খারিজীদের বর্ণনা ও তাহাদের বৈশিষ্ট্য।

৬৩৮. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] জিয়রানা নামক জায়গায় গানীমাতের মাল বণ্টন করছিলেন, তখন এক ব্যক্তি বলিল, ইনসাফ করুন। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে তুমি হইবে হতভাগা।

[বোখারী পর্ব ৫৭ : /১৫ হাঃ ৩১৩৭, মুসলিম ১২/৪৭ হাঃ ১০৬৩] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৬৩৯. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আলী [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট কিছু স্বর্ণের টুকরো পাঠালেন। তিনি তা চার ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। [১] আল-আকরা ইবনি হানযালী যিনি মাজাশেয়ী গোত্রের ছিলেন। [২] উইয়াইনাহ ইবনি বাদার ফাযারী। [৩] যায়দ ত্বায়ী, যিনি পরে বনী নাবহান গোত্রের ছিলেন। [৪] আলকামাহ ইবনি উলাসা আমিরী, যিনি বনী কিলাব গোত্রের ছিলেন। এতে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হলেন এবং বলিতে লাগলেন, নাবী [সাঃআঃ] নাজদবাসী নেতৃবৃন্দকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে দিচ্ছেন না। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি তো তাহাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য এমন মনোরঞ্জন করছি। তখন এক ব্যক্তি সামনে এগিয়ে আসল, যার চোখ দুটি কোটরাগত, গণ্ডদ্বয় ঝুলে পড়া; কপাল উঁচু, ঘন দাড়ি এবং মাথা মোড়ানো ছিল। সে বলিল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় করুন। তখন তিনি বলিলেন, আমিই যদি নাফরমানী করি তাহলে আল্লাহর আনুগত্য করিবে কে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর উপর আমানতদার বানিয়েছেন আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। তখন এক ব্যক্তি তাহাঁর নিকট তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইল। {আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন} আমি তাকে খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাদি.] বলে ধারণা করছি। কিন্তু নাবী [সাঃআঃ] তাকে নিষেধ করিলেন। অতঃপর অভিযোগকারী লোকটি যখন ফিরে গেল, তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, এ ব্যক্তির বংশ হইতে বা এ ব্যক্তির পরে এমন কিছু সংখ্যক লোক হইবে তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাহাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করিবে না। দ্বীন হইতে তারা এমনভাবে বেরিয়ে পড়বে যেমনি ধনুক হইতে তীর বেরিয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে [মুসলিমদেরকে] হত্যা করিবে আর মূর্তি পূজারীদেরকে হত্যা করা হইতে বাদ দেবে। আমি যদি তাহাদের পেতাম তাহলে তাহাদেরকে আদ জাতির মত অবশ্যই হত্যা করতাম।

[বোখারী পর্ব ৬ : /৬ হাঃ ৩৩৪৪, মুসলিম ১২/৪৭ হাঃ ১০৬৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৬৪০. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আলী ইবনি আবু ত্বলিব [রাদি.] ইয়ামান থেকে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]-এর কাছে এক প্রকার [রঙিন] চামড়ার থলে করে সামান্য কিছু স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন। তখনও এগুলো থেকে সংযুক্ত মাটি পরিষ্কার করা হয়নি। আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] বলেন, রসূল [সাঃআঃ] চার জনের মাঝে স্বর্ণখণ্ডটি বণ্টন করে দিলেন। তারা হলেন, উয়াইনাহ ইবনি বাদ্র, আকরা ইবনি হারিস, যাইদ আল-খায়ল এবং চতুর্থ জন আলকামা কিংবা আমির ইবনি তুফাইল [রাদি.]। তখন সহাবীগণের মধ্য থেকে একজন বলিলেন, এটা পাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের অপেক্ষা আমরাই অধিক হকদার ছিলাম। [রাবী] বলেন, কথাটি নাবী [সাঃআঃ] পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল। তাই নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা কি আমার উপর আস্থা রাখ না অথচ আমি আসমানের অধিবাসীদের আস্থাভাজন, সকাল-বিকাল আমার কাছে আসমানের সংবাদ আসছে। রাবী বলেন, এমন সময়ে এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল। লোকটির চোখ দুটি ছিল কোটরাগত, চোয়ালের হাড় যেন বেরিয়ে পড়ছে, উঁচু কপাল বিশিষ্ট, দাড়ি অতি ঘন, মাথাটি ন্যাড়া, পরনের লুঙ্গী উপরে উত্থিত। সে বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ্কে ভয় করুন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমার জন্য আফসোস! আল্লাহ্কে ভয় করার ব্যাপারে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমি কি অধিক হকদার নই? রাবী আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] বলেন, লোকটি চলে গেলে খালিদ বিন ওয়ালীদ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি কি লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেব না? আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ না, হইতে পারে সে সলাত আদায় করে। খালিদ [রাদি.] বলিলেন, অনেক সলাত আদায়কারী এমন আছে যারা মুখে এমন এমন কথা উচ্চারণ করে যা তাহাদের অন্তরে নেই। আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট চিরে দেখার জন্য বলা হয়নি। অতঃপর তিনি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন। তখন লোকটি পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনি বলিলেন, এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব হইবে যারা শ্র“তিমধুর কণ্ঠে আল্লাহ্‌র কিতাব তিলাওয়াত করিবে অথচ আল্লাহ্‌র বাণী তাহাদের গলদেশের নিচে নামবে না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে লক্ষ্যবস্তুর দেহ ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়। [বর্ণনাকারী বলেন] আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছেন, যদি আমি তাহাদেরকে পাই তাহলে অবশ্যই আমি তাহাদেরকে সামূদ জাতির মতো হত্যা করে দেব

। [বোখারী পর্ব ৬৪ : /৬১ হাঃ ৪৩৫১, মুসলিম ১২/৪৭, হাঃ ১০৬৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৬৪১. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ ভবিষ্যতে এমন সব লোকের আগমন ঘটবে, যাদের সলাতের তুলনায় তোমাদের সলাতকে, তাহাদের রোযার তুলনায় তোমাদের রোযাকে এবং তাহাদের আমলের তুলনায় তোমাদের আমালকে তুচ্ছ মনে করিবে। তারা কুরআন পাঠ করিবে; কিন্তু তা তাহাদের কন্ঠনালীর নিচে প্রবেশ করিবে না [অর্থাৎ অন্তরে প্রবেশ করিবে না এবং তা লোক দেখানো হইবে]। এরা দ্বীন [ইসলাম] থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে নিক্ষিপ্ত তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। আর অন্য শিকারী সেই তীরের অগ্রভাগ পরীক্ষা করে দেখিতে পায়, তাতে কোন চিহ্ন নেই। সে তীরের ফলার পার্শ্বদেশদ্বয়েও নজর করে; অথচ সেখানে কিছু দেখিতে পায় না। অবশেষে ঐ ব্যক্তি কোন কিছু পাওয়ার জন্য তীরের নিম্নভাগে সন্দেহ পোষণ করে।

[বোখারী পর্ব ৬৬ : /৩৬ হাঃ ৫০৫৮, মুসলিম হাঃ] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


৬৪২. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গনীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। তখন বানু তামীম গোত্রের জুলখোয়াইসিরাহ্ নামে এক ব্যক্তি এসে হাযির হল এবং বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি ইন্সাফ করুন। তিনি বলিলেন তোমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে ইনসাফ করিবে কে? আমি তো নিষ্ফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হব যদি আমি ইনসাফ না করি। উমার [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে অনুমতি দিন আমি এর গর্দান উড়িয়ে দিই। তিনি বলিলেন, একে ছেড়ে দাও। তার এমন কিছু সঙ্গী সাথী রয়েছে তোমাদের কেউ তাহাদের সলাতের তুলনায় নিজের সলাত এবং সিয়াম নগণ্য বলে মনে করিবে। এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাহাদের কন্ঠনালীর নীচে প্রবেশ করে না। তারা দ্বীন হইতে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক হইতে বেরিয়ে যায়। তীরের অগ্রভাগের লোহা দেখা যাবে কিন্তু কোন চিহ্ন পাওয়া যাবে না। কাঠের অংশ দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। মাঝের অংশ দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তার পালক দেখলে তাতেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। অথচ তীরটি শিকারী জন্তুর নাড়িভুঁড়ি ভেদ করে রক্তমাংস পার হয়ে বেরিয়ে গেছে। এদের নিদর্শন হল এমন একটি কাল মানুষ যার একটি বাহু নারীর স্তনের মত অথবা মাংস খণ্ডের মত নড়াচড়া করিবে। তারা লোকদের মধ্যে বিরোধ কালে আত্মপ্রকাশ করিবে।

আবু সাঈদ [রাদি.] বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি স্বয়ং আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে এ কথা শুনিয়াছি। আমি এ-ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] এদের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়াছেন। আমিও তার সঙ্গে ছিলাম। তখন আলী [রাদি.] ঐ লোককে খুঁজে বের করিতে আদেশ দিলেন। খোঁজ করে যখন আনা হল আমি মনোযোগের সঙ্গে তাকিয়ে তার মধ্যে ঐ সব চিহ্নগুলি দেখিতে পেলাম, যা নাবী [সাঃআঃ] বলেছিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬১ : /২৫ হাঃ ৩৬১০, মুসলিম ১২/৪৭ হাঃ ১০৬৪] জাকাত ও খারিজিদের পরিচয় -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Was this article helpful?

Related Articles