আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
“আর মু’মিনগণ সৈন্যদেরকে দেখে বলে উঠলঃ এই তো সেই জিনিসই যার ওয়াদা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের নিকট করেছিলেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছিলেন। এ ঘটনা তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণের মাএ আরো বৃদ্ধি করে দিল।” (সূরা আহযাবঃ ২২)
[Note: এ অধ্যায়ের কুরআনের আয়াত গুলো পরে আপডেট করা হবে]
তিনি আরো বলেছেনঃ “” (সূরা আলে ইমরান ১৭৩,১৭৪)
তিনি আরো বলেছেনঃ “” (সূরা ইব্রাহিমঃ ১১)
তিনি আরো বলেছেনঃ “” (সূরা আল ইমরানঃ ১৫৯)
তিনি আরো বলেছেনঃ “” (সূরা তালাকঃ ৩)
তিনি আরো বলেছেনঃ “” (সূরা আনফলঃ ২)
এছাড়াও কুরআনে তাওয়াক্কুল সম্পর্কে আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
৭৪. হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার নিকট (স্বপ্নে কিংবা বিশেষ আধ্যাত্নিক অবস্থায়) উম্মতদের অবস্থা তুলে ধরা হলো। আমি একজন নবীকে একটি ক্ষুদ্র দলসহ দেখলাম। আবার কয়েকজন নবীকে দু’একজন লোকসহ দেখলাম। অন্যদিকে একজন নবীকে দেখলাম সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ; অর্থ্যাৎ তাঁর সঙ্গে কেউ নেই। সহসা আমাকে একটি বিরাট জনগোষ্ঠী দেখানো হলো। আমি ভাবলাম, এরা আমার উম্মত। কিন্তু আমায় বলা হলো, ‘এরা মূসা ও তাঁর উম্মত। তবে আপনি আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করুন। আমি দেখলাম, সেখানে বিরাট একটি জনগোষ্ঠী অবস্থান করছে। পুনরায় আমাকে আকাশের অন্য একদিকে তাকাতে বলা হলো। আমি দেখলাম সেখানেও একটি বিরাট জনগোষ্ঠী অপেক্ষা করছে। তারপর আমায় বলা হলোঃ ‘এরা আপনার উম্মত। এদের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবে ও বিনা শাস্তিতে বেহেশতে যাবে।’
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ এরপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে উঠে তাঁর হুজরা শরীফে প্রবেশ করলেন। এ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা অনুযায়ী যেসব লোক বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে জান্নাতে যাবে, সাহাবীগণ তাদের ব্যাপারে কথাবার্তা বলছিলেন। কেউ বললেন, এরা বোধহয় সেইসব লোক যারা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য পেয়েছেন। আবার কেউ বললেন, এরা বোধহয় সেই সব ভাগ্যবান লোক, যারা ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করেছেন; কেননা তারা আল্লাহর সাথে শরীক করার মতো মহাগুরুতর অপরাধ করেননি। এভাবে সাহাবীগণ নানা বিষয়ে কথা বলছিলেন। এমনি সময় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরা থেকে বেরিয়ে এসে বললেনঃ তোমরা কোন্ বিষয়ে কথাবার্তা বলছো? তখন সাহাবীগণ তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলেন। এতে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরা হলো সেইসব লোক, যারা নিজেরা তাবিজ-তুমারের কোনো কাজ করে না এবং অন্যের দ্বারাও করায় না। এছাড়া তারা কোন কিছুকে শুভাশুভ লক্ষণ হিসেবেও বিশ্বাস করে না, বরং তারা তাদের একমাত্র প্রভু আল্লাহর ওপরই নির্ভর করে— ভরসা রাখে। একথা শুনে উক্কাশা ইবনে মুহসিন দাঁড়িয়ে বললেনঃ ‘আপনি আল্লাহর কাছে একটু দোয়া করুন, যেন তিনি আমায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। তিনি বললেন তুমি তো তাদেরই মধ্যকার একজন।’ এরপর আরেকজন দাঁড়িয়ে বললেনঃ ‘আল্লাহর কাছে দো’আ করুন, যাতে আমাকেও তিনি তাদের মধ্যে গণ্য করেন।’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ ব্যাপারে ‘উক্কাশা তোমার আগে বলে এগিয়ে গেছে।’ (বুখারী ও মুসলিম)
৭৫. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ আমি তোমারই জন্য ইসলাম গ্রহণ করছি (অর্থ্যাৎ তোমাতে আত্নসমর্পণ করেছি), তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, তোমারই ওপর নির্ভর করেছি, তোমারই দিকে ধাবমান রয়েছি এবং তোমারই নিকট মীমাংসাপ্রার্থী হয়েছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার ইয্যতের কাছে আশ্রয় চাই, যাতে তুমি আমায় পথভ্রষ্ট না করে দাও। তুমি ছাড়া আর কোনো মা’বুদ নেই। তুমি চিরঞ্জীব-মৃত্যুহীন। কিন্তু জিন ও মানুষ সবাই মৃত্যুবরণ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসের মূল শব্দাবলী ইমাম মুসলিমের। ইমাম বুখারী একে সংক্ষেপ করেছেন।
৭৬. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন, হযরত ইবরাহীম (আ)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হলো তখন তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি চমৎকার দায়িত্বগ্রহণকারী।’ আর লোকেরা যখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সঙ্গীদের বলেছিল, মুশরিকরা তোমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তোমরা তাদেরকে ভয় করো, তখন এতে তাদের ঈমান বেড়ে গেল এবং তারা বললো যে, আল্লাহই তোমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম দায়িত্ব গ্রহণকারী। (বুখারী)
বুখারীর অন্য বর্ণনা মুতাবেক, ইবনে আব্বাস (রা) বলেনঃ ইবরাহীম (আ) কে আগুনে নিক্ষেপ করার পর তাঁর সর্বশেষ উক্তি ছিলঃ ‘আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম বন্ধু।’
৭৭. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতে এমন অনেক লোক প্রবেশ করবে, যাদের অন্তর পাখির অন্তরের মতো হবে। (অর্থ্যাৎ তাঁদের অন্তর মোলায়েম এবং তাঁরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করে।)
৭৮. হযরত জাবির (রা) বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নজদ অঞ্চলের কোন এক স্থানে জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফিরে এলেন, তখন তিনিও (অর্থ্যাৎ জাবেরও) তাঁর সাথে প্রত্যাবর্তন করলেন। দুপুরে তাঁরা সবাই এমন এক স্থানে এসে উপস্থিত হলেন, যেখানে অনেক কাঁটা ওয়ালা গাছ-গাছালি ছিল। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে অবতরণ করলেন এবং অন্যান্য লোকেরা গাছের ছায়ায় বেরিয়ে পড়লেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাবলা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলেন এবং স্বীয় তলোয়ারখানি গাছের ছায়ায় ঝুলিয়ে রাখলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ডাকতে লাগলেন। তখন তাঁর কাছে একজন গ্রাম্য লোককে দেখলাম। তিনি বললেনঃ ‘এই লোকটি আমার ঘুমন্ত অবস্থায় আমার ওপর তলোয়ার উঁচু করেছিল। হঠাৎ আমি জেগে উঠে দেখি, তার হাতে নাঙ্গা তলোয়ার। সে আমায় তিনবার প্রশ্ন করলঃ ‘এখন কে তোমায় আমার হাত থেকে বাঁচাবে।?’ আমি তিনবারই বললামঃ ‘আল্লাহই’। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে কোন সাজা দিলেন না; বরং বসে পড়লেন। (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত অপর এক রেওয়ায়েতে বলা হয়েছেঃ আমরা ‘যাতুর রিকা’ যুদ্ধের সময় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখন আমরা একটি ছায়াদানকারী গাছের নীচে জড়ো হলাম। গাছটিকে আমরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরামের জন্য ছেড়ে দিলাম। হঠাৎ মুশরিকদের মধ্যকার এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হলো। তখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরবারি গাছের সঙ্গে ঝুলানো ছিল। আগন্তুক তলোয়ারটি হাতে নিয়ে বললঃ আপনি কি আমাকে ভয় করেন? তিনি স্পষ্ট জবাব দিলেনঃ ‘না’। লোকটি আবার বললোঃ আমার হাত থেকে আপনাকে কে বাঁচাবে? রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃশঙ্ক চিত্তে বললেনঃ ‘আল্লাহ’।
এ প্রসঙ্গে আবু বাক্র ইসমাঈলী তাঁর সহীহ গ্রন্থে যে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, মুশরিকটি প্রশ্ন করল, আমার হাত থেকে কে আপনাকে বাঁচাবে? তিনি স্পষ্টত জবাব দিলেনঃ ‘আল্লাহ’। এতে মুশরিকটির হাত থেকে তলোয়ার পড়ে গেল। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্রুত তলোয়ারটি হাতে তুলে নিলেন এবং মুশরিকটিকে বললেনঃ এখন আমার হাত থেকে কে তোমায় রক্ষা করবে”, সে জবাব দিলঃ আপনি সর্বোত্তম পাকড়াওকারী হয়ে যান। তিনি বললেনঃ ‘তাহলে তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল।’ সে জবাব দিলঃ ‘না, আমি এ সাক্ষ্য দেব না; তবে এ অঙ্গীকার করতে প্রস্তুত যে, আমি আপনার সাথে লড়াই করবো না, এবং যারা আপনার সাথে লড়াইতে লিপ্ত, তাদেরকেও কোনরূপ সহযোগিতা করবো না।’ এ কথায় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পথ ছেড়ে দিলেন। এরপর মুশরিকটি তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে গেল এবং তাদেরকে বললোঃ ‘আমি সর্বোত্তম মানুষটির নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছি।’
৭৯. হযরত উমর (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা যদি আল্লাহর ওপর নির্ভর (তাওয়াক্কুল) করার হক আদায় করতে, তাহলে তিনি পাখিকুলকে রিযিক দেয়ার মতো তোমাদেরকেও রিযিক দান করতেন। (তোমরা লক্ষ্য করে থাকবে) পাখিকুল অতি প্রত্যুষে খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে তারা ফিরে আসে। (ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি বর্ণনা প্রসঙ্গে একে হাসান হাদীস রূপে আখ্যায়িত করেছেন।)
৮০. হযরত আবু উমারাতা বারাআ ইবনে আযেব (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে অমুক! তুমি যখন নিজের বিছানায় ঘুমাতে যাও, তখন বলোঃ ‘হে আল্লাহ! আমি আমার সত্তাকে তোমার নিকট সমর্পণ করছি, আমি আমার মুখমণ্ডলকে তোমার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি। আমার তাবৎ বিষয় তোমার নিকট সোপর্দ করেছি এবং আমার পিঠখানা তোমার দিকে ঠেকিয়ে দিয়েছি। আর এসব কিছুই করেছি তোমার শাস্তির ভয়ে এবং পুরস্কারের লোভে। তুমি ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই, তুমি ছাড়া বাঁচারও কোন উপায় নেই। আমি তোমার নাযিলকৃত কিতাবের প্রতি ঈমান এনেছি এবং তোমার প্রেরিত নবীর প্রতিও ঈমান এনেছি।’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘(এ দো’আ পাঠের পর) তুমি যদি ঐ রাতেই ইন্তেকাল কর, তাহলে ইসলামের ওপরই তোমার মৃত্যু ঘটবে আর যদি সকালে বেঁচে থাকো, তাহলে বিপুল কল্যাণ লাভ করবে।’ (বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসটির বর্ণনাকারী ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের অপর এক রেওয়ায়েত মতে বারাআ (রা) বলেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি যখন রাতে ঘুমাতে যাও, তখন নামাযের অযুর মতোই অযু করো, তারপর ডান কাতে শুয়ে এই দো’আটি পড়ো। এ কথা বলে তিনি উপরোক্ত দো’আটি পড়েন। অতঃপর তিনি বলেনঃ এই দো’আটি একেবারে শেষ দিকে পড়বে।
৮১. হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) বর্ণনা করেন, আমি (রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সওর পর্বত গুহায় থাকাকালে মুশরিকদের পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। ওরা তখন আমাদের মাথার ওপরের দিকে ছিল। (এটা হিজরতে সময়কার ঘটনা) আমি তখন বললামঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! এখন যদি ওদের কেউ ওদের পায়ের নীচ দিকে তাকায়, তবে তো আমাদের দেখে ফেলবে!’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘হে আবু বকর! এমন দুই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি ধারণা, যাদের সঙ্গী তৃতীয় জন হচ্ছেন আল্লাহ? (বুখারী ও মুসলিম)
৮২. উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামা (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলতেনঃ ‘আল্লাহর নামে বের হচ্ছি এবং তাঁরই ওপর ভরসা করছি।’ ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই, যেন আমি পথভ্রষ্ট না হই অথবা আমায় পথভ্রষ্ট না করা হয়। আমি যেন (তোমার) দ্বীন থেকে বিচ্যুত না হই অথবা আমাকে বিচ্যুত না করা হয় আমি যেন কারো ওপর জুলুম না করি অথবা আমার ওপর জুলুম না করা হয়। আমি যেন মূর্খতা অবলম্বন না করি অথবা আমি মূর্খতার শিকার না হই।’ ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিযী এবং অন্যান্য সাহাবীগন সহী সনদ সহকারে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন; বিশেষত ইমাম তিরমিযী একে হাসান ও সহীহ হাদীস আখ্যা দিয়েছেন। তবে হাদীসের শব্দাবলী এখানে আবু দাউদ থেকে উদ্বৃত হয়েছে।
৮৩. হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেনঃ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি নিজ বাড়ি থেকে বেরুবার সময় বলেঃ ‘আল্লাহর নামে বের হলাম এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম; আর আল্লাহ ছাড়া তো কারো কাছ থেকে কোনো শক্তি পাওয়া যায় না।’ (এরূপ দোয়া করলে) তাকে বলা হয়, তোমাকে সঠিক পথনির্দেশ (হেদায়েত) দেওয়া হয়েছে, তোমাকে যথেষ্ট দেওয়া হয়েছে। এবং তোমার হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর (এরূপ বললে) শয়তান তার থেকে দূরে চলে যায়।
আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিরমিযী একে ‘হাসান হাদীস’ আখ্যা দিয়েছেন। তবে আবু দাউদ এর সাথে আরও একটি বাক্য যুক্ত করেছেনঃ শয়তান অন্য শয়তানকে বলে— যাকে হেদায়েত দেওয়া হয়েছে, পর্যাপ্ত দেওয়া হয়েছে ও হেফাজত করা হয়েছে, তুমি তার ওপর কিভাবে নিয়ন্ত্রণ লাভ করবে?
৮৪. হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে দুই ভাই ছিল। তাদের এক ভাই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসত আর এক ভাই নিজ পেশা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। কর্মব্যস্ত ভাই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে অপর ভাইয়ের বিরুদ্ধে (কোন কাজ না করার) অভিযোগ করল। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সম্ভবত তোমাকে তারই বরকতে রিযিক দেওয়া হচ্ছে। (তিরমিযী)