কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করার সময় তাহনিক করা [কিছু চিবিয়ে মুখে দেয়া] এবং তাহনিক করার জন্য ভাল লোকের নিকট নিয়ে যাওয়া মুস্তাহাব। জন্মের দিন নাম রাখা জায়িয এবং আবদুল্লাহ, ইবরাহীম ও সমস্ত নাবী [সাঃআঃ]গণের নামে নাম রাখা মুস্তাহাব।

১৩৮৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবু ত্বলহার এক ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ল। আবু ত্বলহা বাইরে গেলেন, তখন ছেলেটি মারা গেল। আবু ত্বলহা [রাদি.] ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেনঃ ছেলেটি কী করছে? উম্মু সুলাইম বললেনঃ সে আগের চেয়ে শান্ত। তারপর তাঁকে রাতের খাবার দিলেন। তিনি আহার করিলেন। তারপর উম্মু সুলাইমের সঙ্গে যৌন সঙ্গম করিলেন। যৌন সঙ্গম ক্রিয়া শেষে উম্মু সুলাইম বললেনঃ ছেলেটিকে দাফন করে আস। সকাল হলে আবু ত্বলহা [রাদি.] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে তাঁকে এ ঘটনা বলিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ গত রাতে তুমি কি স্ত্রীর সঙ্গে রয়েছ? তিনি বললেনঃ হাঁ! নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! তাহাদের জন্য তুমি বরকত দান কর। কিছুদিন পর উম্মু সুলাইম একটি সন্তান প্রসব করিল [রাবী বলেনঃ ] আবু ত্বলহা [রাদি.] আমাকে বলিলেন, তাকে তুমি দেখাশোনা কর যতক্ষণ না আমি তাকে নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে নিয়ে যাই। তারপর তিনি তাকে নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে নিয়ে গেলেন। উম্মু সুলাইম সঙ্গে কিছু খেজুর দিয়ে দিলেন। নাবী [সাঃআঃ] তাকে [কোলে] নিলেন এবং জিজ্ঞেস করিলেন, তার সঙ্গে কিছু আছে কি? তাঁরা বললেনঃ হাঁ, আছে। তিনি তা নিয়ে চর্বন করিলেন এবং তারপর মুখ থেকে বের করে বাচ্চাটির মুখে দিলেন। তিনি এর দ্বারাই তার তাহনীক করিলেন এবং তার নাম রাখলেন আবদুল্লাহ।

[বোখারী পর্ব ৭১ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৪৭০; মুসলিম ৩৮/৫, হাঃ ২১৪৪] আচার ব্যবহার -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৩৮৭. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলে আমি তাকে নিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে গেলাম। তিনি তার নাম রাখলেন ইবরাহীম। তারপর খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিলেন এবং তার জন্য বারকাতের দুআ করে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সে ছিল আবু মূসার বড় সন্তান।

[বোখারী পর্ব ৭১ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৪৬৭; মুসলিম ৩৮/৪ হাঃ ২১৪৫] আচার ব্যবহার -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৩৮৮. আসমা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তখন আবদুল্লাহ্ ইবনি যুবায়ের তার গর্ভে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি এমন সময় হিজরত করি যখন আমি আসন্ন প্রসবা। আমি মাদীনায় এসে কুবাতে অবতরণ করি। এ কুবাতেই আমি পুত্র সন্তানটি প্রসব করি। এরপর আমি তাকে নিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে তাহাঁর কোলে দিলাম। তিনি একটি খেজুর আনালেন এবং তা চিবিয়ে তার মুখে দিলেন। কাজেই সর্বপ্রথম যে বস্তুটি আবদুল্লাহর পেটে গেল তা হল নাবী [সাঃআঃ]-এর থুথু। নাবী [সাঃআঃ] সামান্য চিবানো খেজুর নবজাতকের মুখের ভিতরের তালুর অংশে লাগিয়ে দিলেন। এরপর তার জন্য দুআ করিলেন এবং বরকত চাইলেন। তিনি হলেন প্রথম নবজাতক সন্তান যিনি হিজরাতের পর মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেন।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৪৫ হাদীস নং ৩৯০৯; মুসলিম ৩৮/৪ হাঃ ২১৪৬] আচার ব্যবহার -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৩৮৯. সাহ্‌ল বিন সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

যখন মুনযির ইবনি আবু উসায়দ জন্মগ্রহণ করিলেন, তখন তাকে নাবী [সাঃআঃ]-এর খিদমতে নিয়ে আসা হলো। তিনি তাকে নিজের উরুর উপর রাখলেন। আবু উসায়দ পাশেই বসা ছিলেন। এ সময় নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর সামনেই কোন জরুরী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ইত্যবসরে আবু উসায়দ [রাদি.] কারো দ্বারা তাহাঁর উরু থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। পরে নাবী [সাঃআঃ] সে কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করে জিজ্ঞেস করলেনঃ শিশুটি কোথায়? আবু উসায়দ বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]! আমি তাকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তার নাম কী? তিনি বললেনঃ অমুক। নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ বরং তার নাম মুন্‌যির। সে দিন থেকে তার নাম রাখলেন মুন্‌যির।

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১০৮ হাদীস নং ৬১৯১; মুসলিম ৩৮/৫, হাঃ ২১৪৯] আচার ব্যবহার -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


১৩৯০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] সবার চেয়ে অধিক সদাচারী ছিলেন। আমার একজন ভাই ছিল; তাকে আবু উমায়র বলে ডাকা হতো। আমার অনুমান যে, সে তখন মায়ের দুধ খেতো না। যখনই সে তাহাঁর নিকট আসতো, তিনি বলিতেনঃ হে আবু উমায়র! তোমার নুগায়র কি করছে? সে নুগায়র পাখিটা নিয়ে খেলতো। আর প্রায়ই যখন সলাতের সময় হতো, আর তিনি আমাদের ঘরে থাকতেন, তখন তাহাঁর নীচে যে বিছানা থাকতো, সামান্য পানি ছিটিয়ে ঝেড়ে দেয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিতেন। তারপর তিনি সলাতের জন্য দাঁড়াতেন এবং আমরাও তাহাঁর পেছনে দাঁড়াতাম। আর তিনি আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করিতেন।

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১১২ হাদীস নং ৬২০৩; মুসলিম ৩৮/৫, হাঃ ২১৫০] আচার ব্যবহার -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

Was this article helpful?

Related Articles