খাজির (আ:)-এর মর্যাদা।

১৫৩৯. সাঈদ ইবনি যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে বললাম, নাওফ আল-বাকালী দাবী করে যে, মূসা [আ.] {যিনি খাযির [আ.]-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন তিনি} বনী ইসরাঈলের মূসা নন বরং তিনি অন্য এক মূসা। [একথা শুনে] তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র দুশমন মিথ্যা বলেছে। উবাঈ ইবনি কাব [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ] হইতে আমাদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেনঃ মূসা [আ.] একদা বনী ইসলাঈলদের মধ্যে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তিনি বলিলেন, আমি সবচেয়ে জ্ঞানী। মহান আল্লাহ্ তাঁকে সতর্ক করে দিলেন। কেননা তিনি ইল্‌মকে আল্লাহ্‌র নিকট সোপর্দ করেন নি। অতঃপর আল্লাহ্ তাহাঁর নিকট এ ওয়াহী প্রেরণ করলেনঃ দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে আমার বান্দাদের মধ্যে এক বান্দা রয়েছে, যে তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী। তিনি বলেন, হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে তার সাক্ষাৎ পাব? তখন তাঁকে বলা হল, থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে নাও। অতঃপর যেখানে সেটি হারিয়ে ফেলবে সেখানেই তাকে পাবে। অতঃপর তিনি ইউশা ইব্ন নূনকে সাথে নিয়ে যাত্রা করিলেন। তাঁরা থলের মধ্যে একটি মাছ নিলেন। পথিমধ্যে তাঁরা একটি বড় পাথরের নিকট এসে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। তারপর মাছটি থলে হইতে বেরিয়ে গেল এবং সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে চলে গেল। এ ব্যাপারটি মূসা [আ.] ও তাহাঁর খাদিম-এর জন্য ছিল আশ্চর্যের বিষয়। অতঃপর তাঁরা তাহাদের বাকীদিন ও রাতভর চলতে থাকলেন। পরে ভোরবেলা মূসা [আ.] তাহাঁর খাদিমকে বলিলেন, আমাদের নাশতা নিয়ে এস, আমরা আমাদের এ সফরে খুবই ক্লান্ত, আর মূসা [আ.]-কে যে স্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে তিনি ক্লান্তি অনুভব করেন নি। তারপর তাহাঁর সাথী তাঁকে বলিল, আপনি কি লক্ষ্য করিয়াছেন, আমরা যখন পাথরের পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? মূসা [আ.] বলিলেন, আমরা তো সেই স্থানটিরই খোঁজ করছিলাম। অতঃপর তাঁরা তাঁদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন। তাঁরা সেই পাথরের নিকট পৌঁছে দেখিতে গেলেন, এক ব্যক্তি [বর্ণনাকারী বলেন,] কাপড় মুড়ি দিয়ে আছেন। মূসা [আ.] তাঁকে সালাম দিলেন। তখন খাযির বলিলেন, এ দেশে সালাম কোথা হইতে আসল! তিনি বলিলেন, আমি মূসা। খাযির প্রশ্ন করিলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা [আ.]? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি আরো বলিলেন, “সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য আমি কি আপনাকে অনুসরণ করিতে পারি? খাযির বলিলেন, “তুমি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না। হে মূসা [আ.]! আল্লাহ্‌র ইল্‌মের মধ্যে আমি এমন এক ইলম নিয়ে আছি যা তিনি কেবল আমাকেই শিখিয়েছেন, যা তুমি জান না। আর তুমি এমন ইলমের অধিকারী, যা আল্লাহ তোমাকেই শিখিয়েছেন, তা আমি জানি না।” মূসা [আ.] বলিলেন, “আল্লাহ্ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার আদেশ অমান্য করব না। অতঃপর তাঁরা দুজন সমুদ্র তীর দিয়ে চলতে লাগলেন, তাঁদের কোন নৌকা ছিল না। ইতোমধ্যে তাঁদের নিকট দিয়ে একটি নৌকা যাচ্ছিল। তাঁরা নৌকাওয়ালাদের সাথে তাহাদের তুলে নেয়ার কথা বলিলেন। তারা খাযিরকে চিনতে পারল এবং ভাড়া ব্যতিরেকে তাঁদের নৌকায় তুলে নিল। তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসে একবার কি দুবার সমুদ্রে তার ঠোঁট ডুবাল। খাযির বলিলেন, হে মূসা [আ.]! আমার এবং তোমার জ্ঞান [সব মিলেও] আল্লাহ্‌র জ্ঞানের তুলনায় চড়ুই পাখির ঠোঁটে যতটুকু পানি এসেছে তার চেয়েও কম। অতঃপর খাযির নৌকার তক্তাগুলোর মধ্য থেকে একটি খুলে ফেললেন। মূসা [আ.] বলিলেন, এরা আমাদের বিনা ভাড়ায় আরোহণ করিয়েছে, আর আপনি আরোহীদের ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন? খাযির বলিলেন, “আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধরে থাকতে পারবে না?” মূসা [আ.] বলিলেন, আমার ত্রুটির জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অধিক কঠোর হইবেন না। বর্ণনাকারী বলেন, এটা মূসা [আ.]-এর প্রথমবারের ভুল। অতঃপর তাঁরা দুজন [নৌকা থেকে নেমে] চলতে লাগলেন। [পথে] একটি বালক অন্যান্য বালকের সাথে খেলা করছিল। খাযির তার মাথার উপর দিক দিয়ে ধরলেন এবং হাত দিয়ে তার মাথা ছিন্ন করে ফেললেন। মূসা [আ.] বলিলেন, আপনি হত্যার অপরাধ ছাড়াই একটি নিষ্পাপ জীবন নাশ করিলেন? খাযির বলিলেন “আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কখনো ধৈর্য ধরতে পারবে না?” ইব্ন উয়ায়না [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এটা ছিল পূর্বের চেয়ে অধিক জোরালো। তারপর আবারো চলতে লাগলেন; চলতে চলতে তারা এক গ্রামের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাহাদের নিকট খাদ্য চাইলেন কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করিতে অস্বীকার করিল। অতঃপর সেখানে তাঁরা এক ধ্বসে যাওয়ার উপক্রম এমন একটি প্রাচীর দেখিতে পেলেন। খাযির তাহাঁর হাত দিয়ে সেটি দাঁড় করে দিলেন। মূসা [আ.] বলিলেন, আপনি ইচ্ছে করলে এর জন্য মজুরী নিতে পারতেন। তিনি বলিলেন, এখানেই তোমার আর আমার মধ্যে সম্পর্কের অবসান। নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মূসার ওপর রহম করুন। আমাদের কতই না মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতো যদি তিনি সবর করিতেন, তাহলে আমাদের নিকট তাঁদের আরো ঘটনাবলী বর্ণনা করা হতো।

[বোখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ১২২; মুসলিম ৪৩/৪৬, হাঃ ২৩৮০]

Was this article helpful?

Related Articles