উম্মু যারআ (রা)-এর মর্যাদা।

১৫৯০. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ১১ জন মহিলা এক স্থানে একত্রিত হয়ে বসল এবং সকলে মিলে এ কথার ওপর একমত হল যে, তারা নিজেদের স্বামীর ব্যাপারে কোন তথ্যই গোপন রাখবে না।

প্রথম মহিলা বলিল,

আমার স্বামী হচ্ছে অত্যন্ত হাল্কা-পাতলা দুর্বল উটের গোশতের মত যেন কোন পর্বতের চূড়ায় রাখা হয়েছে এবং সেখানে আরোহণ করা সহজ কাজ নয় এবং গোশতের মধ্যে এত চর্বিও নেই, যে কারণে সেখানে উঠার জন্য কেউ কষ্ট স্বীকার করিবে।

দ্বিতীয় মহিলা বলিল,

আমি আমার স্বামী সম্পর্কে কিছু বলব না, কারণ আমি ভয় করছি যে, তার সম্পর্কে বলিতে গিয়ে শেষ করা যাবে না। কেননা, যদি আমি তার সম্পর্কে বলিতে যাই, তা হলে আমাকে তার সকল দুর্বলতা এবং মন্দ দিকগুলো সম্পর্কেও বলিতে হইবে।

তৃতীয় মহিলা বলিল,

আমার স্বামী একজন দীর্ঘদেহী ব্যক্তি। আমি যদি তার বর্ণনা দেই [আর সে যদি তা শোনে] তাহলে সে আমাকে ত্বলাক্ব দিবে। আর যদি আমি কিছু না বলি, তাহলে সে আমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখবে। অর্থাৎ ত্বলাক্বও দেবে না, স্ত্রীর মতো ব্যবহারও করিবে না।

চতুর্থ মহিলা বলিল,

আমার স্বামী হচ্ছে তিহামার রাতের মত মাঝামাঝি- অতি গরমও না, অতি ঠাণ্ডাও না, আর আমি তাকে ভয়ও করি না, আবার তার প্রতি অসন্তুষ্টও নই।

পঞ্চম মহিলা বলিল,

যখন আমার স্বামী ঘরে প্রবেশ করে তখন চিতা বাঘের মত থাকে। যখন বাইরে যায় তখন সিংহের ন্যায় তার স্বভাব থাকে এবং ঘরের কোন কাজের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তোলে না।

৬ষ্ঠ মহিলা বলিল,

আমার স্বামী যখন খেতে বসে, তখন সব খেয়ে ফেলে। যখন পান করে, তখন সব শেষ করে। যখন নিদ্রা যায়, তখন একাই চাদর বা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে। এমনকি হাত বের করেও আমার খবর নেয় না।

সপ্তম মহিলা বলিল,

আমার স্বামী হচ্ছে পথভ্রষ্ট অথবা দুর্বল মানসিকতা সম্পন্ন এবং চরম বোকা, সব রকমের দোষ তার আছে। সে তোমার মাথায় বা শরীরে অথবা উভয় স্থানে আঘাত করিতে পারে।

অষ্টম মহিলা বলিল,

আমার স্বামীর পরশ হচ্ছে খরগোশের মত এবং তার দেহের সুগন্ধ হচ্ছে যারনাম [এক প্রকার বনফুল-এর মত]।

নবম মহিলা বলিল,

আমার স্বামী হচ্ছে অতি উচ্চ অট্টালিকার মত এবং তার তরবারি ঝুলিয়ে রাখার জন্য সে চামড়ার লম্বা ফালি পরিধান করে [অর্থাৎ সে দানশীল ও সাহসী]। তার ছাইভষ্ম প্রচুর পরিমাণের [অর্থাৎ প্রচুর মেহমান আছে এবং মেহমানদারীও হয়] এবং মানুষের জন্য তার গৃহ অবারিত। এ লোকজন তার সঙ্গে সহজেই পরামর্শ করিতে পারে।

দশম মহিলা বলিল,

আমার স্বামীর নাম হল মালিক। মালিকের কী প্রশংসা আমি করব। যা প্রশংসা করব সে তার চেয়ে উর্ধ্বে। তার অনেক মঙ্গলময় উট আছে, তার অধিকাংশ উটকেই ঘরে রাখা হয় [অর্থাৎ মেহমানদের যবাই করে খাওয়ানোর জন্য] এবং অল্প সংখ্যক মাঠে চরার জন্য রাখা হয়। বাঁশির শব্দ শুনলেই উটগুলো বুঝতে পারে যে, তাহাদেরকে মেহমানদের জন্য যবাই করা হইবে।

একাদশতম মহিলা বলিল,

আমার স্বামী আবু যারআ। তার কথা আমি কী বলব। সে আমাকে এত অধিক গহনা দিয়েছে যে, আমার কান ভারী হয়ে গেছে, আমার বাজুতে মেদ জমেছে এবং আমি এত সন্তুষ্ট হয়েছি যে, আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। সে আমাকে এনেছে অত্যন্ত গরীব পরিবার থেকে, যে পরিবার ছিল মাত্র কয়েকটি বকরীর মালিক। সে আমাকে অত্যন্ত ধনী পরিবারে নিয়ে আসে, যেখানে ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি এবং উটের হাওদার আওয়াজ এবং শস্য মাড়াইয়ের খসখসানি শব্দ শোনা যায়। সে আমাকে ধন-সম্পদের মধ্যে রেখেছে। আমি যা কিছু বলতাম, সে বিদ্রুপ করত না এবং আমি নিদ্রা যেতাম এবং সকালে দেরী করে উঠতাম এবং যখন আমি পান করতাম, অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে পান করতাম।

আর আবু যারআর আম্মার কথা কী বলব! তার পাত্র ছিল সর্বদা পরিপূর্ণ এবং তার ঘর ছিল প্রশস্ত।

আবু জারআর পুত্রের কথা কী বলব! সেও খুব ভাল ছিল। তার শয্যা এত সংকীর্ণ ছিল যে, মনে হত যেন কোষবদ্ধ তরবারি অর্থাৎ সে অত্যন্ত হালকা-পাতলা দেহের অধিকারী। তার খাদ্য হচ্ছে ছাগলের একখানা পা।

আর আবু যারআর কন্যা সম্পর্কে বলিতে হয় যে, সে কতই না ভাল। সে বাপ-মায়ের সম্পূর্ণ অনুগতা সন্তান। সে অত্যন্ত সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী, যে কারণে সতীনরা তাকে হিংসা করে। আবু যারআর ক্রীতদাসীরও অনেক গুণ। সে আমাদের গোপন কথা কখনো প্রকাশ করত না, সে আমাদের সম্পদকে কমাত না এবং আমাদের বাসস্থানকে আবর্জনা দিয়ে ভরে রাখত না।

সে মহিলা আরও বলিল, একদিন দুধ দোহন করার সময় আবু যারআ বাইরে বেরিয়ে এমন একজন মহিলাকে দেখিতে পেল, যার দুটি পুত্র-সন্তান রয়েছে। ওরা মায়ের স্তন নিয়ে চিতা বাঘের মত খেলছিল [দুধ পান করছিল]। সে ঐ মহিলাকে দেখে আকৃষ্ট হল এবং আমাকে ত্বলাক্ব দিয়ে তাকে শাদী করিল। এরপর আমি এক সম্মানিত ব্যক্তিকে শাদী করলাম। সে দ্রুতগামী অশ্বে আরোহণ করত এবং হাতে বর্শা রাখত। সে আমাকে অনেক সম্পদ দিয়েছে এবং প্রত্যেক প্রকারের গৃহপালিত জন্তু থেকে এক এক জোড়া আমাকে দিয়েছে এবং বলেছে, হে উম্মু যারআ! তুমি এ সম্পদ থেকে খাও, পরিধান কর এবং উপহার দাও।

মহিলা আরও বলিল, সে আমাকে যা কিছু দিয়েছে, তা আবু যারআর একটি ক্ষুদ্র পাত্রও পূর্ণ করিতে পারবে না [অর্থাৎ আবু যারআর সম্পদের তুলনায় তা খুবই সামান্য ছিল]।

আয়েশা [রাদি.] বলেন, রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, “আবু যারআ তার স্ত্রী উম্মু যারআর প্রতি যেরূপ [আমিও তোমার প্রতি তদ্রুপ [পার্থক্য এতটুকুই] আমি তোমাকে ত্বলাক্ব দেব না এবং তোমার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করব।

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ৮৩ হাদীস নং ৫১৮৯; মুসলিম ৪৪/১৪, হাঃ ২৪৪৮]

Was this article helpful?

Related Articles