আবু যার (রা)-এর মর্যাদা।

১৬০৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর আবির্ভাবের খবর যখন আবু যার [রাদি.] এর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি তাহাঁর ভাইকে বলিলেন, তুমি এ উপত্যকায় গিয়ে ঐ লোক সম্পর্কে জেনে আস যে লোক নিজেকে নাবী বলে দাবী করছেন ও তাহাঁর কাছে আসমান হইতে সংবাদ আসে। তাহাঁর কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুন এবং ফিরে এসে আমাকে শুনাও। তাহাঁর ভাই রওয়ানা হয়ে ঐ লোকের কাছে পৌঁছে তাহাঁর কথাবার্তা শুনলেন। এরপর তিনি আবু যারের নিকট ফিরে গিয়ে বলিলেন, আমি তাঁকে দেখেছি যে, তিনি উত্তম আখলাক গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দান করছেন এবং এমন কালাম যা পদ্য নয়। এতে আবু যার [রাদি.] বলিলেন, আমি যে জন্য তোমাকে পাঠিয়েছিলাম সে বিষয়ে তুমি আমাকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলে না। আবু যার [রাদি.] সফরের জন্য সামান্য পাথেয় সংগ্রহ করিলেন এবং একটি ছোট্ট পানির মশকসহ মাক্কায় উপস্থিত হলেন। মসজিদে হারামে প্রবেশ করে নাবী [সাঃআঃ]-কে খোঁজ করিতে লাগলেন। তিনি তাঁকে চিনতেন না। আবার কাউকে তাহাঁর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাও পছন্দ করিলেন না। এ অবস্থায় রাত হয়ে গেল। তিনি শুয়ে পড়লেন। আলী [রাদি.] তাঁকে দেখে বুঝলেন যে, লোকটি বিদেশী। যখন আবু যার আলী [রাদি.]-কে দেখলেন, তখন তিনি তাহাঁর পিছনে পিছনে গেলেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত একে অন্যকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন না। আবু যার [রাদি.] পুনরায় তাহাঁর পাথেয় ও মশক নিয়ে মসজিদে হারামের দিকে চলে গেলেন। এ দিনটি এমনিভাবে কেটে গেল, কিন্তু নাবী [সাঃআঃ] তাকে দেখিতে পেলেন না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তিনি শোয়ার জায়গায় ফিরে গেলেন। তখন আলী [রাদি.] তাহাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলিলেন, এখনও কি মুসাফিরের গন্তব্য স্থানের সন্ধান হয়নি? সে এখনও এ জায়গায় অবস্থান করছে। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। কেউ কাউকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করিলেন না। এ অবস্থায় তৃতীয় দিন হয়ে গেল। আলী [রাদি.] পূর্বের ন্যায় তাহাঁর পাশ দিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন। তুমি কি আমাকে বলবে না কোন জিনিস এখানে আসতে তোমাকে অনুপ্রেরিত করেছে? আবু যার [রাদি.] বলিলেন, তুমি যদি আমাকে সঠিক রাস্তা দেখানোর পাকা অঙ্গীকার কর তবেই আমি তোমাকে বলিতে পারি। আলী [রাদি.] অঙ্গীকার করিলেন এবং আবু যার [রাদি.] ও তাহাঁর আগমনের উদ্দেশ্য বলিলেন। আলী [রাদি.] বলিলেন, তিনি সত্য, তিনি আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ], যখন ভোর হয়ে যাবে তখন তুমি আমার অনুসরণ করিবে। তোমার জন্য ভয়ের কারণ আছে এমন যদি কোন ব্যাপার আমি দেখিতে পাই তবে আমি রাস্তার পাশে চলে যাব যেন আমি পেশাব করিতে চাই। আর যদি আমি সোজা চলতে থাকি তবে তুমিও আমার অনুসরণ করিতে থাকিবে এবং যে ঘরে আমি প্রবেশ করি সে ঘরে তুমিও প্রবেশ করিবে। আবু যার [রাদি.] তাই করিলেন। আলী [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে প্রবেশ করিলেন এবং তিনিও তাহাঁর [আলীর] সাথে প্রবেশ করিলেন। তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর কথাবার্তা শুনলেন এবং ঐখানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করিলেন। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি তোমার স্বগোত্রে ফিরে যাও এবং আমার নির্দেশ না পৌঁছা পর্যন্ত আমার ব্যাপারে তাহাদেরকে অবহিত করিবে। আবু যার [রাদি.] বলিলেন, ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি আমার ইসলাম গ্রহণকে মুশরিকদের সম্মুখে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করব। এই বলে তিনি বেরিয়ে পড়লেন ও মাসজিদে হারামে গিয়ে হাজির হলেন এবং উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করিলেন, أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاِّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ লোকজন তাহাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং মারতে মারতে তাঁকে মাটিতে ফেলে দিল। এমন সময় আব্বাস [রাদি.] এসে তাঁকে রক্ষা করিলেন এবং বলিলেন, তোমাদের বিপদ অবধারিত। তোমরা কি জাননা, এ লোকটি গিফার গোত্রের? আর তোমাদের ব্যবসায়ী কাফেলাগুলিকে গিফার গোত্রের নিকট দিয়েই সিরিয়া যাতায়াত করিতে হয়। এ কথা বলে তিনি তাহাদের হাত হইতে আবু যারকে রক্ষা করিলেন। পরদিন সকালে তিনি ঐরূপই বলিতে লাগলেন। লোকেরা তাহাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে ভীষণভাবে মারতে লাগল। আব্বাস [রাদি.] এসে তাঁকে সামলে নিলেন।

[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৩৩ হাদীস নং ৩৮৬১; মুসলিম ৪৪/২৮ হাঃ ২৪৭৪]

Was this article helpful?

Related Articles