প্রতিবেশীর অধিকার এবং তার সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা
মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘তোমরা সবাই আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না; মা-বাবার সাথে সৎ ব্যবহার করো; নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম ও মিসকীনদের প্রতি এবং নিকট প্রতিবেশী আত্নীয়, দূর প্রতিবেশী, পাশাপাশি চলার সঙ্গী ও পথিকদের প্রতি এবং তোমাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদের প্রতি ও দয়া-অনুগ্রহ পোষণ করো। আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে কখনও পছন্দ করেন না, যে নিজ বিবেচনায় দাম্ভিক এবং নিজেকে বড় ভেবে আত্মগৌরবে বিভ্রান্ত।’
৩০৩. হযরত ইবনে উমর ও আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ একদা জিবরাইল এসে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অবিরাম উপদেশ দিতে লাগল। এমনকি আমার মনে হলো, তিনি হয়ত প্রতিবেশীকে (সম্পদের) উত্তরাধিকারী (ওয়ারিশ) বানিয়ে যাবেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৩০৪. হযরত আবু যার (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ হে আবু যার! তুমি যখন তরকারী পাকাও তখন তাতে একটু বেশি পানি দিয়ে ঝোলটা বাড়িয়ে নিও এবং তোমার প্রতিবেশীকে তা পৌঁছে দিও। (মুসলিম)
অপর এক বর্ণনা মতে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি যখন ঝোল পাকাও তখন তাতে একটু বেশি পানি দিও এবং তারপর নিজ প্রতিবেশীদেরকে এই ঝোল ভালোভাবে পরিবেশন করো।
৩০৫. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়; আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়; আল্লাহর কসম! সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলোঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! কে ‘সেই (হতভাগ্য) ব্যক্তি?’ তিনি বলেনঃ ‘যার ক্ষতি (অনিষ্ট) থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।’
মুসলিমের অপর এক বর্ণনা মতে, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
৩০৬. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার অন্য প্রতিবেশিনীকে তুচ্ছ মনে না করে। এমনকি, (একজন অন্যজনকে) ছাগলের পায়ের একটি ক্ষুর উপহার পাঠালেও নয়। (বুখারী ও মুসলিম)
৩০৭. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন প্রতিবেশী যেন তার দেয়ালের সাথে অন্য প্রতিবেশীকে খুঁটি স্থাপন করতে বারণ না করে। এরপর আবু হুরাইরা (রা) বলতেনঃ আমি তোমাদেরকে এ হাদীস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখেছি। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কাছে এ হাদীসটি অবশ্যই বর্ণনা করব। (বুখারী ও মুসলিম)
৩০৮. হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অতিথিদের আদর-যত্ন করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)
৩০৯. হযরত আবু শুরাইহ্ আল-খুযায়ী (রা) বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার অতিথিদের আদর-যত্ন করে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)
৩১০. হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার দুটি প্রতিবেশী রয়েছে। এদের মধ্যে কাকে আমি হাদীয়া (উপঢৌকন) পাঠাবো? তিনি বললেনঃ দুয়ের মধ্যে যার ঘর তোমার বেশি নিকটে, তাকে। (বুখারী)
৩১১. হযরত আবদু্ল্লাহ ইবনে উমর (রা) বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ বন্ধুজনের মধ্যে আল্লাহর কাছে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার সঙ্গীর কল্যাণ কামনা করে। আর প্রতিবেশীর মধ্যে আল্লাহর কাছে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার প্রতিবেশীর কল্যাণ কামনা করে। (তিরমিযী)