নিদ্রা যাবার সময় যে দোয়া পাঠ করতে হবে

ঘুমের সময় যে দু’আ পড়তে হয়

আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ

“নিঃসন্দেহে চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং  রাত ও দিনের আবর্তনের মধ্যে নিদর্শনসমূহ রয়েছে যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে, শায়িত অবস্থায় এবং আকাশ ও পৃথিবীর ব্যাপারে চিন্তা করে, তারা বলে, হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি কর নি।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৯০-১৯১)

 

১৪৫৯. হযরত হুযাইফা ও আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) যখন বিছানায় শয়ন করতেন তখন বলতেনঃ “বিসমিকাল্লাহুম্মা আহইয়া ওয়া আমুতু- হে আল্লাহ! আপনারই নামের সাথে আমি বাঁচি ও মৃত্যুবরণ করি।” (বুখারী)


১৪৬০. হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে ও ফাতিমাকে বলেনঃ যখন তোমরা তোমাদের বিছানার দিকে যাও বা তোমরা দু’জন তোমাদের বিছানায় শুয়ে পড় তখন ৩৩ বার “আল্লাহু আকবার’’, ৩৩ বার “সুবহানাল্লাহ’’, ও ৩৩ বার “আল হামদুলিল্লাহ” পাঠ কর। অন্য এক বর্ণনায় আছেঃ ‘তাসবীহ’ অর্থাৎ “সুবহানাল্লাহ” ৩৪ বার। অন্য বর্ণনায় আছেঃ “তাকবীর” অর্থাৎ “আল্লাহু আকবার” ৩৪ বার পাঠ কর। (বুখারী)


১৪৬১. আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ যখন নিজের বিছানায় আসে, তাকে নিজের ইযারের ভিতরের অংশ দিয়ে বিছানাটি ঝেড়ে নেয়া উচিত। কারণ সে জানে না তার পরে তার বিছানার ওপর কি এসে পড়েছে।” তারপর (শুয়ে পড়ার সময়) বলবেঃ “বিসমিকা রাব্বী ওয়াদ্বা’তু জাম্বী ওয়া বিকা আরফাউহু ইন দাকাস সা-লিহীন- অর্থঃ হে আমার রব! আপনার নামে পার্শ্বদেশ স্থাপন করলাম এবং আপনার সাহায্যে তাকে উঠাবো। যদি আপনি আমার প্রাণ নিয়ে নেন তাহলে তার ওপর রহম করুন আর যদি ছেড়ে দেন তাহলে তাকে সংরক্ষণ করুন, সে বস্তু থেকে যা থেকে আপনি আপনার নেক বান্দাদেরকে হিফাযত করে থাকেন।” (বুখারী ও মুসলিম)


১৪৬২. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) যখন নিজের বিছানায় যেতেন (শয়ন করার উদ্দেশ্যে যেতেন), দু’হাত একত্রিত করে তাতে ফুঁ দিতেন এবং মুআওয়িযাত। অর্থাৎ আউযু বিল্লাহ, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক, ও কুল আউযু বিরাব্বিন নাস পাঠ করতেন ও হাত দু’টি নিজের শরীর মুবারকে মুছতেন। (বুখারী ও মুসলিম)


বুখারী ও মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছেঃ নবী করীম (সা) যখন প্রত্যেক রাতে নিজের বিছানার দিকে যেতেন তখন নিজের হাতের তালু দু’টো একত্রিত করে তাতে ফুঁক দিতেন, তারপর তার ওপর পড়তেনঃ “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” “কুল আউযূ বিরাব্বিল ফালাক” ও কুল আউযূ বিরাব্বিনাস নাস” তারপর দু’হাতের তালু দিয়ে শরীর মুবারকের যতটুকু অংশ পারতেন মুছতেন। এ দু’হাত প্রথমে নিজের মাথায় ও মুখমণ্ডলে মুছতেন তারপর শরীরের সামনের অংশে মুছতেন। এভাবে তিনবার করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)


১৪৬৩. হযরত বারা’আ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বলেছেনঃ যখন তুমি নিজের বিছানায় শয়ন করার ইচ্ছা কর, তখন ওযূ কর ঠিক যেন নামাযের ওযূ কর। তারপর ডান পাশে শুয়ে পড় এবং বলঃ “আল্লাহুম্মা আসলামতু নাফসী ইলাইকা, ওয়া ফাওওয়াদ্বতু আমরী ইলাইকা, ওয়া আলজাতু যাহরী, ইলাইকা, রাগবাতান ওয়া রাহবাতান ইলাইকা, লা- মালজাআ ওয়ালা- মানজাআ মিনকা ইল্লা ইলাইকা, আমানতু বিকিতা- বিকাল্লাযী আনযালতা, ওয়া নাবীয়্যী কাল্লাযী আরসালতা- (হে আল্লাহ! আমার প্রাণ আপনার হাতে সঁপে দিলাম, আমার কাজ আপনার ওপর সোপর্দ করলাম এবং আমার পিঠ আপনার দিকে লাগালাম। এসব কাজই আপনার সাওয়াবের আগ্রহে ও আযাবের ভয়ে করেছি। আপনার নিকট ব্যতীত আর কোন পালাবার ও বাঁচার জায়গা নেই। আমি ঈমান এনেছি আপনি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার ওপর এবং যে নবী প্রেরণ করেছেন তাঁর ওপর। এ বাক্যগুলো বলার পর তোমার যদি মৃত্যু হয় তবে তুমি স্বভাব ধর্ম ইসলামের ওপর মৃত্যুবরণ করবে। এ বাক্যগুলোকে তোমার শেষ বাক্যে পরিণত কর। (বুখারী ও মুসলিম)


১৪৬৪. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (সা) যখন বিছানায় যেতেন তখন বলতেনঃ “আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আতআমানা ওয়া সাকা-না ওয়া কাফা-না ওয়া আ-ওয়া-না ফাকাম্মিম্মান লা কা-ফিয়া লাহু ওয়া লা মূওবিয়া। অর্থ সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর যিনি আমাদের আহার করিয়েছেন, আমাদের পান করিয়েছেন, আমাদের জন্য যথেষ্ঠ করেছেন এবং আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। অতঃপর তাদের এমন অনেকে আছে যাদের জন্য যথেষ্ঠ করা হয়নি এবং তাদেরকে আশ্রয় স্থলও দেয়া হয়নি।” (মুসলিম)


১৪৬৫. হযরত হুযাইফা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) যখন ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন নিজের ডান হাতটা গালের নিচে রাখতেন এবং বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা কিনী আযাবাকা ইয়াওমা তাবআসু ইবা- দাকা।” -(হে আল্লাহ! আমাকে আপনার আযাব থেকে রক্ষা করুন, যেদিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে পুনর্জ্জীবিত করবেন।) (তিরমিযী)


 

Was this article helpful?

Related Articles