মহান আল্লাহ বলেনঃ
তোমর প্রভুর (রব্ব) শপথ! তারা কখনো ঈমানদার রূপে গণ্য হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাকে তাদের বিরোধের মীমাংসাকারী হিসেবে মেনে না নেবে; তারপর তুমি যে রায় দেবে তারা সে সম্পর্কে মনে কোনো প্রকার দ্বিধা বোধ করবে না এবং পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে তা মেনে নেবে। (সূরা নিসাঃ ৬৫)
মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
মু’মিনদেরকে যখন কোনো ব্যাপারে ফায়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও রাসূলের দিকে আহবান জানান হয়, তখন তারা এ কথাই বলে যে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম; আর এসব লোকই হবে কল্যাণপ্রাপ্ত। (সূরা নূরঃ ৫১)
১৬৮. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সূরা বাকারার শেষ রুকু’র প্রথম আয়াতটি অবতীর্ণ হলে তা সাহাবীগণের কাছে খুবই কঠিন বলে প্রতীয়মান হলো। আয়াতটি হলো এইঃ লিল্লা-হি-মা-ফিস্ সামা-ওয়াতি…. ওয়াল্লাহু ‘আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর; অর্থ্যাৎ ‘আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহর জন্য। তোমার নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করো বা গোপন রাখো, আল্লাহ তোমাদের থেকে তার হিসাব নেবেনই। (সূরা বাকারাঃ ২৮১ আয়াত) সাহাবীগণ তখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সাধ্যমতো নামায, রোযা, সাদকাহ, জিহাদ ইত্যাকার কাজগুলোর দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে; অথচ আপনার ওপর এই আয়াত নাযিল হয়েছে আর আমাদের তা করার সামর্থ্য নেই। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের পূর্বে ইহুদী ও খৃস্টানরা যেমন বলেছিল, ‘আমরা শুনলাম এবং অমান্য করলাম, তোমরাও কি তেমনই করতে চাও? তোমরা বরং একথা বলো; আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম; তোমার (অর্থ্যাৎ আল্লাহর) কাছে ক্ষমা চাও হে প্রভু! আর আমাদের তো তোমারই কাছে ফিরে যেতে হবে। লোকেরা যখন এ আয়াতটি পড়লো এবং এতে তাদের জিহ্বায় নম্রতার সৃষ্টি হলো, (অর্থ্যাৎ আনুগত্য ব্যক্ত করলো) তখন আল্লাহ এ আয়াতের পর নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল করলেন; রাসূলের নিকট তাঁর প্রভুর (রব্ব-এর) কাছ থেকে যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি রাসূল ও মু’মিনগণ ঈমান এনেছে। তারা সবাই আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, (তাঁর) কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না এবং তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমার প্রভু! আমরা তোমার মার্জনা চাই; আর তোমার নিকটই তো ফিরে যেতে হবে (আমাদের)। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫)
সাহাবীগণ যখন এই কাজটুকু করলেন, তখন আল্লাহ সুবহানাহু উক্ত আয়াতে নির্দেশ পরিবর্তন করে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করলেন; আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অধিক কষ্ট দেন না। তার জন্যে (প্রত্যেকের জন্যে) তার কাজের সওয়াব রয়েছে এবং আযাবও রয়েছে। (তারা বলে) ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা ভুল-ভ্রান্তি করে থাকলে সেজন্যে তুমি আমাদের পাকড়াও করো না।’ আল্লাহ বলেনঃ ‘আচ্ছা তা-ই হবে’ তারা বলেন, হে আমাদের প্রভু! আমাদের পূর্বেকার লোকদের ওপর যেমন তুমি (কঠিন নির্দেশের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলে তেমন কোন বোঝা আমাদের ওপর চাপিও না।’ আল্লাহ বলেনঃ ‘আচ্ছা, তা-ই হবে’ তারা বলেঃ ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের ওপর এমন কোন দায়িত্বভার চাপিও না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আর (তুমি) আমাদের গুনাহের কালিমা মুছে দাও, আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও, আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করো। তুমি তো আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফিরদের ওপর আমাদেরকে বিজয় দান করো। (সূরা বাকারাঃ ২৮৬) আল্লাহ বলেনঃ ‘আচ্ছা, তা-ই হবে।’ (মুসলিম)