১৬২৩. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট মাক্কাহ ও মাদীনাহ্র মধ্যবর্তী জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলাম। তখন বিলাল [রাদি.] তাহাঁর কাছে ছিলেন। এমন সময়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলিল, আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তা পূরণ করবেন না? তিনি তাঁকে বলিলেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর। সে বলিল, সুসংবাদ গ্রহণ কর কথাটি তো আপনি আমাকে অনেকবারই বলেছেন। তখন তিনি ক্রোধ ভরে আবু মূসা ও বিলাল [রাদি.]-এর দিকে ফিরে বলিলেন, লোকটি সুসংবাদ ফিরিয়ে দিয়েছে। তোমরা দুজন তা গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে বলিলেন, আমরা তা গ্রহণ করলাম। এরপর তিনি এক পাত্র পানি আনতে বলিলেন। তিনি এর মধ্যে নিজের উভয় হাত ও মুখমণ্ডল ধুয়ে কুল্লি করিলেন। তারপর বলিলেন, তোমরা উভয়ে এ থেকে পান করো এবং নিজেদের মুখমণ্ডল ও বুকে ছিটিয়ে দাও। আর সুসংবাদ গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে পাত্রটি তুলে নিয়ে নির্দেশ মত কাজ করিলেন। এমন সময় উম্মু সালামাহ [রাদি.] পর্দার আড়াল থেকে ডেকে বলিলেন, তোমাদের মায়ের জন্যও অতিরিক্ত কিছু রাখ। কাজেই তাঁরা এ থেকে অতিরিক্ত কিছু তাহাঁর {উম্মু সালামাহ [রাদি.]-এর} জন্য রাখলেন।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৫৭ হাদীস নং ৪৩২৮; মুসলিম ৪৪/৩৬ হাঃ ২৪৯৭]
১৬২৪. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইন যুদ্ধ অতিক্রান্ত হওয়ার পর নাবী [সাঃআঃ] আবু আমির [রাদি.]-কে একটি সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠালেন। যুদ্ধে তিনি দুরাইদ ইবনি সিম্মার সঙ্গে মুকাবালা করলে দুরাইদ নিহত হয় এবং আল্লাহ তার সঙ্গীদেরকেও পরাস্ত করেন। আবু মূসা [রাদি.] বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আবু আমির [রাদি.]-এর সঙ্গে আমাকেও পাঠিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে আবু আমির [রাদি.]-এর হাঁটুতে একটি তীর নিক্ষিপ্ত হয়। জুশাম গোত্রের এক লোক তীরটি নিক্ষেপ করে তাহাঁর হাঁটুর মধ্যে বসিয়ে দিয়েছিল। তখন আমি তাহাঁর কাছে গিয়ে বললাম, চাচাজান! কে আপনার উপর তীর ছুঁড়েছে? তখন তিনি আবু মূসা [রাদি.]-কে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে বলিলেন, ঐ যে, ঐ ব্যক্তি আমাকে তীর মেরেছে। আমাকে হত্যা করেছে। আমি লোকটিকে লক্ষ্য করে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম আর সে আমাকে দেখামাত্র ভাগতে শুরু করিল। আমি এ কথা বলিতে বলিতে তার পিছু নিলাম- তোমার লজ্জা করে না, তুমি দাঁড়াও। লোকটি থেমে গেল। এবার আমরা দুজনে তরবারি দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করলাম এবং আমি ওকে হত্যা করে ফেললাম। তারপর আমি আবু আমির [রাদি.]-কে বললাম, আল্লাহ আপনার আঘাতকারীকে হত্যা করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, এখন এ তীরটি বের করে দাও। আমি তীরটি বের করে দিলাম। তখন ক্ষতস্থান থেকে কিছু পানি বের হল। তিনি আমাকে বলিলেন, হে ভাতিজা! তুমি নাবী [সাঃআঃ]-কে আমার সালাম জানাবে এবং আমার মাগফিরাতের জন্য দুআ করিতে বলবে। আবু আমির [রাদি.] তাহাঁর স্থলে আমাকে সেনাদলের অধিনায়ক নিয়োগ করিলেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ বেঁচে ছিলেন, তারপর ইন্তিকাল করিলেন। [যুদ্ধ শেষে] আমি ফিরে এসে নাবী [সাঃআঃ]-এর গৃহে প্রবেশ করলাম। তিনি তখন পাকানো দড়ির তৈরি একটি খাটিয়ায় শায়িত ছিলেন। খাটিয়ার উপর [যৎসামান্য] একটি বিছানা ছিল। কাজেই তাহাঁর পৃষ্ঠে এবং দুইপার্শ্বে পাকানো দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমি তাঁকে আমাদের এবং আবু আমির [রাদি.]-এর সংবাদ জানালাম। তাঁকে এ কথাও বললাম যে, [মৃত্যুর পূর্বে বলে গিয়েছেন] তাঁকে {নাবী [সাঃআঃ]-কে} আমার মাগফিরাতের জন্য দুআ করিতে বলবে। এ কথা শুনে নাবী [সাঃআঃ] পানি আনতে বলিলেন এবং অযু করিলেন। তারপর তাহাঁর দুহাত উপরে তুলে তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দা আবু আমিরকে ক্ষমা করো। [হস্তদ্বয় উত্তোলনের কারণে] আমি তাহাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ দেখিতে পেয়েছি। তারপর তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! ক্বিয়ামাত দিবসে তুমি তাঁকে তোমার অনেক মাখলূকের উপর, অনেক মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান কর। আমি বললামঃ আমার জন্যও [দুআ করুন]। তিনি দুআ করিলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহ! আবদুল্লাহ ইবনি কায়সের গুনাহ ক্ষমা করে দাও এবং ক্বিয়ামাত দিবসে তুমি তাঁকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাও।
বর্ণনাকারী আবু বুরদাহ [রাদি.] বলেন, দুটি দুআর একটি ছিল আবু আমির [রাদি.]-এর জন্য আর অপরটি ছিল আবু মূসা [আশআরী] [রাদি.]-এর জন্য।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৫৬ হাদীস নং ৪৩২৩; মুসলিম ৪৪/৩৮, হাঃ ২৪৯৮