মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা এবং তা আঙ্গুরের রস, পাকা খেজুর, শুকনা খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি দ্বারা তৈরি হোক যা মাতাল করে।

১২৯২.আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের গনীমতের মালের মধ্য হইতে যে অংশ আমি পেয়েছিলাম, তাতে একটি জওয়ান উটনীও ছিল। আর নাবী [সাঃআঃ] খুমুসের মধ্য হইতে আমাকে একটি জওয়ান উটনী দান করেন। আর আমি যখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর কন্যা ফাতিমাহ [রাদি.]-এর সঙ্গে বাসর যাপন করব, তখন আমি বানূ কায়নুকা গোত্রের এক স্বর্ণকারের সঙ্গে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হলাম যে, সে আমার সঙ্গে যাবে এবং আমরা উভয়ে মিলে ইযখির ঘাস সংগ্রহ করে আনব। আমার ইচ্ছে ছিল তা স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রি করে তা দিয়ে আমার বিবাহের ওয়ালীমা সম্পন্ন করব। ইতোমধ্যে আমি যখন আমার জওয়ান উটনী দুটির জন্য আসবাবপত্র যেমন পালান, থলে ও রশি ইত্যাদি একত্রিত করছিলাম, আর আমার উটনী দুটি এক আনসারীর ঘরের পার্শ্বে বসা ছিল। আমি আসবাবপত্র যোগাড় করে এসে দেখি উট দুটির কুঁজ কেটে ফেলা হয়েছে এবং কোমরের দিকে পেট কেটে কলিজা বের করে নেয়া হয়েছে। উটনী দুটির এ হাল দেখে আমি অশ্রু চেপে রাখতে পারলাম না। আমি বললাম, কে এমনটি করেছে? লোকেরা বলিল, হামযা ইবনি আবদুল মুত্তালিব এমনটি করেছে। সে এ ঘরে আছে এবং শরাব পানকারী কতিপয় আনসারীর সঙ্গে আছে। আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট চলে গেলাম। তখন তাহাঁর নিকট যায়দ ইবনি হারিসা [রাদি.] উপস্থিত ছিলেন। রাসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমার চেহারা দেখে আমার মানসিক অবস্থা উপলব্ধি করিতে পারলেন। তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমি আজকের মত দুঃখজনক অবস্থা দেখেনি। হামযাহ আমার উট দুটির উপর অত্যাচার করেছে। সে দুটির কুঁজ কেটে ফেলেছে এবং পাঁজর চিরে ফেলেছে। আর সে এখন অমুক ঘরে শরাব পানকারী দলের সঙ্গে আছে। তখন নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর চাদরখানি আনতে আদেশ করিলেন এবং চাদরখানি জড়িয়ে পায়ে হেঁটে চললেন। আমি এবং যায়দ ইবনি হারিসা [রাদি.] তাহাঁর অনুসরণ করলাম। হামযাহ যে ঘরে ছিল সেখানে পৌঁছে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তারা অনুমতি দিল। তখন তারা শরাব পানে বিভোর ছিল। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] হামযাহকে তার কাজের জন্য তিরস্কার করিতে লাগলেন। হামযাহ তখন পূর্ণ নেশাগ্রস্ত। তার চক্ষু দুটি ছিল রক্তলাল। হামযাহ তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর প্রতি তাকাল। অতঃপর সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল এবং তাহাঁর হাঁটু পানে তাকাল। আবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাহাঁর নাভির দিকে তাকাল। আবার সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাহাঁর মুখমণ্ডলের দিকে তাকাল। অতঃপর হামযাহ বলিল, তোমরাই তো আমার পিতার গোলাম। এ অবস্থা দেখে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বুঝতে পারলেন, সে এখন পূর্ণ নেশাগ্রস্ত আছে। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] পেছনে হেঁটে সরে আসলেন। আর আমরাও তাহাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসলাম।

[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩০৯১; মুসলিম ৩৬/১ হাঃ ১৯৭৯]


১২৯৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদিন আমি আবু তালহার বাড়িতে লোকজনকে শরাব পান করাচ্ছিলাম। সে সময় লোকেরা ফাযীখ শরাব ব্যবহার করিতেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে আদেশ করিলেন, যেন সে এ মর্মে ঘোষণা দেয় যে, সাবধান! শরাব এখন হইতে হারাম করে দেয়া হয়েছে। আবু তালহা [রাদি.] আমাকে বলিলেন, বাইরে যাও এবং সমস্ত শরাব ঢেলে দাও। আমি বাইরে গেলাম এবং সমস্ত শরাব রাস্তায় ঢেলে দিলাম। আনাস [রাদি.] বলেন, সে দিন মাদীনার অলিগলিতে শরাবের প্লাবন বয়ে গিয়েছিল। তখন কেউ কেউ বলিল, একদল লোক নিহত হয়েছে, অথচ তাহাদের পেটে শরাব ছিল। তখন এ আয়াত নাযিল হলঃ “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা পূর্বে যা কিছু পানাহার করেছে তার জন্য তাহাদের কোন গুনাহ হইবে না”-[আল-মা-য়িদাহ ৯৩]।

[বোখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ২৪৬৪; মুসলিম ৩৬/১, হাঃ ১৯৮০]

Was this article helpful?

Related Articles