মানুষ তার মায়ের পেটে সৃষ্টির পদ্ধতি, তার রিযক, আয়ু, কর্ম এবং তার দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য লেখা।

৪৬/১.

১৬৯৫. যায়দ ইব্‌নু ওয়াহ্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, সত্যবাদী হিসেবে গৃহীত আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ঐভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। অতঃপর তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়ে (আগের মত চল্লিশ দিন) থাকে। অতঃপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাঁকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়। তাঁকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, তার আমল, তার রিযক, তার আয়ু এবং সে কি পাপী হবে না নেককার হবে। অতঃপর তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেয়া হয়। কাজেই তোমাদের কোন ব্যক্তি আমল করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তার এবং জান্নাতের মাঝে মাত্র একহাত পার্থক্য থাকে। এমন সময় তার আমলনামা তার উপর জয়ী হয়। তখন সে জাহান্নামবাসীর মত আমল করে। আর একজন আমল করতে করতে এমন স্তরে পৌঁছে যে, তার এবং জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত তফাৎ থাকে, এমন সময় তার আমলনামা তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতবাসীর মত আমল করে। (বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩২০৮; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ১ হাঃ ৩৬৪৩)


১৬৯৬. আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা মাতৃগর্ভের জন্যে একজন ফেরেশতা নির্ধারণ করেছেন। তিনি (পর্যায়ক্রমে) বলতে থাকেন, হে রব! এখন বীর্য-আকৃতিতে আছে। হে রব! এখন জমাট রক্তে পরিণত হয়েছে। হে রব! এখন মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন তার সৃষ্টি পূর্ণ করতে চান, তখন জিজ্ঞেস করেনঃ পুরুষ, না স্ত্রী? সৌভাগ্যবান, না দুর্ভাগা? রিযক ও বয়স কত? আল্লাহর রাসূল বলেছেনঃ তার মাতৃগর্ভে থাকতেই তা লিখে দেয়া হয়। (বুখারী পর্ব ৬ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৩১৮; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ১, হাঃ ২৬৪৬)


১৬৯৭. ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা বাকী‘উল গারক্বাদ (ক্ববরস্থানে) এক জানাযায় উপস্থিত ছিলাম। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আগমন করলেন। তিনি উপবেশন করলে আমরাও তাঁর চারদিকে বসে পড়লাম। তাঁর হাতে একটি ছড়ি ছিল। তিনি নীচের দিকে তাকিয়ে তাঁর ছড়িটি দ্বারা মাটি খুঁড়তে লাগলেন। অতঃপর বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, অথবা বললেনঃ এমন কোন সৃষ্ট প্রাণী নেই, যার জন্য জান্নাত ও জাহান্নামে জায়গা নির্ধারিত করে দেয়া হয়নি আর এ কথা লিখে দেয়া হয়নি যে, সে দুর্ভাগা হবে কিংবা ভাগ্যবান। তখন এক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তা হলে কি আমরা আমাদের ভাগ্যলিপির উপর ভরসা করে ‘আমল করা ছেড়ে দিব না? কেননা, আমাদের মধ্যে যারা ভাগ্যবান তারা অচিরেই ভাগ্যবানদের ‘আমলের দিকে ধাবিত হবে। আর যারা দুর্ভাগা তারা অচিরেই দুর্ভাগাদের ‘আমলের দিকে ধাবিত হবে। তিনি বললেনঃ যারা ভাগ্যবান, তাদের জন্য সৌভাগ্যের ‘আমল সহজ করে দেয়া হয় আর ভাগ্যাহতদের জন্য দুর্ভাগ্যের ‘আমল সহজ করে দেয়া হয়। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ “কাজেই যে দান করে এবং তাক্ওয়া অবলম্বন করে” (সূরাহ লাইল ৯২/৫)। (বুখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৮২ হাদীস নং ১৩৬২; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ১, হাঃ ২৬৪৭)


১৬৯৮. ‘ইমরান ইব্‌নু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! জাহান্নামীদের থেকে জান্নাতীদেরকে চেনা যাবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। সে বলল, তাহলে ‘আমালকারীরা ‘আমাল করবে কেন? তিনি বললেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তি ঐ ‘আমালই করে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অথবা যা তার জন্য সহজ করা হয়েছে। (বুখারী পর্ব ৮২ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৬৫৯৬; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ১, হাঃ ২৬৪৯)


১৬৯৯. সাহ্‌ল ইব্‌নু সা‘দ সা‘ঈদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোন ব্যক্তি জান্নাতবাসীর মত আমল করতে থাকে, আসলে সে জাহান্নামী হয় এবং তেমনি মানুষের বাহ্যিক বিচারে কোন ব্যক্তি জাহান্নামীর মত আমল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতী হয়।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৭৭ হাদীস নং ২৮৯৮; মুসলিম ৪৬ অধ্যায় ১, হাঃ ১১২)


 

Was this article helpful?

Related Articles