ফাইয়ের মালের বিধান।

১১৪৬. উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বনূ নযীরের সম্পদ আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]-কে ফায় হিসেবে দান করেছিলেন। এতে মুসলিমগণ অশ্ব বা সাওয়ারী চালনা করেনি। এ কারণে তা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এ সম্পদ থেকে নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর পরিবারকে এক বছরের খরচ দিয়ে দিতেন এবং বাকী আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদের প্রস্তুতির জন্য হাতিয়ার ও ঘোড়া ইত্যাদিতে ব্যয় করিতেন।

বোখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ৮০ হাদীস নং ২৯০৪; মুসলিম ৩২/১৫ হাঃ ১৭৫৭


১১৪৭. মালিক ইবনি আওস ইবনি হাদাসান নাসিরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

[একদা] উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] তাকে ডাকলেন। এ সময় তার দ্বাররক্ষী ইয়ারফা এসে বলিল, উসমান, আবদুর রাহমান, যুবায়র এবং সাদ [রাদি.] আপনার নিকট আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলিলেন, হাঁ তাঁদেরকে আসতে বল। কিছুক্ষণ পরে এসে বলিল, আব্বাস এবং আলী [রাদি.] আপনার নিকট অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলিলেন, হাঁ। তাঁরা উভয়েই ভিতরে প্রবেশ করিলেন। আব্বাস[রাদি.] বলিলেন, হে, আমীরুল মুমিনীন! আমার এবং তাহাঁর মাঝে [বিবাদের] মীমাংসা করে দিন। বনূ নাযীরের সম্পদ থেকে আল্লাহ্ তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]-কে ফাই [বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ] হিসেবে যা দিয়েছিলেন তা নিয়ে তাহাদের উভয়ের মাঝে বিবাদ চলছিল। এ নিয়ে তারা তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন, [এ দেখে আগত] দলের সকলেই বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! তাহাদের মাঝে একটি মীমাংসা করে তাহাদের এ বিবাদ থেকে মুক্তি দিন। তখন উমার [রাদি.] বলিলেন, তাড়াহুড়া করবেন না। আমি আপনাদেরকে আল্লাহ্‌র নামে শপথ দিয়ে বলছি, যাঁর আদেশে আসমান ও যমীন স্থির আছে, আপনারা কি জানেন যে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] নিজের সম্বন্ধে বলেছেন, আমরা [নাবী [সাঃআঃ]গণ] কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না। যা রেখে যাই তা সদাকাহ হিসাবেই গণ্য হয়। এর দ্বারা তিনি নিজের কথাই বলিলেন। উপস্থিত সকলেই বলিলেন, হাঁ, তিনি এ কথা বলেছেন। উমার [রাদি.] আলী এবং আব্বাসের দিকে লক্ষ্য করে বলিলেন, আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহ্‌র কসম দিয়ে বলছি, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যে এ কথা বলেছেন, আপনারা তা জানেন কি? তারা উভয়েই বলিলেন, হাঁ। এরপর তিনি বলিলেন, এখন আমি আপনাদেরকে এ বিষয়ে আসল অবস্থা খুলে বলছি। ফাই এর কিছু অংশ আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]এর জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যা তিনি আর অন্য কাউকে দেননি। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ arbi “আল্লাহ্ ইয়াহূদীদের নিকট হইতে তাহাঁর রসূল কে যে ফায় দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা অশ্ব কিংবা উষ্ট্র চালিয়ে যুদ্ধ করনি; আল্লাহ্ তো তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]কে যার উপর ইচ্ছে তার উপর কর্তৃত্ব দান করেন; আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান” [সূরাহ আনআম ৬/৫৯]। অতএব এ ফাই রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর জন্যই খাস ছিল। আল্লাহ্‌র কসম! এরপর তিনি তোমাদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য এ সম্পদকে সংরক্ষিতও রাখেননি এবং নিজের জন্য নির্ধারিতও করে যাননি। বরং এ অর্থকে তিনি তোমাদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। অবশেষে এ মাল উদ্বৃত্ত আছে। এ মাল থেকে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর পরিবার পরিজনের এক বছরের খোরপোশ দিতেন। এর থেকে যা অবশিষ্ট থাকত তা তিনি আল্লাহ্‌র পথে খরচ করিতে দিতেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর জীবদ্দশায় এরূপই করিয়াছেন। নাবী [সাঃআঃ]-এর ওফাতের পর আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, এখন থেকে আমিই হলাম রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর ওলী। এরপর আবু বকর [রাদি.] তা স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যে নীতি অনুসরণ করেছিলেন তিনিও সে নীতিই অনুসরণ করে চললেন। তিনি আলী ও আব্বাসের প্রতি লক্ষ্য করে বলিলেন, আজ আপনারা যা বলছেন এ বিষয়ে আপনারা আবু বকরের সঙ্গেও এ ধরনেরই আলোচনা করেছিলেন। আল্লাহ্‌র কসম! তিনিই জানেন, এ বিষয়ে আবু বকরের সঙ্গেও এ ধরনেরই আলোচনা করেছিলেন। আল্লাহ্‌র কসম! তিনিই জানেন, এ বিষয়ে আবু বকর [রাদি.] ছিলেন সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ এবং হকের অনুসারী এক মহান ব্যক্তিত্ব। এরপর আবু বকর[রাদি.] এর ইন্তিকাল হলে আমি বললাম, [আজ থেকে] আমিই হলাম, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এবং আবু বকরের ওলী। এরপর এ সম্পদকে আমি আমার খিলাফতের দুই বছরকাল আমার তত্ত্বাবধানে রাখি এবং এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ও আবু বকর [রাদি.] এর অনুসৃত নীতিই অনুসরণ করে চলছি। আল্লাহ্ তাআলাই ভাল জানেন, এ বিষয়ে নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও হকের একনিষ্ঠ অনুসারী। তা সত্ত্বেও পুনরায় আপনারা দুজনই আমার নিকট এসেছেন। আমি আপনাদের উভয়কেই বলেছিলাম, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমরা [নাবী [সাঃআঃ]গণ] কাউকে উত্তরাধিকারী করি না, আমরা যা রেখে যাই তা সদাকাহ হিসাবেই গণ্য হয়। এরপর এ সম্পদটি আপনাদের উভয়ের তত্ত্বাবধানে দেয়ার বিষয়টি যখন আমার নিকট স্পষ্ট হল তখন আমি বলেছিলাম, যদি আপনারা চান তাহলে একটি শর্তে তা আমি আপনাদের নিকট অর্পণ করব। শর্তটি হচ্ছে আপনারা আল্লাহ্‌র নির্দেশ ও তাহাঁর দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী এমনভাবে কাজ করবেন যেভাবে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এবং আবু বকর [রাদি.] করিয়াছেন। আমার তত্ত্বাবধানে আসার পর আমি করেছি। অন্যথায় এ বিষয়ে আপনারা আমার সঙ্গে আর কোন আলোচনা করবেন না। তখন আপনারা বলেছিলেন, এ শর্তেই আপনি তা আমাদের নিকট অর্পণ করুন। আমি তা আপনাদের হাতে অর্পণ করেছি। এখন আপনারা আমার নিকট অন্য কোন ফয়সালা কামনা করেন কি? আমি আল্লাহ্‌র শপথ করে বলছি, যাঁর আদেশে আসমান যমীন স্থির আছে ক্বিয়ামাত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত আমি এর বাইরে অন্য কোন ফয়সালা দিতে পারব না। আপনারা যদি এর দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে থাকেন তাহলে আমার নিকট ফিরিয়ে দিন। আপনাদের এ দায়িত্ব পালনে আমিই যথেষ্ট।

বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৪০৩৩; মুসলিম ৩২/১৫ হাঃ ১৭৫৭

Was this article helpful?

Related Articles