যুদ্ধে নিহত ব্যক্তির মালামালের অধিকতর হকদার হচ্ছে হত্যাকারী।

১১৪৪. আবু ক্বাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, হুনাইনের বছর আমরা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন শত্রুর সম্মুখীন হলাম, তখন মুসলিম দলের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু হল। এমন সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে একজন মুসলমানের উপর চেপে বসেছে। আমি ঘুরে তার পেছনের দিক দিয়ে এসে তরবারী দ্বারা তার ঘাড়ের রগে আঘাত করলাম। তখন সে আমার দিকে এগিয়ে এল এবং আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল যে, আমি তাতে মৃত্যুর আশংকা করলাম। মৃত্যু তাকেই ধরল এবং আমাকে ছেড়ে দিল। অতঃপর আমি উমার [রাদি.]-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললাম, লোকদের কী হয়েছে? উমার [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ্‌র হুকুম।

অতঃপর লোকজন ফিরে এলো এবং আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বসলেন, তখন তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট হইতে প্রাপ্ত মাল-সামান তারই প্রাপ্য। তখন আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছ যে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? অতঃপর আমি বসে পড়লাম। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আবার বলিলেন, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট হইতে প্রাপ্ত মাল-সামান তারই প্রাপ্য। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছ যে, আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? অতঃপর আমি বসে পড়লাম। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তৃতীয়বার ঐরূপ বলিলেন, আমি আবার দাঁড়ালাম, তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, হে আবু ক্বাতাদাহ! তোমার কী হয়েছে? আমি তখন পুরো ঘটনা বললাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আবু ক্বাতাদাহ ঠিক বলেছে। সে ব্যক্তির নিকট হইতে প্রাপ্ত মাল-সামান আমার নিকট আছে। আপনি আমার পক্ষ হইতে একে সম্মত করিয়ে দিন। তখন আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] বলিলেন, কক্ষনো না, আল্লাহ্‌র কসম! আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] কখনো এমন করবেন না যে, আল্লাহ্‌র সিংহদের মধ্যে হইতে কোন সিংহ আল্লাহ ও রসূল [সাঃআঃ]-এর পক্ষে যুদ্ধ করিবে আর রসূল [সাঃআঃ] নিহত ব্যক্তির মাল-সামান তোমাকে দিবেন! তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আবু বকর ঠিকই বলেছে। ফলে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তা আমাকে দিলেন। আমি তা হইতে একটি বর্ম বিক্রি করে বানূ সালমায় একটি বাগান কিনি। এটাই ইসলামে প্রবিষ্ঠ হওয়ার পর আমার প্রথম সম্পত্তি, যা আমি পেয়েছিলাম।

বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৩১৪২; মুসলিম ৩২/১৩ হাঃ ১৭৫১


১১৪৫. আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আমি বদর যুদ্ধে সারিতে দাঁড়িয়ে আছি, আমি আমার ডানে বামে তাকিয়ে দেখলাম, অল্প বয়স্ক দুজন আনসার যুবকের মাঝখানে আছি। আমার আকাঙক্ষা ছিল, তাহাদের চেয়ে শক্তিশালীদের মধ্যে থাকি। তখন তাহাদের একজন আমাকে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করিল, চাচা! আপনি কি আবু জাহ্‌লকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তবে ভাতিজা; তাতে তোমার দরকার কী? সে বলিল, আমাকে জানানো হয়েছে যে, সে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে গালাগালি করে। সে মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি যদি তাকে দেখিতে পাই, তবে আমার দেহ তার দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইবে না যতক্ষণ না আমাদের মধ্যে যার মৃত্যু আগে নির্ধারিত, সে মারা যায়। আমি তার কথায় আশ্চর্য হলাম। তা শুনে দ্বিতীয়জন আমাকে খোঁচা দিয়ে ঐ রকমই বলিল। তৎক্ষণাৎ আমি আবু জাহলকে দেখলাম, সে লোকজনের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন আমি বললাম, এই যে তোমাদের সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে। তারা তৎক্ষণাৎ নিজের তরবারী নিয়ে তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাকে আঘাত করে হত্যা করিল। অতঃপর আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর দিকে ফিরে এসে তাঁকে জানালো। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাদের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছে? তারা উভয়ে দাবী করিল, আমি তাকে হত্যা করেছি। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাদের তরবারি তোমরা মুছে ফেলনি তো? তারা উভয়ে বলিল, না। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাহাদের উভয়ের তরবারী দেখলেন এবং বলিলেন, তোমরা উভয়ে তাকে হত্যা করেছো। অবশ্য তার নিকট হইতে প্রাপ্ত মালামাল মুআয ইবনি আম্‌র ইবনি জামূহের জন্য। তারা দুজন হলো, মুআয ইবনি আফরা ও মুআয ইবনি আম্‌র ইবনি জামূহ। মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, তিনি ইউসুফ ও তাহাঁর পিতা ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে সৎ ব্যক্তি হিসেবে শুনেছেন।

বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৩১৪১; মুসলিম ৩২/১৩ হাঃ ১৭৫২

Was this article helpful?

Related Articles