নাবী (সাঃ)-এর বাণী (আমাদের সম্পদের কেউ উত্তরাধিকারী হইবে না, আমরা যা ছেড়ে যাই তা হচ্ছে সদাকাহ)।

১১৪৮. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাদের কোন উত্তরাধিকারী হইবে না। আমরা যা কিছু রেখে যাব সবই হইবে সদাকাহ স্বরূপ।

বোখারী পর্ব ৮৫ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৬৭৩০; মুসলিম ৩২/১৬ হাঃ ১৭৫৭


১১৪৯. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ]-এর কন্যা ফাতিমাহ [রাদি.] আবু বকর -এর নিকট রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পরিত্যক্ত সম্পত্তি মাদীনাহ ও ফাদকে অবস্থিত ফাই [বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ] এবং খাইবারের খুমুসের [পঞ্চমাংশ] অবশিষ্ট থেকে মিরাসী স্বত্ব চেয়ে পাঠালেন। তখন আবু বকর [রাদি.] উত্তরে বলিলেন যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলে গেছেন, আমাদের [নাবী [সাঃআঃ]দের] কোন ওয়ারিশ হয় না, আমরা যা ছেড়ে যাব তা সদাকাহ হিসেবে গণ্য হইবে। অবশ্য মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর বংশধরগণ এ সম্পত্তি থেকে ভরণ-পোষণ চালাতে পারবেন। আল্লাহ্‌র কসম! রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সদাকাহ তাহাঁর জীবদ্দশায় যে অবস্থায় ছিল আমি সে অবস্থা থেকে এতটুকুও পরিবর্তন করব না। এ ব্যাপারে তিনি যেভাবে ব্যবহার করে গেছেন আমিও ঠিক সেভাবেই ব্যবহার করব। এ কথা বলে আবু বকর [রাদি.] ফাতিমাহ [রাদি.]-কে এ সম্পদ থেকে কিছু দিতে অস্বীকার করিলেন। এতে ফাতিমাহ [রাদি.] [মানাবীয় কারণে] আবু বকর [রাদি.]-এর উপর নাখোশ হলেন এবং তাহাঁর থেকে সম্পর্কহীন থাকলেন। তাহাঁর মৃত্যু অবধি তিনি আবু বকর [রাদি.] -এর সঙ্গে কথা বলেননি। নাবী [সাঃআঃ]-এর পর তিনি ছয় মাস জীবিত ছিলেন। তিনি ইন্তিকাল করলে তাহাঁর স্বামী আলী [রাদি.] রাতের বেলা তাঁকে দাফন করেন। আবু বকর [রাদি.]-কেও এ খবর দিলেন না এবং তিনি তার জানাযার সলাত আদায় করে নেন। ফাতিমাহ [রাদি.]-এর জীবিত অবস্থায় লোকজনের মনে আলী [রাদি.]-এর মর্যাদা ছিল। ফাতিমাহ [রাদি.] ইন্তিকাল করলে আলী [রাদি.] লোকজনের চেহারায় অসন্তুষ্টির চিহ্ন দেখিতে পেলেন। তাই তিনি আবু বকর [রাদি.]-এর সঙ্গে সমঝোতা ও তাহাঁর কাছে বাইআতের ইচ্ছে করিলেন। এ ছয় মাসে তাহাঁর পক্ষে বাইআত গ্রহণের সুযোগ হয়নি। তাই তিনি আবু বকর [রাদি.]-এর কাছে লোক পাঠিয়ে জানালেন যে, আপনি আমার কাছে আসুন। [এটা জানতে পেরে] উমার বলিলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আপনি একা একা তাহাঁর কাছে যাবেন না। আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, তাঁরা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করিবে বলে তোমরা আশঙ্কা করছ? আল্লাহ্‌র কসম! আমি তাঁদের কাছে যাব। তারপর আবু বকর [রাদি.] তাঁদের কাছে গেলেন। আলী তাশাহ্‌হুদ পাঠ করে বলিলেন, আমরা আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ আপনাকে যা কিছু দান করিয়াছেন সে সম্পর্কে ওয়াকেবহাল। আর যে কল্যাণ [অর্থাৎ খিলাফাত] আল্লাহ আপনাকে দান করিয়াছেন সে ব্যাপারেও আমরা আপনার উপর হিংসা পোষণ করি না। তবে খিলাফতের ব্যাপারে আপনি আমাদের উপর নিজস্ব মতামতের প্রাধান্য দিচ্ছেন অথচ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটাত্মীয় হিসেবে খিলাফতের কাজে আমাদেরও কিছু পরামর্শ দেয়ার অধিকার আছে। এ কথায় আবু বকর [রাদি.]-এর চোখ থেকে অশ্রু উপচে পড়ল। এরপর তিনি যখন আলোচনা আরম্ভ করিলেন তখন বলিলেন, সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার কাছে আমার নিকটাত্মীয় চেয়েও রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আত্মীয়বর্গ অধিক প্রিয়। আর এ সম্পদগুলোতে আমার এবং আপনাদের মধ্যে যে মতবিরোধ হয়েছে সে ব্যাপারেও আমি কল্যাণকর পথ অনুসরণে পিছপা হইনি। বরং এ ক্ষেত্রেও আমি কোন কাজ পরিত্যাগ করিনি যা আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে করিতে দেখেছি। তারপর আলী [রাদি.] আবু বকর [রাদি.]-কে বললেনঃ যুহরের পর আপনার হাতে বাইআত গ্রহণের ওয়াদা রইল। যুহরের সলাত আদায়ের পর আবু বকর [রাদি.] মিম্বরে বসে তাশাহ্‌হুদ পাঠ করিলেন, তারপর আলী [রাদি.]-এর বর্তমান অবস্থা এবং বাইআত গ্রহণে তার দেরি করার কারণ ও তাহাঁর পেশকৃত আপত্তিগুলো তিনি বর্ণনা করিলেন। এরপর আলী [রাদি.] দাঁড়িয়ে আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাশাহ্‌হুদ পাঠ করিলেন এবং আবু বকর -এর মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বলিলেন, তিনি যা কিছু করিয়াছেন তা আবু বকর [রাদি.]-এর প্রতি হিংসা কিংবা আল্লাহ প্রদত্ত তাহাঁর মর্যাদাকে অস্বীকার করার জন্য করেননি। [তিনি বলেন] তবে আমরা ভেবেছিলাম যে, এ ব্যাপারে আমাদেরও পরামর্শ দেয়ার অধিকার থাকিবে। অথচ তিনি {আবু বকর [রাদি.]} আমাদের পরামর্শ ত্যাগ করে স্বাধীন মতের উপর রয়ে গেছেন। তাই আমরা মানসিক কষ্ট পেয়েছিলাম। মুসলিমগণ আনন্দিত হয়ে বলিলেন, আপনি ঠিকই করিয়াছেন। এরপর আলী [রাদি.] আমর বিল মারূফ-এর পানে ফিরে আসার কারণে মুসলিমগণ আবার তাহাঁর নিকটবর্তী হইতে শুরু করিলেন।

বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৮ হাদীস নং ৪২৪০-৪২৪১; মুসলিম ৩২/১৬ হাঃ ১৭৫৮


১১৫০. উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনতে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ] আবু বকর [রাদি.] এর নিকট আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ] এর ইন্‌তিকালের পর তাহাঁর মিরাস বন্টনের দাবী করেন। যা আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ] ফায় হিসেবে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তাঁকে প্রদত্ত সম্পদ রেখে গেছেন। অতঃপর আবু বকর [রাদি.] তাঁকে বলিলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, আমাদের পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টিত হইবে না, আমরা যা ছেড়ে যাই তা সদাকাহ রূপে গণ্য হয়। এতে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] এর কন্যা ফাতিমাহ [রাদি.] অসন্তুষ্ট হলেন এবং আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.]-এর সঙ্গে কথাবার্তা বলা ছেড়ে দিলেন। এ অবস্থা তাহাঁর মৃত্যু পর্যন্ত বহাল ছিল। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর ওফাতের পর ফাতিমাহ [রাদি.] ছয়মাস জীবিত ছিলেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, ফাতিমাহ [রাদি.] আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] -এর নিকট আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] কর্তৃক ত্যাজ্য খায়বার ও ফাদাকের ভূমি এবং মাদীনাহ্‌র সাদ্‌কাতে তাহাঁর অংশ দাবী করেছিলেন। আবু বকর [রাদি.] তাঁকে তা প্রদানে অস্বীকৃতি জানান এবং তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] যা আমল করিতেন, আমি তাই আমল করব। আমি তার কোন কিছুই ছেড়ে দিতে পারি না। কেননা আমি আশংকা করি যে, তাহাঁর কোন কথা ছেড়ে দিয়ে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে না যাই। অবশ্য আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর মাদীনাহ্‌র সদাকাহ্‌কে উমার [রাদি.] আলী ও আব্বাস [রাদি.] -এর নিকট হস্তান্তর করেন। আর খায়বার ও ফাদাকের ভূমিকে আগের মত রেখে দেন। উমার [রাদি.] এ প্রসঙ্গে বলেন, এ সম্পত্তি দুটিকে রাসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] জরুরী প্রয়োজন পূরণ ও বিপদকালীন সময়ে ব্যয়ের জন্য রেখেছিলেন। সুতরাং এ সম্পত্তি দুটি তাহাঁরই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকিবে, যিনি মুসলিমদের শাসক খলীফা হইবেন। যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ সম্পত্তি দুটির ব্যবস্থাপনা আজ পর্যন্ত ও রকমই আছে।

বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩০৯৩; মুসলিম ৩২/১৬ হাঃ ১৭৫৯


১১৫১.আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেন, আমার উত্তরাধিকারীরা কোন স্বর্ণ মুদ্রা ভাগাভাগি করিবে না, বরং আমি যা কিছু রেখে গেলাম তা থেকে আমার স্ত্রীদের খরচ এবং কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সদাকাহ।

বোখারী পর্ব ৫৫ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ২৭৭৬; মুসলিম ৩২/১৬ হাঃ ১৭৬০

Was this article helpful?

Related Articles