উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা)-এর মর্যাদা।

১৫৭৯. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে বলেন, দুবার তোমাকে আমায় স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম, তুমি একটি রেশমী কাপড়ে আবৃতা এবং আমাকে বলছে ইনি আপনার স্ত্রী, আমি তার ঘোমটা সরিয়ে দেখলাম, সে মহিলা তুমিই। তখন আমি ভাবছিলাম, যদি তা আল্লাহ্‌র পক্ষ হইতে হয়ে থাকে, তবে তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ৩৮৯৫; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ নং ২৪৩৮]


১৫৮০.আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, “আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশী থাক এবং কখন রাগান্বিত হও।” আমি বললাম, কী করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বলিলেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, না! মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর রব-এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বল, না! ইব্রাহীম [আ.]-এর রব-এর কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহ্‌র কসম, হে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি।

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১০৯ হাদীস নং ৫২২৮; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ৬১০]


১৫৮১. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলতো। রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাহাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলা করত।

[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৮১ হাদীস নং ৬১৩০; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪০]


১৫৮২. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

লোকেরা তাহাদের হাদিয়া পাঠাবার ব্যাপারে আয়েশা [রাদি.]-এর জন্য নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত।

[বোখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ২৫৭৪; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪১, ২৪৪২]


১৫৮৩. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

মৃত্যু রোগকালীন অবস্থায় রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিতেন, আমি আগামীকাল কার ঘরে থাকব। আগামীকাল কার ঘরে? এর দ্বারা তিনি আয়েশা [রাদি.]-এর ঘরের পালার ইচ্ছে পোষণ করিতেন। সহধর্মিণীগণ নাবী [সাঃআঃ]-কে যার ঘরে ইচ্ছে অবস্থান করার অনুমতি দিলেন। তখন নাবী [সাঃআঃ] আয়েশা [রাদি.]-এর ঘরে ছিলেন। এমনকি তাহাঁর ঘরেই তিনি ইন্তিকাল করেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আমার জন্য নির্ধারিত পালার দিন আমার ঘরে ইন্তিকাল করেন এবং আল্লাহ তাহাঁর রূহ কবজ করেন এ অবস্থায় যে, তাহাঁর মাথা ছিল আমার কণ্ঠ ও বক্ষের মধ্যে।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৫০; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪৩]


১৫৮৪. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকালের পূর্বে যখন তাহাঁর পিঠ আমার উপর হেলান দেয়া অবস্থায় ছিল, তখন আমি কান ঝুঁকিয়ে দিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন এবং মহান বন্ধুর সঙ্গে আমাকে মিলিত করুন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৪০; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ২৪৪৩]


১৫৮৫. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এ কথা শুনিয়াছিলাম যে, কোন নাবী [সাঃআঃ] মারা যান না যতক্ষণ না তাঁকে বলা হয় দুনিয়া বা আখিরাতের একটি বেছে নিতে। যে রোগে নাবী [সাঃআঃ] ইন্তিকাল করেন সে রোগে আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে যন্ত্রণায় কাতর অবস্থায় বলিতে শুনিয়াছি-তাঁদের সঙ্গে যাঁদের প্রতি আল্লাহ তাআলা নিআমত প্রদান করিয়াছেন {তাঁরা হলেন- নাবী [আ.]-গণ, সিদ্দীকগণ এবং শহীদগণ।} [সূরাহ আন-নিসা ৪/৬৯]। তখন আমি ধারণা করলাম যে, তাঁকেও একটি বেছে নিতে বলা হয়েছে।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৩৫; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪৪]


১৫৮৬. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] সুস্থাবস্থায় বলিতেন, জান্নাতে তাহাঁর স্থান দেখানো ব্যতীত কোন নাবী [আ.]-এর প্রাণ কখনো কবজ করা হয়নি। তারপর তাঁকে জীবন বা মৃত্যু একটি গ্রহণ করিতে বলা হয়। এরপর যখন নাবী [সাঃআঃ] অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাহাঁর মাথা আয়েশা [রাদি.]-এর উরুতে রাখাবস্থায় তাহাঁর জান কবজের সময় উপস্থিত হল তখন তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে গেলেন। এরপর যখন তিনি সংজ্ঞা ফিরে পেলেন তখন তিনি ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহ! উচ্চে সমাসীন বন্ধুর সঙ্গে [মিলিত হইতে চাই]। অনন্তর আমি বললাম, তিনি আর আমাদের মাঝে থাকতে চাচ্ছেন না। এরপর আমি উপলব্ধি করলাম যে, এটা হচ্ছে ঐ কথা যা তিনি আমাদের কাছে সুস্থাবস্থায় বর্ণনা করিতেন।

[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৩৭; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ২৪৪৩]


১৫৮৭. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখনই নাবী [সাঃআঃ] সফরে যাওয়ার ইরাদা করিতেন, তখনই স্ত্রীগণের মাঝে লটারী করিতেন। এক সফরের সময় আয়েশা [রাদি.] এবং হাফসাহ [রাদি.]-এর নাম লটারীতে ওঠে। নাবী [সাঃআঃ]-এর অভ্যাস ছিল যখন রাত হত তখন আয়েশা [রাদি.]-এর সঙ্গে এক সওয়ারীতে আরোহণ করিতেন এবং তাহাঁর সঙ্গে কথা বলিতে বলিতে পথ চলতেন। এক রাতে হাফসাহ [রাদি.] আয়েশা [রাদি.]-কে বলিলেন, আজ রাতে তুমি কি আমার উটে আরোহণ করিবে এবং আমি তোমার উটে, যাতে করে আমি তোমাকে এবং তুমি আমাকে এক নতুন অবস্থায় দেখিতে পাবে? আয়েশা [রাদি.] উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আমি রাযী আছি। সে হিসাবে আয়েশা [রাদি.] হাফসাহ [রাদি.]-এর উটে এবং হাফসাহ [রাদি.] আয়েশা [রাদি.]-এর উটে সওয়ার হলেন। নাবী [সাঃআঃ] আয়েশা [রাদি.]-এর নির্ধারিত উটের কাছে এলেন, যার ওপর হাফসাহ [রাদি.] বসা ছিলেন। তিনি সালাম করিলেন এবং তাহাঁর পার্শ্বে বসে সফর করিলেন। পথিমধ্যে এক স্থানে সবাই অবতরণ করিলেন। আয়েশা [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হলেন। যখন তাঁরা সকলেই অবতরণ করিলেন তখন আয়েশা [রাদি.] নিজ পদযুগল ইযখির নামক ঘাসের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বলিতে লাগলেন, হে আল্লাহ্! তুমি আমার জন্য কোন সাপ বা বিচ্ছু পাঠিয়ে দাও, যাতে আমাকে দংশন করে। কেননা, আমি এ ব্যাপারে রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]-কে কিছু বলিতে পারব না।

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ৯৮ হাদীস নং ৫২১১; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪৫]


১৫৮৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, আয়েশা [রাদি.]-এর মর্যাদা নারীদের উপর এমন যেমন সারীদের মর্যাদা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের উপর।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৩৭৭০; মুসলিম ৪/১৩ হাঃ ২৪৪৬]


১৫৮৯. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

একদা নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে বলিলেন, হে আয়িশা! এই যে জিব্রাঈল [আ.] তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন তিনি বলিলেন, তাহাঁর প্রতি সালাম, আল্লাহর রহমত এবং তাহাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আপনি এমন কিছু দেখেন যা আমি দেখিতে পাই না। এর দ্বারা তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে বুঝিয়েছেন।

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩২১৭; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ২৪৪৭]

Was this article helpful?

Related Articles