জাফার বিন আবু ত্বলিব, আসমা বিনতু উমায়স এবং তাহাদের নৌকারোহীদের (রা)-এর মর্যাদা।

১৬২৭. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা ইয়ামানে থাকা অবস্থায় আমাদের কাছে নাবী [সাঃআঃ]-এর হিজরতের খবর পৌঁছল। তাই আমি ও আমার দুভাই আবু বুরদা ও আবু রুহম এবং আমাদের কাওমের আরো মোট বায়ান্ন কি তিপ্পান্ন কিংবা আরো কিছু লোকজনসহ আমরা হিজরতের উদ্দেশে বের হলাম। আমি ছিলাম আমার অপর দুভাইয়ের চেয়ে বয়সে ছোট। আমরা একটি জাহাজে উঠলাম। জাহাজটি আমাদেরকে আবিসিনিয়া দেশের [বাদশাহ্] নাজ্জাশীর নিকট নিয়ে গেল। সেখানে আমরা জাফর ইবনি আবু তালিবের সাক্ষাৎ পেলাম এবং তাহাঁর সঙ্গেই আমরা থেকে গেলাম। অবশেষে নাবী [সাঃআঃ]-এর খাইবার বিজয়ের সময় সকলে এক যোগে [মাদীনায়] এসে তাহাঁর সঙ্গে মিলিত হলাম। এ সময়ে মুসলিমদের কেউ কেউ আমাদেরকে অর্থাৎ জাহাজে আগমনকারীদেরকে বলিল, হিজরতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী।

আমাদের সঙ্গে আগমনকারী আসমা বিন্‌ত উমাইস একবার নাবী [সাঃআঃ]-এর সহধর্মিণী হাফসাহ্‌র সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে এসেছিলেন। তিনিও [তাহাঁর স্বামী জাফরসহ] নাজ্জাশীর দেশে হিজরাতকারীদের সঙ্গে হিজরাত করেছিলেন। আসমা [রাদি.] হাফসাহ্‌র কাছেই ছিলেন। এ সময়ে উমার [রাদি.] তাহাঁর ঘরে প্রবেশ করিলেন। উমার [রাদি.] আসমাকে দেখে জিজ্ঞেস করিলেন, ইনি কে? হাফসাহ [রাদি.] বলিলেন, তিনি আসমা বিনত উমাইস [রাদি.]। উমার [রাদি.] বলিলেন, ইনি হাবশায় হিজরাতকারিণী আসমা? ইনিই কি সমুদ্রগামিনী? আসমা [রাদি.] বলিলেন, হ্যাঁ! তখন উমার [রাদি.] বলিলেন, হিজরাতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে আগে আছি। সুতরাং তোমাদের তুলনায় রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর প্রতি আমাদের হক অধিক। এতে আসমা [রাদি.] রেগে গেলেন এবং বলিলেন, কক্ষনো হইতে পারে না। আল্লাহ্‌র কসম! আপনারা তো রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলেন, তিনি আপনাদের ক্ষুধার্তদের খাবারের ব্যবস্থা করিতেন, আপনাদের অবুঝ লোকদেরকে নসীহত করিতেন। আর আমরা ছিলাম এমন এক এলাকায় অথবা তিনি বলেছেন এমন এক দেশে যা রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বহুদূরে এবং সর্বদা শত্রু বেষ্টিত হাবশা দেশে। আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের উদ্দেশেই ছিল আমাদের এ হিজরাত। আল্লাহ্‌র কসম! আমি কোন খাবার খাবো না, পানিও পান করব না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি যা বলেছেন তা আমি রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-কে না জানাব। সেখানে আমাদেরকে কষ্ট দেয়া হত, ভয় দেখানো হত। শীঘ্রই আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে এসব কথা বলব এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করব। তবে আল্লাহ্‌র কসম! আমি মিথ্যা বলব না, পেচিয়ে বলব না, বাড়িয়েও কিছু বলব না। এরপর যখন নাবী [সাঃআঃ] আসলেন, তখন আসমা [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র নাবী [সাঃআঃ]! উমার [রাদি.] এই কথা বলেছেন, তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কী উত্তর দিয়েছ? আসমা [রাদি.] বললেনঃ আমি তাঁকে এই এই বলেছি। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, [এ ব্যাপারে] তোমাদের চেয়ে উমার [রাদি.] আমার প্রতি অধিক হক রাখে না। কারণ উমার [রাদি.] এবং তাহাঁর সাথীরা একটি হিজরাত লাভ করেছে, আর তোমরা যারা জাহাজে হিজরাতকারী ছিলে তারা দুটি হিজরাত লাভ করেছে।

আসমা [রাদি.] বলেন, এ ঘটনার পর আমি আবু মূসা [রাদি.] এবং জাহাজযোগে হিজরাতকারী অন্যদেরকে দেখেছি যে, তাঁরা সদলবলে এসে আমার নিকট থেকে এ হাদীসখানা শুনতেন। আর নাবী [সাঃআঃ] তাঁদের সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিলেন সে কথাটির চেয়ে তাঁদের কাছে দুনিয়ার অন্য কোন জিনিস অধিকতর প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

আবু বুরদাহ [রাদি.] বলেন যে, আসমা [রাদি.] বলেছেন, আমি আবু মূসা {আশআরী [রাদি.]}-কে দেখেছি, তিনি বারবার আমার নিকট হইতে এ হাদীসটি শুনতে চাইতেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২৩০-৪২৩১; মুসলিম ৪৪/৪১, হাঃ ২৪৯৯]

Was this article helpful?

Related Articles