ্চয়তায় সব রকমের সুস্বাদু জিনিসসমূহ চেয়ে নেবে। তারা সেখানে তারা কখনো মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে না। দুনিয়ায় একবার যে মৃত্যু তাদের হয়েছে তা হয়েই গেছে। আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। আপনার পালনকর্তার কৃপায় এটাই মহা সাফল্য।” (সূরা দুখানঃ ৫১-৫৭)
তিনি আরো বলেছেনঃ
“নিশ্চয় সৎলোকগণ থাকবে অফুরন্ত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে। উচ্চ আসনে আসীন হয়ে দৃশ্যাবলী দর্শন করতে থাকবে। আপনি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে পাবেন। তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে। তার উপর মিশকের সীল লাগানো থাকবে। যেসব লোক অন্যদের উপর প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করতে চায়, তারা যেন এ জিনিস লাভের জন্য প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে চেষ্টা করে। এই পানীয় হবে তসনীম মিশ্রিত। এটা একটা ঝরণা, যার পানি পান করবে নৈকট্যশীল লাভকারী ব্যক্তিরা্ই।” (সূরা মুতাফফিফীনঃ ২২-২৮)
১৮৮২. হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, বেহেশতবাসীগণ বেহেশতের খাদ্য খাবে এবং পানীয় বস্তু পান করবে। কিন্তু সেখানে তাদের পায়খানার প্রয়োজন হবে না, তাদের নাকে শেশ্মা বা ময়লা জমবে না এবং তারা পেশাবও করবে না। ঢেকুরের মাধ্যমে তাদের পেটের খাদ্য দ্রব্য হযম হয়ে মেশকের সুঘ্রাণের মতো বেরিয়ে যাবে। শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের মতই তারা তাসবীহ ও তাকবীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। (মুসলিম)
১৮৮৩. হযরত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন সব বস্তু তৈরি করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান তার বর্ণনা কখনো শুনেনি। আর কোন মানুষ কোন দিন তার ধারনা বা কল্পনাও করতে পারেনি। এ কথার সমর্থনে তোমরা এ আয়াত পাঠ করতে পার, ………………
“নেক কর্মের প্রতিদান স্বরূপ তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী যেসব সামগ্রী গোপন রাখা হয়েছে, তা কোন প্রাণীই জানে না।” ( সূরা আশ শাজাদাঃ ১৭) (বুখারী ও মুসলিম)
১৮৮৪. হযরত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, সর্বপ্রথম যে দল বেহেশতে যাবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল হবে। এরপর যারা যাবে তাদের চেহারা ঝিকমিক করা তারকার মতো আলোকিত হবে। তাদের চিরুনী হবে স্বর্ণের তৈরি। তাদের ঘাম হবে মেশকের মতো সুঘ্রাণ। তাদের ধুমদানী সুঘ্রাণ কাঠ দিয়ে জ্বালানো হবে। আয়তলোচনা হূর হবে তাদের স্ত্রী। তাদের দৈহিক গঠন হবে এক প্রকারের। দৈহিক অভ্যাস একই রকম হবে। উচ্চতায় তারা তাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ) -এর মত ষাট হাত লম্বা হবে। (বুখারী)
বুখারী ও মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তাদের ব্যবহার্য পাত্র হবে স্বর্ণের। তাদের ঘাম হবে মেশকের মতো সুগন্ধ। তাদের প্রত্যেককে দু’জন করে স্ত্রী দেয়া হবে। তারা এত সুন্দরী হবে যে, তাদের উরুর হাড়ের মজ্জা মাংসের ভিতর দিয়ে দেখা যাবে। তাদের পরস্পরের মধ্যে কোন মতানৈক্য বা হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের মন হবে একই ব্যক্তির মনের মতো। সকাল-সন্ধ্যায় তারা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহত্ত্ব বর্ণনা করতে থাকবে।
১৮৮৫. হযরত মুগীরা ইবেন শু’বা (রা) রাসূলুল্লাহ (স) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, হযরত মূসা (আ) তাঁর রবকে জিজ্ঞেস করেন, সবচেয়ে কম মর্যদায় বেহেশতী কে? মহান আল্লাহ বলেন, সে ঐ ব্যক্তি যে বেহেশবাসীদেরকে বেহেশতে দেয়ার পর আসবে। তাকে বলা হবে বেহেশতে যাও। সে বলবে হে বর! সব লোক নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান নিয়েছে এবং নিজেদের প্রাপ্য অংশগ্রহণ করেছে, তাই আমি এখন বেহেশতে গিয়ে কিভাবে স্থান পাবো। তাকে বলা হবে তোমাকে যদি পৃথিবীর কোন বাদশাহ বা শাসকের রাজ্যের সমান এলাকা দেয়া হয় তবে কি সন্তুষ্ট হবে। সে বলবে হে রব! আমি এতে সন্তুষ্ট হলাম। এবার মহান আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমাকে তাই দেয়া হল, এরপরও তার সমান আরো, এরপর তার সমান আরো, এবং এরপর ঐগুলোর সমান আরও অতিরিক্ত দেয়া হল। পঞ্চমবারে সে বলবে, হে রব, আমি সন্তুষ্ট হলাম। এবার মহান আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমাকে এসবের মত আরো দশগুণ দেয়া হল। তোমার অন্তর যা কামনা করে, তোমার চোখ যাতে পরিতৃপ্ত হয় সেসব বস্তু তোমাকে দেয়া হল। সে বলবে, হে আল্লাহ আমি সন্তুষ্ট হলাম। হযরত মূসা (আ) বলেন, হে রব! বেহেশতে সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান কে হবে? মহান আল্লাহ বলেন, যাদেরকে আমি মর্যাদা আমি মর্যাদা দিতে চাইব আমি নিজে তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করব। তাদেরকে সীলমোহর দিয়ে চিহ্নিত কর। তাদেরকে এমন কিছু দেয়া হবে যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কন কোন দিন শোনেনি এবং মানবের কল্পনা তার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারে না। (মুসলিম)
১৮৮৬. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, আমি জানি কোন দোযখী সর্বশেষ দোযখ হতে বেরিয়ে আসবে অথবা কোন বেহেশতী সর্বশেষ বেহেশত যাবে। এক ব্যক্তি নিতম্বের উপর ভর দিয়ে হেচড়েতে হেচড়েতে দোযখ হতে বেরিয়ে আসবে। মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর তাকে বলবেন, যাও বেহেশতে গমন কর। সে বেহেশতের কাছে গেল তবে তা ইতোমধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। সে ফিরে এসে বলবে, হে রব বেহেশত তো পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি গিয়ে বেহেশতে যাও। সে আবার যাবে। কিন্তু তার মনে হবে বেহেশত তো ইতোমধ্যেই পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। সে ফিরে এসে বলবে, হে রব! আমি দেখলাম বেহেশত ভরপুর হয়ে গিয়েছে। মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি বেহেশত যাও। কেননা, তোমার জন্য পৃথিবীর সম পরিমাণ এবং অনুরূপ আরো দশ গুণ অথবা আমার সাথে হাসি-ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি সব কিছুর একচ্ছল মালিক। ইবন মাসউদ (রা) বলেন আমি দেখলাম রাসূলুল্লাহ (স) এ কথা বলে এনমভাবে হাসলেন যে তার পবিত্র দাত দেখা যাচ্ছিল । তিনি বলছিলেন এই ব্যক্তি হবে সবচেয়ে কম মর্যদার বেহেশতী । ( বুখারী ও মুসলিম)
১৮৮৭. হযরত আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (স) ইরশাদ করেছেন বেহেশতের মধ্যে প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তির জন্য একক একটি ফাক মুক্তার তৈরি তাবু থাকবে। তার উচ্চতা হবে ষাট মাইল। ঈমানদার ব্যক্তির পরিবারের ব্যক্তিরা এর মধ্যে বসবাস করবে। মু’মিন ব্যক্তি তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করবে। কিন্তু তারা অপরের কারো সাক্ষাৎ পাবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
১৮৮৮. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) নবী করীম (স) থেকে বর্ণনা করেছেন। নবী করীম (স) ইরশাদ করেছেন বেহেশতের একটি গাছ রয়েছে। এক দ্রম্নতগামী ঘোড়ায় আরাহী হয়ে কোন ব্যক্তি যদি একাধারে একশ বছর চলতে থাকে, তবুও তা অতিক্রম করে শেষ করতে পারবে না। ( বুখারী ও মুসলিম)
১৮৮৯. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) নবী করীম (স) থেকে বর্ণনা করেছেন। নবী করীম (স) ইরশাদ করেছেন, বেহেশতবাসীরা তাদের উপরতলার কক্ষের ব্যক্তিদেরকে এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমনভাবে তোমরা পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জ্বল তারকাসমূহ দেখতে পাও। তাদের পরস্পরের মর্যাদার পার্থক্যের হেতুতে এরূপ হবে। সাহাবায়ে কেরাম (রা) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! নবীদের ঐ স্তরসমূহ যা অপর কেউ লাভ করবে না? তিনি বলেন, কেন পৌঁছতে পারবে না! সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার জান! যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং নবীদেরকে সত্য মেনে নিয়েছে তারা ঐ স্তরে যেতে সক্ষম হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
১৮৯০. হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, বেহেশতের একটি ধনুক স্থান দুনিয়াতে সূর্যের উদয় ও অস্তাচলের মধ্যবর্তী স্থানের সব কিছুর চাইতেও মহা মূল্যবান। ( বুখারী ও মুসলিম)
১৮৯১. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, বেহেশতের মধ্যে প্রতি শুক্রবারে একটি বাজার বসবে। বেহেশতাবাসীরা সেখানে যাবে। তখন উত্তর দিক হতে একটা বায়ু প্রবাহিত হয়ে তাদের চেহারা ও পোশাক-পরিচ্ছদ ছড়িয়ে পড়বে। আর তাতে তাদের রূপ সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় যখন তারা নিজেদের সংসার-পরিজনের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে তখন তারা বলবে, আল্লাহর শপথ! তোমাদের রূপ-সৌন্দর্য অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে তারাও বলবে আল্লাহর শপথ! তোমাদেরও রূপ-সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ( মুসলিম)
১৮৯২. হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, “বেহেশতবাসীরা তাদের কক্ষে বসে একে অপরকে এমনভাবে দেখতে পাবে যেরূপ তোমরা আকাশের তারকাসমূহকে দেখতে পাও।” (বুখারী ও মুসলিম)
১৮৯৩. হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম (স) -এর সাথে এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলাম। তিনি সেখানে বেহেশতের বর্ণনা দিলেন। পরিশেষে তিনি বলেন, বেহেশতের মধ্যে এমন সব বস্তু রয়েছে যা চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান (তার র্বণনা) কখনো শুনেনি এবং কারো অন্তর কখনো তা কল্পনা করতে সক্ষম হয়নি। এরপর তিনি এ আয়াত এ আয়াত পাঠ করেন। যার অর্থ হল “তাদের পিঠ শয্যা হতে পৃথক হয়ে থাকে, নিজেদের রবকে ডাকে ভয় ও আশা সহকারে। আমি তাদেরকে যা কিছু দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে। তাছাড়া তাদের কাজের প্রতিফল স্বরূপ তাদের চোখ শীতলকারী যেসব সামগ্রী গোপন রাখা হয়েছে, যা কোন প্রাণীই অবগত নয়।” (সূরা আস-সাজদাঃ ১৬-১৭) (বুখারী ও মুসলিম) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
১৮৯৪. হযরত আবু সাঈদ ও আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, বেহেশতবাসীরা বেহেশতের যাওয়ার পর একজন ঘোষক ঘোষণা দেবে, তোমরা চিরকাল সুস্থ থাকবে, আর কখনো অসুস্থ হবে না; তোমরা চিরকাল তরুন থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না, তোমার চিরকাল সুখে থাকবে, কখনো দুঃখ কষ্ট পাবে না।” (মুসলিম)
১৮৯৫. হযরত আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, বেহেশতে তোমাদের একজন সর্বনিম্ন মর্যাদার ব্যক্তিকে বলা হবে, তুমি চাও। এরপর সে চাইবে, আরও চাইবে। তাকে আল্লাহর তায়ালা বলবেন, তুমি কি চেয়েছ? সে বলবে? হ্যাঁ, আমি চেয়েছি। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে বলবেন, তুমি যা চেয়েছ তা তার সমপরিমাণ অতিরিক্ত আরো তোমাকে দেয়া হল। ( মুসলিম)
১৮৯৬. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (আ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, মহান ও সর্ব শক্তিমান আল্লাহ বেহেশতবাসীদেরকে বলবেন, হে বেহেশতের অধিবাসীগণ! তারা বলবে, আমরা উপস্থিত আছি। হে আমাদের প্রতিপালক! সব কল্যাণ তোমার হতে নিহিত! মহান আল্লাহ বলবেন, তোমার কি সন্তুষ্ট হয়েছ। তার বলবে, হে আমাদের রব! আমরা কেন খুশী হব না? তুমি আমাদেরকে যে অনুগ্রহ দিয়েছে তা অপর কোন সৃষ্টিকে দাও নি। মহান আল্লাহ বলবেন, এর চেয়ে উত্তম বস্তু আমি কি তোমাদের দেব না? তারা বলবে, এর চেয়ে উত্তম ও উন্নত বস্তু আর কি হতে পারে? মহান আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদের উপর আমার সন্তোষ অবতীর্ণ করব। এরপর আমি আর কখনো তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হব না। ( বুখারী ও মুসলিম )
১৮৯৭. হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স) -এর কাছে ছিলাম। তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালেন এবং বলেন, তোমরা এখন চাঁদকে যেভাবে দেখতে পাচ্ছ, অচিরেই তোমাদের রবকে ও স্বচক্ষে সেভাবে দেখতে পাবে। তাঁর দর্শনে তোমরা কোনরূপ ক্লেশ বা অসুবিধা অনুভব করবে না। ( বুখারী ও মুসলিম)
১৮৯৮. হযরত সুহাইব (র) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, বেহেশতবাসীরা বেহেশতে যাওয়ার পর কল্যাণ ও বরকতের মালিক আল্লাহর তায়ালা তোমার বলবেন, তোমরা কি অধিক আর কিচু চাও? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করে দেন নি? আপনি আমাদের বেহেশতে গমন করান নি এবং দোযখের শাস্তি হতে মুক্তি দেন নি? এ সময় আল্লাহ তায়ালা পর্দা সারিয়ে দেবেন। বেহেশতীদেরকে আল্লাহ দর্শন লাভের চেয়ে অধিক প্রিয় বস্তু আর কিছুই দেয়া হবে না। (মুসলিম)
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
“অবশ্য যেসব লোক ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের ঈমানের করণে তাদের প্রভু তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতে যার নিন্মদেশে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহমান তাদেরকে স্থান দিবেন। তাদের দুআ হবেঃ “পবিত্র তোমার সত্তা হে আল্লাহ! তাদের সাদর আহবান হবে, শান্তি বর্ষিত হোক। তাদের সব কথার সমাপ্তি হবে একথা সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য।” (সূরা ইউনুসঃ ৯-১০)
হে আল্লাহ আপনার রহমত ও অনুগ্রহ বর্ষণ করুন আপনার বান্দাহ ও রাসূল এবং উম্মী (নিরক্ষর) নবী মুহাম্মাদের উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন, স্ত্রীগণ, সন্তান-সন্ততি তাঁর সঙ্গীদের প্রতিও যেভাবে আপনি আপনার অনুগ্রহে ধন্য করেছেন ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনকে। হে আল্লাহ! আপনি বরকত ও প্রাচুর্য দান করুন উম্মী নবী মুহাম্মাদকে, তাঁর পরিবার পরিজন, স্ত্রীগণ, সন্তান-সন্ততি ও সাহাবাদের প্রতি, যেভাবে ্আপনি জগতবাসীদের মধ্যে থেকে ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনকে বরকত ও প্রাচুর্য দান করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি বহুল প্রশংসিত ও মহা সম্মানিত।
ইমাম নববী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ “আমি এই কিতাব সংকলনের কাজ হিজরী ছয়শ’ সত্তর সনের ৪ঠা রমজান শেষ করি।”