নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর দরূদ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপর দরূদ পড়ার ফযীলত
আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
“অবশ্যই আল্লাহ তাঁর নবীর উপর রহমত পাঠান ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর জন্য ইস্তিগফার করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমারাও তাঁর উপর দরূদ পড় এবং তাঁর প্রতি সালাম পাঠাও।” (সূরা আহযাবঃ ৫৭)
১৩৯৮. হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করেন।” (মুসলিম)
১৩৯৯. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি আমার সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সর্বাধিক দরূদ পড়ে।” (তিরমিযী)
১৪০০. হযরত আওস ইবনে আওস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দিনটি হচ্ছে জুমু’আর দিন। অতএব তোমরা ঐদিন আমার ওপর বেশি বেশি করে দরূদ পড়। কারণ তোমাদের দরূদগুলো আমার নিকট পেশ করা হয়। সাহাবা কিরাম (রা) আরয করেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের দরূদ কিভাবে আপনার নিকট পেশ করা হবে, আপনি তো তখন যমীনের সাথে মিশে যাবেন? তিনি বললেনঃ “নিশ্চিত নবীগণের দেহকে আল্লাহ যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।” (আবু দাঊদ)
১৪০১. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “সে ব্যক্তির নাসিকা ধূলি ধূসরিত হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হয়েছে আর সে আমার ওপর দরূদ পড়েনি।” (তিরমিযী)
১৪০২. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আমার কবরকে ঈদ অর্থাৎ আনন্দোৎসবের স্থানে পরিণত করো না। বরং আমার ওপর দরূদ পড়ো। কারণ তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের সালাম ও দরূদ আমার নিকট পৌঁছে যায়। (আবু দাঊদ)
১৪০৩. হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “তোমাদের যে কেউ আমার ওপর সালাম দেয়, মহান আল্লাহ তখনই আমার রূহ আমাকে ফেরত দেন অবশেষে আমি তার সালামের জবাব দেই।” (আবূ দাউদ সহীহ সনদের সাথে)
১৪০৪. হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তির সামনে আমার নাম আলোচিত হয়েছে সে আমার ওপর দরূদ পড়েনি সে হচ্ছে প্রকৃত কৃপণ।” (তিরমিযী)
১৪০৫. হযরত ফাদ্বালা ইবনে উবাইদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এক ব্যক্তিকে এর নামে নামাযে দু’আ করতে শুনলেন। কিন্তু সে দু’আয় মহান আল্লাহর মাহাত্ম্য বর্ণনা করলো না, নবী করীম (সা)-এর ওপর দরূদও পড়লো না। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ এ ব্যক্তি তাড়াহুড়ো করেছে। তারপর তাকে ডেকে বললেন বা অন্য কাউকে বললেনঃ “যখন তোমাদের কেউ নামায শেষ করে, তখন তার পাক-পবিত্র প্রভুর হামদ ও সানা দিয়েই দু’আ শুরু করা উচিত, তারপর নবী করীম (সা)-এর ওপর দরূদ পাঠ করা উচিত, তারপর নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী দু’আ করবে। (আবু দাঊদ ও তিরমিযী)
১৪০৬. হযরত আবু মুহাম্মাদ কা’ব ইবনে উজরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) একদিন আমাদের নিকট এলেন। আমরা তাঁকে বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার ওপর সালাম কিভাবে পেশ করতে হয় তা আমরা জানি না। কিন্তু আপনার ওপর দরূদ কিভাবে পড়তে হবে? তিনি বললেনঃ “তোমরা বলোঃ আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আ- লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা আ- লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বা- রিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আ- লি মুহাম্মাদিন কামা বা- রাকতা আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।” “(হে আল্লাহ!) রহম করুন মুহাম্মাদের ওপর এবং মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের ওপর নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! বরকত দান করুন মুহাম্মাদের ওপর ও মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের ওপর যেমন আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহীমের পরিবারবর্গের ওপর, নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।” (বুখারী ও মুসলিম)
১৪০৭. হযরত আবু মাসঊদ আল-বাদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের নিকট এলেন। আমরা তখন সা’দ ইবনে উবাদার মজলিসে ছিলাম। বাশীর ইবনে সা’দ (রা) তাঁকে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ আমাদের আপনার ওপর সালাত পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু আমরা কিভাবে আপনার ওপর সালাত পেশ করবো। রাসূলুল্লাহ (সা) চুপ রইলেন, এমন কি আমরা কামনা করতে থাকলাম, হায়, তিনি যদি প্রশ্নটি না করতেন! তারপর (কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর) রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ তোমরা বলোঃ “আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আ- লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা আ- লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ. . . . ” “হে আল্লাহ! রহমত নাযিল করুন মুহাম্মাদের ওপর ও মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের ওপর যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীমের পরিবারবর্গের ওপর। আর বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদের ওপর ও মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের ওপর যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীমের পরিবার বর্গের ওপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।” আর সালাম ঠিক তেমনিভাবে পাঠাও যেমনটি তোমরা জেনেছো (মুসলিম)
১৪০৮. হযরত আবু হুমাইদ আস সাঈদী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (রা) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কিভাবে আপনার ওপর দরূদ পড়বো? জবাবে তিনি বললেনঃ তোমরা বলোঃ “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আযওয়াজিহী ওয়া যুররিই’য়াতিহী কামা সাল্লাইতা আলা আলি ইবরাহীমা। ওয়া বা-রিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আযওয়াজিহী ওয়া যুররিইয়াতিহী কামা বা- রাকতা আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ -হে আল্লাহ! রহমত বর্ষণ করুন, মুহাম্মাদের ওপর এবং তার স্ত্রীদের ও সন্তানের ওপর যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীমের পরিবারবর্গের ওপর। আর বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদের ওপর এবং তার স্ত্রীদের ও সন্তানদের ওপর যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীমের পরিবারবর্গের ওপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।” (বুখারী ও মুসলিম)