উমার (রা)-এর মর্যাদা।

১৫৪৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার [রাদি.]-এর লাশ খাটের উপর রাখা হল। খাটটি কাঁধে তোলে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত লোকজন তা ঘিরে দুআ পাঠ করছিল। আমিও তাহাদের মধ্যে একজন ছিলাম। হঠাৎ একজন আমার স্কন্ধে হাত রাখায় আমি চমকে উঠলাম। চেয়ে দেখলাম, তিনি আলী। তিনি উমার [রাদি.]-এর জন্য আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতের দুআ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, হে উমার! আমার জন্য আপনার চেয়ে বেশি প্রিয় এমন কোন ব্যক্তি আপনি রেখে যাননি, যাঁর কালের অনুসরণ করে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভ করব। আল্লাহ্‌র কসম। আমার এ বিশ্বাস যে আল্লাহ্ আপনাকে আপনার সঙ্গীদ্বয়ের সঙ্গে রাখবেন। আমার মনে আছে, আমি অনেকবার নাবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি, আবু বকর ও উমার গেলাম। আমি, আবু বকর ও উমার প্রবেশ করলাম এবং আমি, আবু বকর ও উমার বাহির হলাম ইত্যাদি।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৬৮৫; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৮৯]


১৫৪৬. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একবার আমি নিদ্রাবস্থায় [স্বপ্নে] দেখলাম যে, লোকদেরকে আমার সামনে আনা হচ্ছে। আর তাহাদের পরণে রয়েছে জামা। কারো জামা বুক পর্যন্ত আর কারো জামা এর নীচ পর্যন্ত। আর উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-কে আমার সামনে আনা হল এমন অবস্থায় যে, তিনি তাহাঁর জামা [অধিক লম্বা হওয়ায়] টেনে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাহাবীগণ আরয করিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আপনি এর কী তাবীর করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ [এ জামা অর্থ] দীন।

[বোখারী পর্ব ২ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ২৩; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯০]


১৫৪৭. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, একদা আমি নিদ্রাবস্থায় ছিলাম। তখন [স্বপ্নে] আমার নিকট এক পিয়ালা দুধ নিয়ে আসা হল। আমি তা পান করলাম। এমনকি আমার মনে হইতে লাগল যে, সে পরিতৃপ্তি আমার নখ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। অতঃপর অবশিষ্টাংশ আমি উমার ইবনিল-খাত্তাবকে দিলাম। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আপনি এ স্বপ্নের কী ব্যাখ্যা করেন? তিনি জবাবে বললেনঃ তা হল আল-ইল্ম।

[বোখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ৮২; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯১]


১৫৪৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে আমি আমাকে এমন একটি কূপের কিনারায় দেখিতে পেলাম যেখানে বালতিও রয়েছে, আমি কূপ হইতে পানি উঠালাম যে পরিমাণ আল্লাহ্ ইচ্ছে করিলেন। অতঃপর বালতিটি ইবনি আবু কুহাফা নিলেন এবং এক বা দুবালতি পানি উঠালেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্ তার দুর্বলতাকে ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর উমার ইবনি খাত্তাব বালতিটি তার হাতে নিলেন। তার হাতে বালতিটির আয়তন বেড়ে গেল। পানি উঠানোতে আমি উমারের মত শক্তিশালী বাহাদুর ব্যক্তি কাউকে দেখিনি। শেষে মানুষ নিজ নিজ আবাসে অবস্থান নিল।

[বোখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৬৬৪; মুসলিম পর্ব ৪৪/২ হাঃ ২৩৯২]


১৫৪৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেন, আমি স্বপ্নে দেখিতে পেলাম, একটি কুপের পাড়ে বড় বালতি দিয়ে পানি তুলছি। তখন আবু বকর[রাদি.] এসে এক বালতি বা দুবালতি পানি তুললেন। তবে পানি তোলার মধ্যে তাহাঁর দুর্বলতা ছিল, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন। অতঃপর উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] এলেন। বালতিটি তাহাঁর হাতে গিয়ে বড় আকার ধারণ করিল। তাহাঁর মত এমন দৃঢ়ভাবে পানি উঠাতে আমি কোন তাকৎওয়ালাকেও দেখেনি। এমনকি লোকেরা তৃপ্তির সাথে পানি পান করে গৃহে বিশ্রাম নিল।

[বোখারী পর্ব ৫২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৬৮২; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৩]


১৫৫০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি জান্নাতে প্রবেশ করে একটি প্রাসাদ দেখিতে পেলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, এটি কার প্রাসাদ? তাঁরা [ফেরেশতাগণ] বলিলেন, এ প্রাসাদটি উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর। আমি তার মধ্যে প্রবেশ করিতে চাইলাম; কিন্তু {তিনি সেখানে উপস্থিত উমার [রাদি.]-এর উদ্দেশে বলিলেন} তোমার আত্মমর্যাদাবোধ আমাকে সেখানে প্রবেশে বাধা দিল। এ কথা শুনে উমার [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র নাবী [সাঃআঃ]! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনার ক্ষেত্রেও আমি [উমার] আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করব?

[বোখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১০৭ হাদীস নং ৫২২৬; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৪]


১৫৫১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক সময় আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি বলিলেন, আমি নিদ্রিত ছিলাম। দেখলাম আমি জান্নাতে অবস্থিত। হঠাৎ দেখলাম এক নারী একটি দালানের পাশে উযু করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ দালানটি কার? তারা উত্তরে বলিলেন, উমারের। তখন তাহাঁর আত্মমর্যাদার কথা আমার স্মরণ হল। আমি পেছনের দিকে ফিরে চলে আসলাম। একথা শুনে উমার [রাদি.] কেঁদে ফেললেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আপনার সম্মুখে কি আমার কোন মর্যাদাবোধ থাকতে পারে?

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩২৪২; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৫]


১৫৫২. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, একদা উমার[রাদি.] আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তাহাঁর সঙ্গে কয়েকজন কুরায়শ নারী কথাবার্তা বলছিল। তারা খুব উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছিল। অতঃপর যখন উমার[রাদি.] অনুমতি চাইলেন, তারা উঠে শীঘ্র পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। অতঃপর আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাঁকে অনুমতি প্রদান করিলেন। তখন তিনি মুচকি হাসছিলেন। তখন উমার বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আল্লাহ আপনাকে সর্বদা সহাস্য রাখুন। তিনি বলিলেন, আমার নিকট যে সব মহিলা ছিল তাহাদের ব্যাপারে আমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। তারা যখনই তোমার আওয়াজ শুনল তখনই দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেল। উমার [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আপনাকেই তাহাদের বেশি ভয় করা উচিত ছিল। অতঃপর তিনি মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলিলেন, হে আত্মশত্রু মহিলাগণ! তোমরা আমাকে ভয় করছ অথচ আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে ভয় করছ না? তারা জবাব দিল, হ্যাঁ, কারণ তুমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর চেয়ে অধিক কর্কশ ভাষী ও কঠোর হৃদয়ের লোক। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, শপথ ঐ সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তুমি যে পথে চল শয়তান কখনও সে পথে চলে না বরং সে তোমার পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে।

[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৩২৯৪; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৭]


১৫৫৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি উবাই মারা গেল, তখন তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দরবারে আসলেন এবং তার পিতাকে রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জামাটি দিয়ে কাফন দেবার আবেদন করিলেন। রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] জামা প্রদান করিলেন, এরপর তিনি জানাযার সালাত আদায়ের জন্য নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে আবেদন জানালেন। রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] জানাযার সালাত পড়ানোর জন্য [বসা থেকে] উঠে দাঁড়ালেন, ইত্যবসরে উমার [রাদি.] রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাপড় টেনে ধরে আবেদন করিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল [সাঃআঃ]! আপনি কি তার জানাযার সালাত আদায় করিতে যাচ্ছেন? অথচ আপনার রব আপনাকে তার জন্য দুআ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে আমাকে [দুআ] করা বা না করার সুযোগ দিয়েছেন। আর আল্লাহ তো ইরশাদ করিয়াছেন, “তুমি তাহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর; যদি সত্তরবারও তাহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর তবু আমি তাহাদের ক্ষমা করব না”। সুতরাং আমি তার জন্য সত্তরবারের চেয়েও বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করব। উমার [রাদি.] বলিলেন, সে তো মুনাফিক, শেষ পর্যন্ত রাসূলাল্লাহ [সাঃআঃ] তার জানাযার সালাত আদায় করিলেন, এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। “তাহাদের [মুনাফিকদের] কেউ মারা গেলে আপনি কক্ষনো তাহাদের জানাযাহ্‌র সালাত আদায় করবেন না এবং তাহাদের কবরের কাছেও দাঁড়াবেন না। {বোখারী পর্ব ৬৫ সূরা [৯] তাওবাহ

[বারাআহ] অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৪৬৭০; মুসলিম ৪৪/২, হাঃ ২৪০০

Was this article helpful?

Related Articles