মুহরিম ব্যক্তির জন্য শিকার করা হারাম।

৭৪২. সাআব ইবনি জাস্সামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি [সাআব ইবনি জাস্সামা] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর জন্য একটি বন্য গাধা হাদিয়া পাঠালেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তখন আবওয়া কিংবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে ছিলেন। তিনি হাদিয়া ফেরত পাঠালেন। পরে তার বিষন্ন মুখ দেখে বলিলেন, শুন! আমরা ইহরাম অবস্থায় না থাকলে তোমার হাদিয়া ফেরত দিতাম না।

[বোখারী পর্ব ২৮ : /৬ হাঃ ২৫৭৩, মুসলিম হাঃ] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৭৪৩. আবু কাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মাদীনাহ হইতে তিন মারহালা দূরে অবস্থিত কাহা নামক স্থানে আমরা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম। নাবী [সাঃআঃ] ও আমাদের কেউ ইহরামধারী ছিলেন আর কেউ ছিলেন ইহরামবিহীন। এ সময় আমি আমার সাথী সাহাবীদেরকে দেখলাম তাঁরা একে অন্যকে কিছু দেখাচ্ছেন। আমি তাকাতেই একটি বন্য গাধা দেখিতে পেলাম। [রাবী বলেন] এ সময় তার চাবুকটি পড়ে গেল। [তিনি আনিয়ে দেয়ার কথা বললে] সকলেই বলিলেন, আমরা মুহরিম। তাই এ কাজে আমরা তোমাকে সাহায্য করিতে পারব না। অবশেষে আমি নিজেই তা উঠিয়ে নিলাম, এরপর টিলার পিছন দিক হইতে গাধাটির কাছে এসে তা শিকার করে সাহাবীদের কাছে নিয়ে আসলাম। তাহাদের কেউ বলিলেন, খাও, আবার কেউ বলিলেন, খেয়ো না। সুতরাং গাধাটি আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট নিয়ে আসলাম। তিনি আমাদের সকলের আগে ছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ খাও, এতো হালাল।

[বোখারী পর্ব ২৮ : /৪ হাঃ ১৮২৩, মুসলিম হাঃ] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৭৪৪. আবদুল্লাহ ইবনি আবু কাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার পিতা হুদাইবিয়ার বছর [শত্রুদের তথ্য অনুসন্ধানের জন্য] বের হলেন। নাবী [সাঃআঃ]-এর সহাবীগণ ইহরাম বাঁধলেন কিন্তু তিনি ইহরাম বাঁধলেন না। নাবী [সাঃআঃ]-কে বলা হল, একটি শত্রুদল তাহাঁর সাথে যুদ্ধ করিতে চায়। নাবী [সাঃআঃ] সামনে অগ্রসর হইতে লাগলেন। এ সময় আমি তাহাঁর সহাবীদের সাথে ছিলাম। হঠাৎ দেখি যে, তারা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করছে। আমি তাকাতেই একটি বন্য গাধা দেখিতে পেলাম। অমনিই আমি বর্শা দিয়ে আক্রমণ করে তাকে ধরাশায়ী করে ফেলি। সঙ্গীদের নিকট সহযোগিতা কামনা করলে সকলে আমাকে সহযোগিতা করিতে অস্বীকার করিল। এরপর আমরা সকলেই ঐ বন্য গাধার গোশত খেলাম। এতে আমরা নাবী [সাঃআঃ] হইতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার আশঙ্কা করলাম। তাই নাবী [সাঃআঃ]-এর সন্ধানে আমার ঘোড়াটিকে কখনো দ্রুত কখনো আস্তে চালাচ্ছিলাম। মাঝ রাতের দিকে গিফার গোত্রের এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ হলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, নাবী [সাঃআঃ]-কে কোথায় রেখে এসেছ? সে বললো, তাহিন নামক স্থানে আমি তাঁকে রেখে এসেছি। এখন তিনি সুকয়া নামক স্থানে কায়লূলায় [দুপুরের বিশ্রামে] আছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সহাবীগণ আপনার প্রতি সালাম পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমত কামনা করিয়াছেন। তাঁরা আপনার হইতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তাই আপনি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করুন। অতঃপর আমি পুনরায় বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি একটি বন্য গাধা শিকার করেছি। এখনো তার বাকী অংশটুকু আমার নিকট রয়েছে। নাবী [সাঃআঃ] কাওমের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা খাও। অথচ তাঁরা সকলেই তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন।

[বোখারী পর্ব ২৮ : /২ হাঃ ১৮২১, মুসলিম ১৫/৮, হাঃ ১১৯৬] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৭৪৫.আবু কাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] হাজ্জে যাত্রা করলে তাঁরাও সকলে যাত্রা করিলেন। তাঁদের হইতে একটি দলকে নাবী [সাঃআঃ] অন্য পথে পাঠিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে আবু কাতাদাহ্ [রাদি.]-ও ছিলেন। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা সমুদ্র তীরের রাস্তা ধরে অগ্রসর হইবে আমাদের পরস্পর সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত। তাই তাঁরা সকলেই সমুদ্র তীরের পথ ধরে চলতে থাকেন। ফিরার পথে তাঁরা সবাই ইহরাম বাঁধলেন কিন্তু আবু কাতাদাহ্ [রাদি.] ইহরাম বাঁধলেন না। পথ চলতে চলতে হঠাৎ তাঁরা কতগুলো বন্য গাধা দেখিতে পেলেন। আবু কাতাদাহ্ [রাদি.] গাধাগুলোর উপর হামলা করে একটি মাদী গাধাকে হত্যা করে ফেললেন। এরপর এক স্থানে অবতরণ করে তাঁরা সকলেই এর গোশত খেলেন। অতঃপর বলিলেন, আমরা তো মুহরিম, এ অবস্থায় আমরা কি শিকার্য জন্তুর গোশত খেতে পারি? তাই আমরা গাধাটির অবশিষ্ট গোশত উঠিয়ে নিলাম। তাঁরা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট পৌঁছে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা ইহরাম বেঁধেছিলাম কিন্তু আবু কাতাদাহ [রাদি.] ইহরাম বাঁধেননি। এ সময় আমরা কতকগুলো বন্য গাধা দেখিতে পেলাম। আবু কাতাদাহ [রাদি.] এগুলোর উপর আক্রমণ করে একটি মাদী গাধা হত্যা করে ফেললেন। এক স্থানে অবতরণ করে আমরা সকলেই এর গোশত খেয়ে নিই। এরপর বললাম, আমরা তো মুহরিম, এ অবস্থায় আমরা কি শিকারকৃত জানোয়ারের গোশত খেতে পারি? এখন আমরা এর অবশিষ্ট গোশত নিয়ে এসেছি। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাদের কেউ কি এর উপর আক্রমণ করিতে তাকে আদেশ বা ইঙ্গিত করেছ? তাঁরা বলিলেন, না, আমরা তা করিনি। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ তাহলে বাকী গোশত তোমরা খেয়ে নাও

। [বোখারী পর্ব ২৮ : /৫ হাঃ ১৮২৪, মুসলিম হাঃ] ওমরা হজের নিয়ম -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Was this article helpful?

Related Articles