মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন, “যে কোন কল্যাণকর কর্মই তোমরা করবে, আল্লাহ্ সে সম্পর্কে অবগত আছে।”
(সূরা বাকারাঃ ২১৫)
তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, “পরিমাপ ও ওজনে যারা কম করে তাদের জন্য ধ্বংস নিধারিত, তারা যখনি লোকদের হতে জেদের প্রাপ্য নেয় তখনন পুরোপুরি নেয় আর যখন মানবদেরকে পরিমাপ বা ওজন করে দেয় তখন কম করে দেয়। তারা কি বিশ্বাস করে না একটি মহা দিবসে তাদেরকে জীবিত করে উঠানো হবে, যেদিন সমগ্র মানবজাতি বিশ্ব জগতের প্রভুর সামনে দাঁড়াবে।
(সূরা মুতাফ্ফীনঃ ১)
১৩৬৮. হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত । এক ব্যক্তি নবী (স)-এর নিকট এসে তার ঋণ আদায়ের জন্য তাগাদা দিচ্ছিল। সে রাসূল্লাহ (স)-এর সাথে কঠোর আচরণ করছিল। সাহাবায়ে কেরাম (রা) তাকে ভয় দেখাতে চাইলেন। এতে রাসূলুল্লাহ (স) বললেন, “তাকে ছেড়ে দাও। কারণ পাওনাদারের বলার অধিকার রয়েছে।” এরপর বললেন, “তাকে উটের বয়সের সমান উট দাও।” সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! তার উটের চাইতে বয়সের বড় ও তার চেয়ে ভালো উট ছাড়া তার উটের মত উট নেই। তিনি উত্তর দিলেন, “তাই দিয়ে দাও। কারণ যে ব্যক্তি ভালো ও উত্তম পদ্ধতিতে ঋণ পরিশোধ করে সে হচ্ছে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। ব্যক্তি।
(বুখারী ও মুসলিম)
১৩৬৯. হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি, “আল্লাহ্ সে ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন যে ব্যক্তি লেন-দেন ও নিজের অধিকার তাগাদা করার সময় নরম নীতি গ্রহণ করে।”
(বুখারী)
১৩৭০. হযরত আব কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বেলন, রাসূলুল্লাহ (স)-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি পছন্দ করে, আল্লাহ্ মহাপ্রলয়ের কাঠিন্য থেকে তাকে হেফাজতে রাখবেন তার অভাবীকে সময় সযোগ দান করা সমীচীন।”
(মুসলিম)
১৩৭১. হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (স)ইরশাদ করেছেন, “এক ব্যক্তি লোকদের সাথে লেনদেন করতো। সে তার লোকদের বলে রেখেছিল যখন তোমরা কোন অভাবীর নিকট থেকে ঋণ আদায় করতে যাবে, তাকে মাফ করে দিয়ে যাবে, তাকে মাফ করে দিয়ে যাবে, হয়তো আল্লাহ্ (মহাপ্রলয়ের দিন) আমাদের মাফ করে দিবেন। কাজেই মৃত্যুর পর যখন সে আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করলো, আল্লাহ্ তার সব পাপ করে দিলেন।
(বুখারী ও মুসলিম)
১৩৭২. হযরত আবু মাসউদ আল-বাদানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী ব্যক্তিদের একজনের (মৃত্যুর পর তার) হিসাব নিকাশ নেয়া হল। তাঁর কোন পুণ্য পাওয়া গেলো না। কেবল এতটুকু পাওয়া গেলো যে, সে লোকদের সাথে ব্যবসায়িক মেলামেশা রাখতো এবং তার দাসদেরকে হুকুম দিয়ে রেখেছিল, অভাবী ঋণগ্রহীতাদের দেখা পেলে তাদেরকে মাফ করে দেবে। (কাজেই) মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বললেন, আমরা এ ব্যক্তির সাথে এ ধরনের আচরণ করার অধিক হক্দার।(তাই তিনি ফেরেশতাকে হুকুম দিলেন,) এ ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দাও।
(মুসলিম)
১৩৭৩. হযরত হুযায়ফা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্র এক বান্দা যাকে তিনি (দুনয়ায়) সম্পদ দান করেছিলেন মহান আল্লাহ্র সামনে উপস্থিত করা হলো। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি পৃথিবীতে কি আমল করেছো? হুযায়ফা (রা) বলেন, আর যেহেতু দাস আল্লাহ্র কাছ থেকে কোন কথা লুকিয়ে রাখতে পারে না তাই সে বললো, হে আমার প্রভু! তুমি নিজের নিকট থেকে আমাকে যে সম্পদ দিয়েছিলে আমি লোকদের সাথে তা লেনদের করতাম আর লোকদের মাফ করে দেয়া আমর অভ্যাস ছিল। ধনবানের সাথে আমি নরম আচরণ করতাম আর অভাবীকে মাফ করে দিতাম। মহান আল্লাহ্ বললেন, আমি তোমার সাথে এ ধরনের আচরণ করার বেশি হক্দার । (ফেরেশতাদেরকে হুকুম করলেন) আমার এ দাসকে ক্ষমা করে দাও? (এ হাদীসটি শুনে) ওক্বা ইব্নে আমের ও আবু মাসউদ আনসারী (রা) বলেন, আমরাও রাসূলুল্লাহ (স)-এর মুখ থেকে এরূপই শুনেছি।
(মুসলিম)
১৩৭৪ হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স)ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি অভাবীকে সময়-অবকাশ দিয়েছে অথবা তার জন্য কিছু কম করে দিয়েছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ্ তায়ালা তাকে নিজের আরশের নিচে ছায়া দান করবেন, যেদিন তাঁর ছায়া বৈ আর কোন ছায়া থাকবে না।
(তিরমিযী)
১৩৭৫. হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (স) তাঁর নিকট হতে একটি উট কিনেছিলেন এবং ওজন করে তার মূল্য দিয়েছিলেন, কাজেই মূল্য দিয়েছিলেন, কাজেই মূল্য অধিকই দিয়েছিলেন।
(বুখারী ও মুসলিম)
১৩৭৬. হযরত আবু সাফওয়ান সুওয়ান সুওয়াইদ ইব্নে কায়েস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও মাখরামা (রা) আরবী হাজার নামক স্থান হতে বস্ত্র বিক্রি করার জন্য কিনে নিয়ে এলাম। (এ খবর শুনে) নবী করীম (স) আমাদের নিকটে এলেন। তিনি আমাদের সাথে একটি পায়জামা ক্রয় করলেন। আমাদের নিকটে ছিল একজন ওজনদানকারী, সে (সোনা রুপা) ওজন করত। নবী করীম (স) ওজনদানকারীকে বললেন, “নাও, ওজন কর এবং (মূল্য) না হয় একটু অধিকই ধর।”
(আবু দাউদ ও তিরমিযী)