তাফসীর

১৮৯৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, বনী ইসরাঈলকে আদেশ দেয়া হয়েছিল, তোমরা দরজা দিয়ে অবনত মস্তকে প্রবেশ কর আর মুখে বল, হিত্তাতুন [অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দাও।] কিন্তু তারা এ শব্দটি পরিবর্তন করে ফেলল এবং প্রবেশ দ্বারে যেন নতজানু হইতে না হয় সে জন্য তারা নিজ নিজ নিতম্বের ওপর ভর দিয়ে শহরে প্রবেশ করিল আর মুখে বলিল, হাব্বাতুন্ ফী শাআরাতিন” [অর্থাৎ হে আল্লাহ্! আমাদেরকে যবের দানা দাও]।

[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৩৪০৩; মুসলিম ৩০১৭, তাফসীর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৮৯৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা নাবী [সাঃআঃ]-এর প্রতি ক্রমাগত ওয়াহী অবতীর্ণ করিতে থাকেন এবং তাহাঁর ইন্তিকালের নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর প্রতি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ওয়াহী অবতীর্ণ করেন। এরপর তাহাঁর ওফাত হয়

। [বোখারী পর্ব ৬৬ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৪৯৮২; মুসলিম ৫৪/হাঃ ৩০১৬] তাফসীর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৮৯৫. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক ইয়াহূদী তাঁকে বললঃহে আমীরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহুদী জাতির উপর অবতীর্ণ হত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে খুশীর দিন হিসেবে পালন করতাম। তিনি বলিলেন, কোন্ আয়াত? সে বললঃ

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا

“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম” [সূরাহ মায়িদাহ্ ৫/৩]। উমার [রাদি.] বলিলেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নাবী [সাঃআঃ] -এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি; তিনি সেদিন আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন এবং তা ছিল জুমুআর দিন।

[বোখারী পর্ব ২ অধ্যায় ৩৩ হাদীস নং ৪৫; মুসলিম ৪৩/১ হাঃ ৩০১৭] তাফসীর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৮৯৬. উরওয়াহ ইবনি যুবাইর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি একবার আয়েশা [রাদি.]-কে আল্লাহ তাআলার বাণীঃ arbi “আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীম বালিকাদের প্রতি সুবিচার করিতে পারবে না তাহলে অন্য মহিলাদের মধ্য হইতে তোমাদের পছন্দ মতো দুজন বা তিনজন কিংবা চারজনকে বিয়ে করিতে পার” [আন-নিসাঃ৩]। এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, আমার ভাগিনা! এ হচ্ছে সেই ইয়াতীম মেয়ের কথা, যে অভিভাবকের আশ্রয়ে থাকে এবং তার সম্পদে অংশীদার হয়। এদিকে মেয়ের ধন-রূপে মুগ্ধ হয়ে তার অভিভাবক মোহরানার ব্যাপারে সুবিচার না করে অর্থাৎ, অন্য কেউ যে পরিমাণ মোহরানা দিতে রাজী হত, তা না দিয়েই তাকে বিয়ে করিতে চাইত। তাই প্রাপ্য মোহরানা আদায়ের মাধ্যমে সুবিচার না করা পর্যন্ত তাহাদেরকে আশ্রিতা ইয়াতীম বালিকাদের বিয়ে করিতে নিষেধ করা হয়েছে এবং পছন্দমত অন্য মহিলাদেরকে বিয়ে করিতে বলা হয়েছে। উরওয়াহ [রাদি.] বলেন, আয়েশা [রাদি.] বলেছেন, পরে সাহাবীগণ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট [মহিলাদের সম্পর্কে] ফাতওয়া জিজ্ঞেস করিলেন তখন আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করেন “তারা আপনার নিকট মহিলাদের সম্পর্কে ফাতওয়া জিজ্ঞেস করে, আপনি বলুন, আল্লাহই তাহাদের সম্পর্কে তোমাদের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আর ইয়াতীম মেয়েদের সম্পর্কে কিতাব হইতে তোমাদেরকে পাঠ করে শোনানো হয়, তাহাদের জন্য যা বিধিবদ্ধ রয়েছে, তা তোমরা তাহাদের দাও না অথচ তাহাদের তোমরা বিয়ে করিতে চাও” [আন-নিসাঃ১২৭]।

“আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করিতে পারবে না, তাহলে অন্য নারীদের মধ্যে হইতে তোমাদের পছন্দ মতো দুজন বা তিনজন কিংবা চারজন বিয়ে করিতে পারবে”। আয়েশা [রাদি.] বলেন, আর অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলার ইরশাদ এর মর্ম হল, “ধন ও রূপের স্বল্পতা হেতু তোমাদের আশ্রিতা ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি তোমাদের অনাগ্রহ”। তাই ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি অনাগ্রহ সত্ত্বেও শুধু ধন-রূপের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাহাদের বিয়ে করিতে নিষেধ করা হয়েছে। অবশ্য ন্যায়সঙ্গত মোহরানা আদায় করে বিয়ে করিতে পারে।

[বোখারী পর্ব ৪৭ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ২৪৯৪; মুসলিম ৩০১৮] তাফসীর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৮৯৭. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কুরআনের আয়াতঃ

وَمَنْ كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ، وَمَنْ كَانَ فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوفِ

“যে অভাবমুক্ত সে যেন নিবৃত্ত থাকে এবং যে অভাবগ্রস্ত সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে” [সূরাহ আন-নিসা ৪/৬]। ইয়াতীমের ঐ অভিভাবক সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়, যে তার তত্ত্বাবধান করে ও তার সম্পত্তির পরিচর্যা করে, সে যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তবে তা হইতে নিয়মমাফিক খেতে পারবে।

[বোখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ৯৫ হাদীস নং ২২১২; মুসলিম ৫৪ অধ্যায়ের প্রথমে হাঃ ৩০১৯] তাফসীর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৮৯৮. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

وَإِنِ امْرَأَةٌ خَافَتْ مِنْ بَعْلِهَا نُشُوزًا أَوْ إِعْرَاضًا

“কোন স্ত্রী যদি স্বামীর অবজ্ঞা ও উপেক্ষার ভয় করে” [সূরাহ আন-নিসা ৪/১২৮] আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি [আয়েশা [রাদি.] বলেন, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর কাছে বেশী যাওয়া-আসা করত না বরং তাকে পরিত্যাগ অর্থাৎ তালাক দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করত। এ অবস্থায় স্ত্রী বলিল, আমি তোমাকে আমার ব্যাপারে দায়মুক্ত করে দিলাম। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।

[বোখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ২৪৫০; মুসলিম ৩০২১] তাফসীর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৮৯৯. সাঈদ ইবনি যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন যে, এ আয়াত সম্পর্কে কূফাবাসীগণ ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করিল। [কেউ বলেন মানসূখ, কেউ বলেন মানসূখ নয়। এ ব্যাপারে আমি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, উত্তরে তিনি বলিলেন,

وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ

আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে এবং এটি শেষের দিকে অবতীর্ণ আয়াত; এটাকে কোন কিছু রহিত করেনি।

[বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [৪] আন-নিসা অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৪৫৯০; মুসলিম ৫৪/হাঃ ৩০২৩] তাফসীর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৯০০. সাঈদ ইবনি যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনি আবযা [রাদি.] বলেন, ইবনি আব্বাসকে জিজ্ঞেস করা হল, আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ“ arbi কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম” এবং আল্লাহ্‌র এ বাণীঃ“এবং আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করিয়াছেন যথার্থ কারণ ব্যতীত, তারা তাকে হত্যা করে না” এবং “কিন্তু যারা তাওবাহ করে” পর্যন্ত, সম্পর্কে আমিও তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি জবাবে বলিলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন মক্কাবাসী বলিল, আমরা আল্লাহ্‌র সাথে শারীক করেছি, আল্লাহ্ যার হত্যা নিষিদ্ধ করিয়াছেন যথার্থ কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করেছি এবং আমরা অশ্লীল কার্যে লিপ্ত হয়েছি। তারপর আল্লাহ তাআলা এ আয়াত অবতীর্ণ করিলেন, “যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে।” ……আল্লাহ্ ক্ষমামীল, পরম দয়ালু……পর্যন্ত।

[বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [২৫] আল-ফুরকান অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৪৭৬৫; মুসলিম ৫৪/হাঃ ৩০২৩] তাফসীর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৯০১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন যে, [আরবী] আয়াতের ঘটনা হচ্ছে এই যে, এক ব্যক্তির কিছু ছাগল ছিল, মুসলিমদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হলে সে তাঁদেরকে বলিল

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ

“আস্সালামু আলাইকুম”, মুসলিমরা তাকে হত্যা করিল এবং তার ছাগলগুলো নিয়ে নিল, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করিলেন [আর-বী] পার্থিব সম্পদের লোভে আর সে সম্পদ হচ্ছে এ ছাগল পাল।

আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.][আরবী] পড়েছেন।

[বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [৪] আন্-নিসা অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৪৫৯১; মুসলিম ৩২২৫,, তাফসীর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৯০২. আবু ইসহাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বারা [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, এ আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। হাজ্জ করে এসে আনসারগণ তাহাদের বাড়িতে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিতেন। এক আনসার ফিরে এসে তার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে তাকে এ জন্য লজ্জা দেয়া হয়। তখনই নাযিল হয়ঃ

وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ ظُهُورِهَا وَلكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقى وَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَابِهَا

“পশ্চাৎ দিক দিয়ে তোমাদের গৃহ-প্রবেশ করাতে কোন কল্যাণ নেই। বরং কল্যাণ আছে যে তাকওয়া অবলম্বন করে। সুতরাং তোমরা [সামনের] দরজা দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর” [সূরাহ আল-বাক্বারাহ ২/১৮৯]।

[বোখারী পর্ব ২৬ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ১৮০৩; মুসলিম ৫৪/৫৪, হাঃ ৩০২৬] তাফসীর -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Was this article helpful?

Related Articles