সদাকাহ দেয়ার জন্য উৎসাহ দান।

৫৭৭. যায়দ ইবনি ওয়াহ্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহ্‌র কসম! আবু যার [রাদি.] রাবাযাহ নামক স্থানে আমাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, একদা আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে এশার সময় মাদীনায় হাররা নামক স্থান দিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা উহুদ পাহাড়ের সম্মুখীন হলে তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবু যার! আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার নিকট উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা আসুক আর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ব্যতীত এক দীনার পরিমাণ সোনাও এক রাত অথবা তিন রাত পর্যন্ত আমার হাতে থেকে যাক। বরং আমি পছন্দ করি যে, আমি এগুলো আল্লাহ্‌র বান্দাদের এভাবে বিলিয়ে দেই। [কিভাবে দেবেন] তা তাহাঁর হাত দিয়ে তিনি দেখালেন। অতঃপর বললেনঃ হে আবু যার! আমি বললামঃ

لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ

লাব্বাইকা ওয়া সদাইকা, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! তখন তিনি বললেনঃ দুনিয়াতে যারা অধিক সম্পদশালী, আখিরাতে তারা হইবেন অনেক কম সাওয়াবের অধিকারী। তবে যারা তাহাদের সম্পদকে এভাবে, এভাবে বিলিয়ে দেবে। তারা হইবেন এর ব্যতিক্রম। অতঃপর তিনি আমাকে বললেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত, হে আবু যার! তুমি এ স্থানেই থাকো। এখান থেকে কোথাও যেয়ো না। এরপর তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন, এমনকি আমার চোখের আড়ালে চলে গেলেন। এমন সময় এটা শব্দ শুনলাম। এতে আমি শংকিত হয়ে পড়লাম যে, আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ] কোন বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়লেন কিনা? তাই আমি সে দিকে অগ্রসর হইতে চাইলাম। কিন্তু সাথে সাথেই আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]-এর নিষেধাজ্ঞা যে কোথায়ও যেয়ো না মনে পড়লো এবং আমি থেমে গেলাম। এরপর তিনি ফিরে আসলে আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আমি একটা আওয়ায শুনে শংকিত হয়ে পড়লাম যে, আপনি সেখানে গিয়ে কোন বিপদে পড়লেন কিনা। কিন্তু আপনার কথা স্মরণ করে থেমে গেলাম। তখন নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তিনি ছিলেন জিবরীল। তিনি আমার নিকট এসে সংবাদ দিলেন যে, আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে বেহেশ্তে প্রবেশ করিবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! যদিও সে ব্যক্তি ব্যভিচার করে? যদিও সে ব্যক্তি চুরি করে? তিনি বললেনঃ সে যদিও ব্যভিচার করে, যদিও চুরি করে থাকে তবুও।

[বোখারী পর্ব ৭৯ : /৩ হাঃ ৬২৬৮, মুসলিম ১২/৯ হাঃ ৯৯৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৫৭৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাতে আমি একবার বের হলাম। তখন নাবী [সাঃআঃ]-কে একাকী চলতে দেখলাম, তাহাঁর সঙ্গে কোন লোক ছিল না। আমি মনে করলাম, তাহাঁর সঙ্গে কেউ চলুক হয়ত তিনি তা অপছন্দ করবেন। তাই আমি চাঁদের ছায়াতে তাহাঁর পেছনে পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি পেছনের দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এ কে? আমি বললাম, আমি আবু যার। আল্লাহ্ তাআলা আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন। তিনি বললেনঃ ওহে আবু যার, এসো। আমি তাহাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ চললাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ অধিকের অধিকারীরাই ক্বিয়ামাতের দিন স্বল্পাধিকারী হইবে। অবশ্য যাদের আল্লাহ্ সম্পদ দান করেন এবং তারা তা ডানে, বামে, আগে ও পেছনে ব্যয় করে আর মঙ্গলজনক কাজে তা লাগায়, [তারা ব্যতীত]। অতঃপর আমি আরও কিছুক্ষণ তাহাঁরসঙ্গে চলার পর তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি এখানে বসে থাক। [একথা বলে] তিনি আমাকে চতুর্দিকে প্রস্তরঘেরা একটি খোলা জায়গায় বসিয়ে দিয়ে বললেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই বসে থেকো। তিনি বলেন, এরপর তিনি প্রস্তরময় প্রান্তরের দিকে চলে গেলেন। এমন কি তিনি আমার দৃষ্টির আগোচরে চলে গেলেন। এবং বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি ফিরে আসার সময় আমি তাঁকে বলিতে শুনলাম, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে যিনা করে। অতঃপর তিনি যখন ফিরে এলেন, তখন আমি আর ধৈর্য ধারণ করিতে না পেরে তাঁকে জিজ্ঞেস করিতে বাধ্য হলাম যে, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! আল্লাহ্ আমাকে আপনার প্রতি কুরবান করুন। আপনি এই প্রস্তর প্রান্তরে কার সাথে কথা বলিলেন? কাউকে তো আপনার কথার উত্তর দিতে শুনলাম না। তখন তিনি বললেনঃ তিনি ছিলেন জিব্রীল [আ.]। তিনি এই কংকরময় প্রান্তরে আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি বলিলেন, আপনার উম্মাতদের সুসংবাদ দেবেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সঙ্গে কাউকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ওহে জিব্রীল! যদিও সে চুরি করে, আর যদিও সে যিনা করে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি বললামঃ যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আবার আমি বললামঃ যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। যদি সে শরাবও পান করে। নযর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]….আবুদ্ দারদা [রাদি.] থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবুদ্ দারদা থেকে আবু সালিহের বর্ণনা মুরসাল, যা সহীহ নয়। আমরা পরিচয়ের জন্য এনেছি। ঈমাম বোখারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তবে এ সুসংবাদ এ অবস্থায় দেয়া হয়েছে, যদি সে তাওবাহ করে আর মৃত্যুকালে লা-ইল্লাল্লাহ্ বলে।

[বোখারী পর্ব ৮১ : /১৩ হাঃ ৬৪৪৩, মুসলিম ১২/৯ হাঃ ৯৯৬] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Was this article helpful?

Related Articles